নীলফামারীতে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদ জবিতে বিক্ষোভ
Published: 2nd, September 2025 GMT
নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে হাবিবুর রহমান নামে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
আরো পড়ুন:
রেলপথ অবরোধের পর ব্যাংক-ট্রেজারি অফিসে তালা দিলেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা
চবি উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলন দমন ও গুলি চালিয়ে হত্যার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট। কল্পনা চাকমা বলেছিলেন, ‘পাহাড়ে যা এক্সপেরিমেন্ট হয়, সমতলে তা ইমপ্লিমেন্ট হয়।’ তেমনটা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
তারা অবিলম্বে শ্রমিক হত্যার বিচার এবং সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মারুফ বলেন, “সেনাবাহিনী আজ শ্রমিকদের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে খুন করেছে। অথচ একই সেনাবাহিনীকে আমরা চবি শিক্ষার্থীদের বিপন্ন অবস্থায় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হতে দেখেছি। পুলিশ প্রশাসনও ধর্ষণ, মব ভায়োলেন্স কিংবা পাহাড়ে আদিবাসীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সেনাবাহিনী শ্রমিক আন্দোলন দমনে কঠোরভাবে অংশ নিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে এবং পুঁজিপতি-মালিক শ্রেণির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পাহাড়ে আদিবাসীদের উচ্ছেদ ও সমতলে শ্রমিক আন্দোলন দমন তারই প্রমাণ। গত এক বছরে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পর থেকে তারা সাধারণ মানুষের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। ক্ষমতাসীন পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষায় সেনাবাহিনী খুন পর্যন্ত করতে পিছপা হচ্ছে না।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।