চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন থেকে শুরু করে শহীদ মিনার, কলা অনুষদের ঝুপড়ি কিংবা গোলচত্বর—সবখানেই এখন চাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর সপ্তমবারের মতো হতে যাচ্ছে এ নির্বাচন। তাই কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪২৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শীর্ষ পদে লড়তে প্রার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।

চাকসুর কোন পদে কতজন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, সেই তথ্য আজ শুক্রবার রাত ৯টার দিকে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। তারা জানিয়েছে, সহসভাপতি (ভিপি) পদে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২৫টি। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন সমানসংখ্যক ২২ জন করে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শীর্ষ এই তিন পদে যে ভিড় তৈরি হয়েছে, তা আসলে ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব কাঠামোয় নতুন প্রজন্মের জায়গা করে নেওয়ার লড়াই। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি, ফলে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।

নির্বাচন কমিশনার এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী প্রথম আলোকে জানান, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে আগামীকাল শনিবার, প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ হবে আগামী রোববার। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী মঙ্গলবার। প্রার্থীর ব্যাপারে আপত্তি জানানোর শেষ সময় আগামী বুধবার এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে বৃহস্পতিবার। আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

কোন পদে কত মনোনয়ন

কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদকীয় পদগুলোতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র। খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রার্থী ১২ জন ও সহ–খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদকে ১৫ জন; সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদকে ১৮ জন ও সহ-সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদকে ১৬ জন; দপ্তর সম্পাদকে ১৮ ও সহদপ্তর সম্পাদকে ১৪ জন; বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকে ১১ জন; গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক সম্পাদকে ১৩ জন; সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকে ২০ জন; স্বাস্থ্য সম্পাদকে ১৭ জন; মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদকে ১৭ জন; ক্যারিয়ার উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকে ১৬ জন; যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদকে ২০ ও সহযোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদকে ১৪ জন; আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদকে ১১ জন; পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদকে ২১ জন এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ৮৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত দুটি পদ রয়েছে। ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক ও সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র পড়েছে সমানসংখ্যক ১২ জন করে।

নির্বাচন ঘিরে প্রত্যাশা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯ বছরের ইতিহাসে চাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। সপ্তমবারের মতো এ আয়োজন শিক্ষার্থীদের কাছে শুধু ভোট নয়, বরং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের বড় সুযোগ। নির্বাচনী উত্তাপ বাড়লেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সাধারণ প্রত্যাশা-ভুলভ্রান্তিহীন, সুষ্ঠু নির্বাচন। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও শিক্ষার্থীরা চান, চাকসু নির্বাচন ঘিরে যেন নতুন আস্থা তৈরি হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আয়েশা আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই চাকসু নির্বাচন হোক শিক্ষার্থীদের উৎসব। কিন্তু যদি প্রশাসন পক্ষপাতিত্ব করে, তাহলে এ আস্থা ভেঙে যাবে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি