চাঁদপুর শহরের প্রফেসরপাড়া মোল্লা বাড়ি মসজিদের খতিব আ ন ম নূর রহমান মাদানি (৬০) এখন কিছুটা সুস্থ। ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে নূর রহমানের ছেলে আফনান তকি এসব তথ্য জানান। চিকিৎসকের বরাতে তিনি নিশ্চিত করেছেন, তার বাবা এখন আশঙ্কামুক্ত।
আফনান তকি বলেন, ‘‘সকলের দোয়ায় আব্বা এখন ভালো আছেন। আমরা এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। কিন্তু, আব্বাকে কোন হাসপাতালে রেখেছি; নিরাপত্তার স্বার্থে নামটি বলতে চাচ্ছি না।’’
আরো পড়ুন:
ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ
সোহাগকে হত্যার নেপথ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব: পুলিশ
চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাহার মিয়া বলেন, ‘‘আহত খতিব নূর রহমান মাদানি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ও মামলার বাদী আফনান। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
এদিকে খতিবের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিল্লাল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি বাহার মিয়া।
বিল্লাল পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, ‘‘গত রমজানের আগের দিন ওই খতিব সাহেব বলেছিলেন, কোরআন শরীফে মিলাদ নেই। পরে আমি কোরআন শরীফ পড়তে গিয়ে মিলাদ পাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমাম আমাকে বলেন, অফিসারের কাছে দরখাস্ত না করে পিওনের কাছে দরখাস্ত করলে কি দরখাস্ত মঞ্জুর হবে? অফিসার হচ্ছেন আল্লাহ, আর পিওন হচ্ছেন নবী। আমার নবীজীকে পিওন বলছে- এটা আমি মানতে পারিনি। পরে তাকে ছুরিকাঘাত করি। যদিও কাজটি ভুল করেছি।’’
তবে, পুলিশের কাছে বিল্লালের করা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির লোকজন। তারা দাবি করেছেন, বিল্লাল পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শুক্রবার মসজিদে অবস্থান নেন। এ সময় তার কাছে একটি নোট ছিল। যাতে লেখা ছিল, আমার নবীজিকে অপমান করার কারণে তাকে হত্যা করা হলো। সে জায়নামাজে চাপাতি পেঁচিয়ে মসজিদের ভেতরে ঢুকে খতিবকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কুপিয়ে জখম করেন।
প্রফেসরপাড়া মোল্লা বাড়ি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো.
আরো পড়ুন: চাঁদপুরে মসজিদের ভেতরেই খতিবকে কুপিয়ে জখম
ঢাকা/অমরেশ/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য আহত ন র রহম ন কর ছ ন মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
‘বাবা বলে গেছেন, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন’
‘বাবা হাসি মুখে বলে গেছেন, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু আর জীবিত ফিরে আসেননি।’ শনিবার সকালে বরগুনা সদর উপজেলার বান্দরগাছিয়া গ্রামে গেলে এ সব কথা বলে সোহান (১০)। সে ঢাকার মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যার শিকার লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের ছেলে।
বাবার কবরের পাশে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহান আরও বলে, ‘পাথর দিয়ে বাবাকে যেভাবে মারা হয়েছে, আমরা তো সেভাবে মারতে পারব না। আইন হাতে নেওয়া যায় না। অনুরোধ, বাবা হত্যার বিচার যেন ঠিকভাবে হয়।’
নিহত সোহাগের মেয়ে সোহানা (১৪) বলে, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে ৫ থেকে ৬ বছর আগে আমাদের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় হুমকি দিয়েছে। গোডাউনে তালা দিয়েছে। ওই তালা খুলতে গিয়ে বাবা নৃশংসভাবে খুন হন।’
সোহাগের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ‘স্বামীর ঘর-বাড়ি, ব্যাংক ব্যাল্যান্স কিছুই নাই। ভাড়া বাসায় থেকে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি। আমি গৃহিণী, কোনো আয় রোজগার নাই। কোথায় থাকব, কি করব, কিছুই জানি না। সন্তানদের ভবিষ্যৎ বলতে আর কিছু নাই।’
এর আগে শুক্রবার সকালে জানাজা শেষে সোহাগের নানা বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বান্দরগাছিয়া গ্রামে মায়ের পাশে দাফন করা হয়েছে। শনিবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নারী-পুরুষ বাড়িত আসছেন, সোহাগের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ বোনদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
এদিকে বিকেল সোয়া ৫টায় সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ। বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে যৌথ সমাবেশ করে সংগঠনগুলো।
এ সময় বক্তারা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তারা মনে করেছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছে। অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য শুরু করেছে। এসব বন্ধ না করলে জনগণ আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও প্রত্যাখ্যান করবে। এসব নির্মমতা দেখতে আমরা জুলাই আন্দোলন করিনি, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়নি। এক বছরের ব্যবধানে একই পরিস্থিতি দেখছি। বিএনপির সাহস থাকলে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতো।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. মহিবুল্লাহ্ হারুন, ইসলামী আন্দোলন বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মিজানুর রহমান কাশেমী, সাবেক সভাপতি ও কেওড়াবুনিয়া পীর মাওলানা মো. অলিউল্লাহ্, ইসলামী আন্দোলনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আসাদুজ্জামান মামুন, গণঅধিকার পরিষদের মো. মাইনুল ইসলাম প্রমুখ।