একটি দল ভাবছে, চাঁদাবাজির স্বাধীনতা পেয়েছে তারা
Published: 12th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা জনগণের স্বাধীনতা চেয়েছি; কিন্তু একটি দল মনে করছে তারা লুটপাট, দখলদারিত্ব আর চাঁদাবাজির স্বাধীনতা পেয়েছে। এক সময় ব্যবসায়ীরা রাজনীতির ছত্রছায়ায় মাফিয়ায় পরিণত হয়েছিল। এখন সেই মাফিয়া চক্রকেই আবার সামনে আনা হচ্ছে। আমরা এই দখলদার ও দুর্নীতিবাজ রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র ১১তম দিনে গতকাল শুক্রবার রাতে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। সুন্দরবনের গুরুত্ব তুলে ধরে নাহিদ বলেন, সুন্দরবন আমাদের প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে সব সময় রক্ষা করছে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। সুন্দরবনকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।
ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যায় ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পরও জাতীয় নাগরিক পার্টি মাঠে রয়েছে, আগামীতেও থাকবে। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে এক সময় যেমনি রাজপথে নেমেছিল জনগণ, তেমনি এখনও প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রয়োজনে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও রাজপথে নামব।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, এখনও প্রকাশ্যে মানুষ খুন হচ্ছে। এই কি সেই জুলাই, যার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম?
দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ব্যবসায়ীরা আগে শেখ হাসিনার সিরিয়াল ধরত, এখন ধরছে লন্ডনের সিরিয়াল। বিএনপি সেই ব্যবসায়ীদের থেঁতলে দিয়েছে। মানুষ আর এই ধোঁকাবাজি মানবে না।
এর আগে বিকেলে যশোর ঈদগাহ মোড়ে পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি রাজনৈতিক দল দাবি করে, তাদের নাকি কোটি কোটি মানুষের দল। এই কোটি কোটি মানুষ আমাদের দেখাবেন না। আমরা ফ্যাসিবাদের আমলে দেখেছি কত মানুষ ছিল আপনাদের। সেই মানুষেরা কত আন্দোলন গড়ে তুলেছিল! আমাদের ডাকে আবাবিল পাখির মতো সব মানুষ রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের কোটি মানুষ দেখাবেন না, ওসব আমরা দেখেছি। ইনসাফ, ন্যায় থাকলে একজন মানুষও লাখো মানুষের সমান হয়ে উঠতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন একসঙ্গে চাই। বিচার আর সংস্কার ছাড়া বাংলার জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না। যারা বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায়, তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ।
আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকবার আন্দোলন হয়, জীবন দেয় ছাত্ররা, রক্ত দেয় ছাত্ররা আর কিছু রাজনৈতিক দল ফায়দা লোটে। এসব রাজনৈতিক দল ভেবেছিল, আন্দোলনের পর আমরা ঘরে ফিরে যাব। কিন্তু বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, বাংলাদেশকে যে সংস্কার করার স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটা না করে আমরা ঘরে ফিরব না।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলি, আর মন খারাপ করে একটি দল। আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্বিচারিতার কথা বলি; কিন্তু মন খারাপ করে একটি দল। আমরা
সংস্কারের পক্ষে কথা বললে গোস্সা করে একটি দল। যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী দলে আছেন তারা গোস্সা হবেন না।
এর আগে দুপুরে যশোর শহরের একটি হোটেলে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এনসিপি যশোর জেলা শাখা। সভায় বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ। সভায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ চার পরিবারের সদস্য ও আহত ১৫ জন অংশ নেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ন হ দ ইসল ম যশ র এনস প র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সব হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ফেডারেশনের মশালমিছিল
পুরান ঢাকায় ভাঙারি পণ্য ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং খুলনায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মাহবুব রহমান হত্যাসহ সাম্প্রতিক সব হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশালমিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ। সঞ্চালনায় ছিলেন সহসাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস জামান।
সভাপতির বক্তব্যে সৈকত আরিফ বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল একটি গণতান্ত্রিক, নিরাপদ রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সরকার যদি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে জনগণ নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
বিএনপির সমালোচনা করে সৈকত আরিফ বলেন, ‘সরকার পতনের পর থেকেই হাটবাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এসব সংঘর্ষ খুন-হত্যায় রূপ নিচ্ছে। দলটি শুধু বহিষ্কার করেই দায় এড়াতে চাচ্ছে। বিএনপিকে বলছি, কেবল বহিষ্কার নয়, বিচার নিশ্চিত করতেও আপনাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’
ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, আজকের অরাজকতার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাষ্ট্রীয় বিচারহীনতার। গণ-অভ্যুত্থানের পর শত শত মাজার ও মন্দির ভাঙা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার কোনো বিচার হয়নি। তাই আজ মিটফোর্ডের মতো এলাকায় প্রকাশ্যে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে সাম্প্রতিক সব হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধে রাষ্ট্রকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জিন্নাত আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ঢাকা নগর শাখার সভাপতি আল-আমিন রহমান, ছাত্র ফেডারেশনের শাখার সংগঠক সীমা আক্তার, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হাসান আল মেহেদী, দপ্তর সম্পাদক অনুপম রায় রূপকসহ সংগঠনের অন্য নেতারা।