‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ অপারেশন টেবিলে শুয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক চিকিৎসকের মুখে তারেক শাহরিয়ার তন্ময়কে শুনতে হয়েছিল এমন কটূক্তি।

তন্ময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থী। তার কাছে হাসপাতালের সেই অপমান আজো দগদগে ক্ষত।

গত বছর ১৬ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তন্ময়ও অংশ নেন। রাজধানীর ভাটারা থানা ও নতুন বাজারের রাস্তায় দিনভর চলতে থাকে স্লোগান ও মিছিল। ১৭ জুলাই আন্দোলনে সাময়িক বিরতি এলেও পরদিন সকালেই ফের রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজন

বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি

তন্ময় বলেন, “বন্ধুর ফোনে খবর পেয়ে বের হওয়ার আগে বেলকনি থেকে দেখি আওয়ামী লীগের কিছু লোক বস্তা থেকে অস্ত্র-ছুরি বের করছে। তখনই ভয় পেয়ে আইডি কার্ড গলায় ঝুলাইনি।”

তিনি বলেন, “সেদিন নতুন বাজার থেকে শুরু হওয়া মিছিল বাঁশতলা পেরিয়ে উত্তর বাড্ডার দিকে এগোতে থাকলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুলিশও টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ঠিক তখনই পুলিশের শর্টগানের গুলি এসে লাগে আমার বাম চোখে।”

রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে এএমজেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকরা জানান, চোখ ফেরানো সম্ভব নয়।

তন্ময় বলেন, “অপারেশনের আগে এক চিকিৎসক এসে বলেছিলেন, ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ তখন আমি দুর্বল অবস্থায় অপারেশন টেবিলে শুয়ে কিছু বলতে পারিনি।”

অপারেশনের পরও তাকে অন্য রোগীর সঙ্গে একই বেডে রাখা হয়। বাইরে ছাত্রলীগের হামলার চেষ্টা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে পাশে দাঁড়ান ও খরচ বহন করেন। খবর পেয়ে রংপুর থেকে ছুটে আসেন তার মা-বাবা। ছেলেকে দেখে ভেঙে পড়েন তারা।

পরে বিদেশে চিকিৎসার চেষ্টা হলেও ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহায়তা, শিক্ষক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেয়েও উন্নত চিকিৎসা হয়নি। এখন বিদেশে গেলেও তেমন লাভ নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।

স্বৈরাচার পতনের এক বছর পর দেশ নতুন আশা দেখলেও তন্ময়ের চোখে আলো ফেরেনি। তিনি বলেন, “১৮ জুলাই শুধু আমার চোখে গুলি লাগেনি, সেদিন আমার স্বপ্নেও গুলি লেগেছিল। আমি শুধু একটা চোখ হারাইনি, হারিয়েছি জীবনের ছন্দও।”

তন্ময়ের জীবনে যে অন্ধকারের দাগ লেগেছে, তা দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। স্বৈরাচার বিদায়ের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য সময় প্রয়োজন।

তন্ময়ের মতো অসংখ্য তরুণের ত্যাগ ও বেদনায় আজকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের সবার কাছে চিরস্মরণীয়।

ঢাকা/রাকিবুল/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত ব শ বব দ য শ বব দ য ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইনজুরির শঙ্কা, উত্তেজনার ঝড়: শেষ হাসি হাসল মেসিহীন মায়ামি

লিওনেল মেসিকে হারানোর ধাক্কা নিয়ে যখন মায়ামির সমর্থকরা স্তব্ধ, তখনই যেন নাট্যরচকের কলমে লেখা হলো এক রুদ্ধশ্বাস স্ক্রিপ্ট। যেখানে শেষ দৃশ্যে জয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাসলেন জর্দি আলবা ও তার সতীর্থরা। লিগস কাপের এক উত্তেজনাকর লড়াইয়ে ইন্টার মায়ামি রবিবার (৩ আগস্ট) ঘরের মাঠে মেক্সিকোর ক্লাব নেকাসার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল টাইব্রেকারে। ম্যাচ শেষে স্কোরলাইন ৫-৪, কিন্তু তার চেয়েও বড় ঘটনা প্রথমার্ধেই ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন লিওনেল মেসি।

ম্যাচের মাত্র ৭ মিনিটেই প্রতিপক্ষের বক্সে চমৎকার এক ড্রিবলে ঢোকার চেষ্টা করেন মেসি। কিন্তু নেকাসার রক্ষণভাগের কড়া চ্যালেঞ্জে পড়ে যান। কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও খেলায় ফিরতে পারেননি। ১১ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তরুণ ফেদেরিকো রেদোনদো। মেসির চোট গুরুতর না হলেও, তার মাঠ ছাড়ার দৃশ্য যেন কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্টেডিয়ামের আবেগ।

মেসির মাঠ ছাড়ার এক মিনিট পরেই ডি পলের পাস থেকে গোল করেন তেলাস্কো সেগোভিয়া, এগিয়ে যায় মায়ামি। কিন্তু ১৭ মিনিটেই বড় ধাক্কা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মায়ামির ডিফেন্ডার ম্যাক্সিমিলিয়ানো ফ্যালকন। দশজনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ৩৩ মিনিটে নেকাসাকে সমতায় ফেরান থমাস বাদালোনি।

আরো পড়ুন:

ভারত সফরে ধোনি-কোহলিদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবেন মেসি

মেসির জাদুতে জয়ে ফিরল ইন্টার মায়ামি, ডি পলের অভিষেকে উচ্ছ্বাস

দ্বিতীয়ার্ধে ৬০ মিনিটে নেকাসার ক্রিশ্চিয়ান ক্যালদেরনও লাল কার্ড দেখলে খেলাটি ১০ বনাম ১০ এ রূপ নেয়। এরপর ৮১ মিনিটে রিকার্দো মনরিয়ালের গোলে এগিয়ে যায় নেকাসা। ম্যাচ তখন মায়ামির নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যখন সবাই ধরেই নিচ্ছিলেন, জয় বুঝি নেকাসার পকেটে, তখনই নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটান স্প্যানিশ তারকা জর্দি আলবা। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই ডি পলের দ্বিতীয় অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে ম্যাচ ২-২ সমতায় ফেরান তিনি।

এরপর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে মায়ামির শ্যুটাররা সবাই সফল হন। নেকাসার হয়ে বাদালোনি একমাত্র মিসটি করায় ৫-৪ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মেসিহীন মায়ামি। আগের ম্যাচে আটলাসের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জেতায় দুই ম্যাচে এখন মায়ামির সংগ্রহ ৫ পয়েন্ট।

ম্যাচ শেষে ইন্টার মায়ামির কোচ জাভিয়ের মাসচেরানো মেসির চোট নিয়ে বলেন, “আমরা এখনই কিছু নিশ্চিত বলতে পারছি না। তবে ব্যথা নেই, এটা ভালো খবর। হালকা অস্বস্তি আছে মাত্র।”

ইন্টার মায়ামির পরবর্তী চ্যালেঞ্জ বৃহস্পতিবার, প্রতিপক্ষ মেক্সিকোরই আরেক ক্লাব পুমাস।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোহাম্মদ সিরাজ: বুমরাহীন ভারতের শেষ আশার নাম
  • ইনজুরির শঙ্কা, উত্তেজনার ঝড়: শেষ হাসি হাসল মেসিহীন মায়ামি