‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’
Published: 5th, August 2025 GMT
‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ অপারেশন টেবিলে শুয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক চিকিৎসকের মুখে তারেক শাহরিয়ার তন্ময়কে শুনতে হয়েছিল এমন কটূক্তি।  
তন্ময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থী। তার কাছে হাসপাতালের সেই অপমান আজো দগদগে ক্ষত।
গত বছর ১৬ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তন্ময়ও অংশ নেন। রাজধানীর ভাটারা থানা ও নতুন বাজারের রাস্তায় দিনভর চলতে থাকে স্লোগান ও মিছিল। ১৭ জুলাই আন্দোলনে সাময়িক বিরতি এলেও পরদিন সকালেই ফের রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজন
বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি
তন্ময় বলেন, “বন্ধুর ফোনে খবর পেয়ে বের হওয়ার আগে বেলকনি থেকে দেখি আওয়ামী লীগের কিছু লোক বস্তা থেকে অস্ত্র-ছুরি বের করছে। তখনই ভয় পেয়ে আইডি কার্ড গলায় ঝুলাইনি।”
তিনি বলেন, “সেদিন নতুন বাজার থেকে শুরু হওয়া মিছিল বাঁশতলা পেরিয়ে উত্তর বাড্ডার দিকে এগোতে থাকলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুলিশও টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ঠিক তখনই পুলিশের শর্টগানের গুলি এসে লাগে আমার বাম চোখে।”
রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে এএমজেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকরা জানান, চোখ ফেরানো সম্ভব নয়।
তন্ময় বলেন, “অপারেশনের আগে এক চিকিৎসক এসে বলেছিলেন, ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ তখন আমি দুর্বল অবস্থায় অপারেশন টেবিলে শুয়ে কিছু বলতে পারিনি।”
অপারেশনের পরও তাকে অন্য রোগীর সঙ্গে একই বেডে রাখা হয়। বাইরে ছাত্রলীগের হামলার চেষ্টা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে পাশে দাঁড়ান ও খরচ বহন করেন। খবর পেয়ে রংপুর থেকে ছুটে আসেন তার মা-বাবা। ছেলেকে দেখে ভেঙে পড়েন তারা।
পরে বিদেশে চিকিৎসার চেষ্টা হলেও ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহায়তা, শিক্ষক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেয়েও উন্নত চিকিৎসা হয়নি। এখন বিদেশে গেলেও তেমন লাভ নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।
স্বৈরাচার পতনের এক বছর পর দেশ নতুন আশা দেখলেও তন্ময়ের চোখে আলো ফেরেনি। তিনি বলেন, “১৮ জুলাই শুধু আমার চোখে গুলি লাগেনি, সেদিন আমার স্বপ্নেও গুলি লেগেছিল। আমি শুধু একটা চোখ হারাইনি, হারিয়েছি জীবনের ছন্দও।”
তন্ময়ের জীবনে যে অন্ধকারের দাগ লেগেছে, তা দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। স্বৈরাচার বিদায়ের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য সময় প্রয়োজন।
তন্ময়ের মতো অসংখ্য তরুণের ত্যাগ ও বেদনায় আজকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের সবার কাছে চিরস্মরণীয়।
ঢাকা/রাকিবুল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত ব শ বব দ য শ বব দ য ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই মাস ফ্রিজে রাখার পর মামুনের মাথায় খুলি পুনঃস্থাপন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার মাথায় খুলি প্রায় দুই মাস ফ্রিজে সংরক্ষণ করার পর সফলভাবে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে খুলি পুনঃস্থাপন করেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মামুন মিয়ার মাথায় সফলভাবে অপারেশন করা হয়েছে। তিনি এখন সুস্থ আছেন।
গত ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মামুন মিয়া।
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ টি এম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, চবিতে সংঘর্ষের দিন গুরুতর আহত অবস্থায় মামুন মিয়াকে পার্কভিউ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সেই থেকে তিনি এখানে চিকিৎসাধীন আছেন। অপারেশনের সময় তার মাখার খুলি খুলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস পর সফল অপারেশনের মাধ্যমে শনিবার মামুনের মাথার খুলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।
গত ৩০ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। এতে মামুনসহ চবির অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হন। মাথায় মারাত্মক আঘাতের কারণে মামুনের মাথার খুলি খুলে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা/রেজাউল/রফিক