কাতারে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬
Published: 10th, September 2025 GMT
ইসরায়েলি বিমান হামলায় কাতারের রাজধানী দোহায় এ পর্যন্ত ৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ৫ জনই ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বাকি যে একজন নিহত হয়েছেন, তিনি কাতারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিলেন। হামলার পর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে হামাস।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলায় ৬ জন নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে নিহতের মোট সংখ্যা জানালেও হামাসের নাম উল্লেখ করেনি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলে বন্দুক হামলায় নিহত ৫, আহত ১৫
হামাসকে শেষবারের মতো সতর্ক করলেন ট্রাম্প
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ বিমান হামলা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আল জাজিরা ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এতে লক্ষ্যবস্তু করা হয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে। ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিল হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যা করা। হামাস নেতারা তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে। ঠিক সেই বৈঠকের ভবনকেই লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে এ বিমান হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এতে লক্ষ্যবস্তু করা হয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে। নিহতদের মধ্যে একজনের নাম হিমাম আল-হায়া বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো। তিনি হামাসের গাজা শাখার নেতা খালিল আল-হায়ার ছেলে। নিহত অপরজনের নাম জিহাদ লাবাদ। তিনি খালিল আল-হায়ার দপ্তরের পরিচালক ছিলেন।
হামাস জানিয়েছে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তাদের নেতারা। ওই সময় হামলা হয়। তবে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এ হামলা থেকে বেঁচে গেছেন।
ইসরায়েলি একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এরমধ্যে খালিল আল-হায়াও ছিলেন। তিনি হামাসের গাজা প্রধানের পাশপাশি প্রধান আলোচকের দায়িত্বও পালন করছেন।
ইসরায়েলের হামলার পর দোহায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর শহরটির লেগতিফিয়া পেট্রোল স্টেশন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হতে দেখা যায়। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ১৫টি যুদ্ধ বিমান এতে অংশ নেয় এবং হামলার ব্যাপ্তি ছিল মাত্র ১০ মিনিট।
এক বিবৃতিতে এ হামলাকে ‘ঘৃণ্য অপরাধ’, ‘নির্লজ্জ আগ্রাসন’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইনের অশালীন লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা নিশ্চিত করে বলছি যে শত্রুরা আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা ভাইদের এবং আমাদের আলোচনাকারী দলের সদস্যদের হত্যায় ব্যর্থ হয়েছে।”
“আমাদের আলোচনাকারী প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাঠানো সাম্প্রতি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে যখন আলোচনা করছিলেন, তখন চালানো হয়েছে এ হামলা। এ ঘটনার মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো যে নেতানিয়াহু এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকার কোনো শান্তি চুক্তিতে তো আসতেই চায় না, উপরন্তু শান্তি স্থাপন সংক্রান্ত যে কোনো উদ্যোগকে তারা বাধা দিতে বদ্ধ পরিকর।”
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, “যারা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনা করেছিল, তাদেরকে লক্ষ্য করে পরিচালিত এই হামলা সম্পূর্ণ ন্যায্য।”
এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে নিন্দা জানিয়েছে কাতার।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল লক ষ য আল হ য়
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ