কর্মদক্ষতা ও সুযোগ বৃদ্ধিই অপরিহার্য সংস্কার
Published: 10th, July 2025 GMT
বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে জনসংখ্যা দিবস। ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে জনসংখ্যার বিভিন্ন বিষয়কে প্রতিপাদ্য করে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। উদ্দেশ্য, পরিবার পরিকল্পনার সুবিধা, লিঙ্গ সমতা, দারিদ্র্য, মাতৃস্বাস্থ্য, মানবাধিকার ইত্যাদি জনসংখ্যা ও জনস্বার্থমূলক বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি।
জনসংখ্যা দিবসের বিগত প্রতিপাদ্যগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, জনগণের ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার, প্রজনন-স্বাস্থ্য, নারী ও শিশুর সুরক্ষা, অধিকার ও পছন্দ নিশ্চিতকরণ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘ন্যায্য ও আশাবাদী পৃথিবীতে কাঙ্ক্ষিত পরিবার তৈরিতে তরুণদের ক্ষমতায়ন’। অর্থাৎ সুন্দর আগামীর জন্য যুবসমাজের অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা।
আমরা জানি, বর্তমান বিশ্বে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১.
পরিকল্পিত বা প্রত্যাশিত পরিবার হলো যেখানে সুস্থ-সুন্দর সন্তান-সন্ততি, জীবন উপযোগী শিক্ষা, চিকিৎসা সুবিধা, বাসস্থান, সর্বোপরি টেকসই পরিবেশ থাকবে। এমন পরিবারই আগামী প্রজন্মের প্রত্যাশা; ন্যায্য ও আশাবাদী বিশ্বে সবার চাওয়া। কোনো পরিবারের সন্তান যেন বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, অধিকার, উন্নয়নের অংশ থেকে বঞ্চিত না হয়। যুবসমাজের এমন প্রাতিষ্ঠানিক ও নৈতিক শিক্ষা দরকার যেন তাদের গঠিত সমাজে মায়া, পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রতি ভালোবাসা, ন্যায্যতা, সংবেদনশীলতা থাকে; আইনের প্রয়োগ ও অধিকার বাস্তবায়নে সবল-দুর্বল, ধনী-দরিদ্র সবাই সমান হয়। প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু প্রতিহিংসা থাকবে না।
আগের যে কোনো দশকের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে বর্তমান যুবসমাজ বা কিশোর-কিশোরী আছে সুবিধাজনক অবস্থায়। যেমন এ প্রজন্মের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও সামাজিক মাধ্যম আছে। তারা ২৫-৩০ বছর বয়স পর্যন্ত পরিবার থেকে আর্থিক সহায়তা নিতে পারছে। শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে তারা ইতোমধ্যে যথেষ্ট ক্ষমতায়িত।
বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সুযোগ নিয়ে তরুণদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে; নতুন নতুন কৌশল শিখতে হবে; প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সমাজে, দেশ ও বিশ্ব পরিমণ্ডলে ন্যায্যতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হতে হবে।
বর্তমান প্রজন্মের পারিবারিক পরিসর দুটি– যে বাড়িতে বাস করে এবং যে বিশ্বে বাস করে। কারণ সামাজিক মাধ্যম, ইন্টারনেট, প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ব্যবহারে দক্ষতার ফলে পুরো বিশ্বই নতুন প্রজন্মের কাছে একটি পরিবার। এ দুই পরিসরের পরিবারেই তাকে ন্যায্যতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, কাম্য পরিবেশ তৈরি, বঞ্চনা ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠন, টেকসই পরিবেশের জন্য কাজ করতে হবে। সেখানে সবাই কাঙ্ক্ষিত পরিবার, কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ ও কাঙ্ক্ষিত জীবন উপভোগ করবে।
আমাদের দেশের জন্য বাড়তি সুবিধা হলো, কর্মক্ষম (১৫-৬৪ বছর) জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অর্ধেকের বেশি; প্রায় ১১ কোটি। সমস্যা হলো, এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সময়োপযোগী দক্ষতা দিয়ে যুগোপযোগী মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। এই দক্ষতা অনুযায়ী কর্মে নিয়োজিত করার চ্যালেঞ্জ অনেক।
চারটি উপায়ে দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো যায়– সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, উদ্যোক্তা তৈরি, জনশক্তি রপ্তানি। দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যুক্ত হয়। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৫ লাখের দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থান সম্ভব হচ্ছে। বাকি ৫ থেকে ৮ লাখ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করা জরুরি। আরও সমস্যা হলো, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি এখনও সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০-৬০ হাজার দক্ষ ডাক্তার, নার্স, প্রযুক্তিবিদসহ দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বিদেশে রয়েছে। তা বাছাই ও রপ্তানি করতে উদ্যোগ জরুরি। উদ্বৃত্ত কর্মক্ষম জনশক্তি রপ্তানি হতে পারে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
আমরা দেখছি, শিক্ষামুখী হতে গিয়ে যুবসমাজ বাজারমুখী ও ভোগমুখী হয়েছে। দক্ষতা অর্জন না করেই তারা সার্টিফিকেট গ্রহণে তৎপর। অথচ তরুণদের– কী পাস করেছে, জিজ্ঞেস না করে জিজ্ঞেস করতে হবে, সেবা প্রদানের উপযোগী কী কী দক্ষতা অর্জন করেছে। কতটা কর্মমুখী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। দেশের ১১ কোটি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে ৫০০ টাকা উপার্জন করলেও প্রতিদিন ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার জিডিপি অর্জন করার কথা। পক্ষান্তরে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ যদি কর্মহীন থাকে বা ৫০০ টাকা আয় না করে এবং গড়ে ৩০০ টাকা ভোগ করে, তাহলে প্রতিদিন মাথাপিছু ৮০০ টাকা বা মোট ৩৫ হাজার ২০ কোটি টাকা অপচয় হবে। সুতরাং, কর্মক্ষম মানুষ প্রতিদিন পরিবার বা সমাজের জন্য কত টাকার উপযোগ বা সেবা তৈরি করতে পারছে, তা বিবেচনা করতে হবে। অবশ্য কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে পছন্দ অনুযায়ী কর্মের উপায় ও সুযোগ করে দিতে হবে। সমাজের মূল্যবোধ পরিবর্তনের মাধ্যমে ভোগমুখী যুবসমাজকে দক্ষতা, কর্ম ও উপার্জনমুখী করতেই হবে। কর্মক্ষম ব্যক্তি প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে কিনা এবং সেই দক্ষতা অনুযায়ী সমাজে সেবা দিতে পারছে কিনা, নিশ্চিত করতেই হবে।
ড. মো. আমিনুল হক: অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
aminul.haque@du.ac.bd
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনস খ য ক ঙ ক ষ ত পর ব জনস খ য র জনগ ষ ঠ র প রজন ম র ত পর ব র য বসম জ জনশক ত র জন য পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের দুর্যোগ অভিজ্ঞতা টেক্সাসে রপ্তানি করতে পারি?
এই মাসের শুরুতে টেক্সাসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যা গোটা আমেরিকাকে নাড়া দিয়ে গেছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে গুয়াদালুপ নদীর পানি হঠাৎ অনেক বেড়ে গিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, গাড়ি, সেই সঙ্গে নদীতীরে শিক্ষা ও অবসরে আসা ক্যাম্পগুলো। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে শতাধিক, যার মধ্যে ২৮ জন শিশু। এখনও অনেকে নিখোঁজ।
এই শোকাবহ ঘটনার পেছনে শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়; অঞ্চলটির প্রতি দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বিনিয়োগের অভাবও সমান দায়ী। ২০১৫ সালে পাশের উইম্বারলি শহরে প্রাণঘাতী বন্যার পর কার কাউন্টির কর্মকর্তারা আধুনিক বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে মাত্র ১০ লাখ ডলারের প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এমনকি ৫০ হাজার ডলারের সমীক্ষাও হয়নি ‘অতিরিক্ত ব্যয়বহুল’ বলে।
ফলে জুলাই মাসের এই ভয়াবহ বন্যার সময় সাইরেন বাজেনি। অনেকের কাছে সময়মতো বার্তা পৌঁছায়নি। আবার কেউ কেউ বার্তাগুলো গুরুত্বই দেননি। মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল ছিল; বিদ্যুৎ ছিল না; অনেকে ঘুমাচ্ছিলেন। কেউ জেগেছেন ফেসবুকে অন্যদের স্ট্যাটাস দেখে; কেউ ঘুম থেকে উঠেছেন পানির শব্দে। এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশে মৃত্যুর মিছিল দেখা গেছে।
প্রশ্ন হলো, যেখানে প্রযুক্তি, বাজেট ও অবকাঠামো আছে, সেখানেও যখন এমন বিপর্যয় ঘটে, তখন কি কেবল উন্নয়নই সব কিছু? আমরা ভুলে যাচ্ছি মানুষের অভিজ্ঞতা, অভিযোজন ক্ষমতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিক্রিয়ায় লোকজ জ্ঞানের কথা। উন্নত প্রযুক্তি, বাজেট ও অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এ বিপর্যয় প্রমাণ করে– দুর্যোগ মোকাবিলায় শুধু যন্ত্র নয়; দরকার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা।
প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সত্ত্বেও আমেরিকার টেক্সাস বন্যায় বিপর্যস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের দুর্যোগ-অভিজ্ঞ জনশক্তির প্রাসঙ্গিকতা। এখানেই বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক পরিসরে মূল্যায়নের দাবি রাখে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন কিংবা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ কেবল দুর্যোগে টিকে থাকার কৌশলই জানে না; দ্রুত সাড়াও দিতে পারে। আশ্রয় তৈরি, উদ্ধারকাজ, খাবার সরবরাহ বা সতর্কবার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এখন এক অনন্য ‘মানবিক প্রতিরোধ’ কাঠামো, যা বহু উন্নত দেশে অনুপস্থিত।
এ বাস্তবতা আমাদের সামনে একটি নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলের মতো দুর্যোগ বাড়ছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা– সবাই আজ বিপর্যয়ের মুখে। সবখানেই কমিউনিটিভিত্তিক প্রস্তুতির অভাব প্রকট। অথচ বাংলাদেশের মানুষ বহুদিন ধরে সীমিত সম্পদে সেই প্রস্তুতির কাজটি করে আসছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই অভিজ্ঞতা কি আমরা শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব, নাকি একে ‘বৈশ্বিক দরজা’ হিসেবে প্রস্তুত করব?
আমাদের কর্মক্ষম তরুণ অনেকেই উপযুক্ত কর্মসংস্থান পাচ্ছেন না। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন বন্যাপ্রবণ অঞ্চল থেকে যে বাস্তব অভিজ্ঞতা তারা অর্জন করেন, তা আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যবান সম্পদে পরিণত হতে পারে। রাষ্ট্র, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি ‘দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা ইউনিট’ গড়ে তোলা যায়, তাহলে বিশ্ববাজারে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। আমরা ফি বছর বন্যায় আক্রান্ত এলাকা থেকে তরুণদের বাছাই করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ‘সেরা সৈনিক’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নে কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রথমত, জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা ইউনিটের অধীনে মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন ও দুর্যোগ অভিজ্ঞ জনগণকে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দুর্যোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে কর্মীরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারেন। চতুর্থত, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ অভিজ্ঞ জনশক্তি রপ্তানির জন্য আলাদা পাসপোর্ট, নিয়োগে সহায়তা, ভিসা সংগ্রহ ও সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করতে হবে। পঞ্চমত, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা’ নিয়ে গবেষণা, ফেলোশিপ ও কোর্স চালু করতে হবে। ষষ্ঠত, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে জ্ঞান স্থানান্তরে কূটনৈতিক ও উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যা বাংলাদেশের কমিউনিটি মডেলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশিক্ষণ উপাদান হিসেবে ব্যবহারে সহায়ক হবে।
এ ধরনের কর্মসূচি থেকে তিনটি লাভ হবে– ১. দেশের যুবশক্তির জন্য নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার খুলবে। ২. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি টেকসই খাত গড়ে উঠবে। ৩. দক্ষিণের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা ও ভূমিকা বৈশ্বিকভাবে বাড়বে।
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শুধু জাতীয় বিষয় নয়; আন্তঃরাষ্ট্রীয়, আন্তঃসামাজিক ও আন্তঃঅভিজ্ঞতার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বন্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়– প্রযুক্তি সক্ষমতা ও দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা এক নয়। এ প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিন ধরে ও বংশপরম্পরায় অর্জিত অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেতে পারে। এটাই হতে পারে নতুন কূটনীতি, নতুন অর্থনীতি এবং মানবিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন শুধু শ্রম রপ্তানিকারক নয়; হতে পারে জ্ঞান ও মানবিক অভিজ্ঞতা রপ্তানির বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত উৎস। এ লক্ষ্যে বিষয়টিকে রাজনীতি বা প্রকল্পের সীমায় আটকে না রেখে ‘জাতীয় কৌশল’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের সংকট-সহনশীলতা, কমিউনিটি সক্ষমতা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সাড়া দেওয়ার অভিজ্ঞতাকে ‘রপ্তানিযোগ্য সক্ষমতা’ হিসেবে রূপান্তর অবশ্যই সম্ভব।
মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক; প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন