চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিন
Published: 20th, September 2025 GMT
প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারের ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাকে ট্রাকে সেই পণ্য বিক্রি করে থাকে। কিন্তু চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এই ট্রাক সেল কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাজেট সীমাবদ্ধতার কথা বলা হলেও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে দেশে দারিদ্র্যের হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তিন বছরে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে এখন ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একটি পরিবারের মাসিক আয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশই খাবার কিনতে খরচ হয়ে যাচ্ছে, যা তাদের জীবনধারণের অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষমতাকে সীমিত করে তুলছে। এমন চরম আর্থিক সংকটের সময়ে, যখন সবজি থেকে শুরু করে ডিম ও মাছের দাম আকাশছোঁয়া, তখন টিসিবির ট্রাক সেল মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সামান্য স্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। ট্রাকের সামনে দীর্ঘ সারি তারই প্রমাণ।
তবে টিসিবি কর্তৃপক্ষ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই কার্যক্রম বন্ধ করার পেছনে প্রধানত দুটি কারণ দেখাচ্ছে: বাজেট সীমাবদ্ধতা এবং বিপুল ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তা। তাদের যুক্তি, ট্রাক সেলের মাধ্যমে প্রতি ইউনিট পণ্যে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। সংস্থাটি বর্তমানে কার্ডভিত্তিক ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ব্যবস্থায় জোর দিচ্ছে। যদিও এটি একটি ভালো উদ্যোগ, কিন্তু সব নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এখনো কার্ড পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া শহরের বস্তি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে শ্রমজীবী মানুষ থাকেন, সেখানে এই ট্রাকগুলো সহজে পৌঁছাতে পারত। এটি সামাজিক সুরক্ষার একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু থাকলেও শহরাঞ্চলে এর অভাব রয়েছে। তাই শহরের কম আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির ট্রাক সেল অত্যন্ত জরুরি। তাঁরা মনে করেন, সরকার যদি বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি অন্য অনেক খাতে দিতে পারে, তাহলে মানুষের মৌলিক খাদ্য চাহিদা পূরণের এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে কেন তা সম্ভব হবে না?
টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিম্নবিত্ত নাগরিকদের প্রতি শুধু রাষ্ট্রের অবহেলাই প্রতিফলিত হয় না, এখানে মানবিকতার প্রশ্নও তৈরি হয়। সরকার কি কেবল অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ করবে, নাকি জনগণের জীবনযাত্রার মানকেও গুরুত্ব দেবে?
বাজেট সীমাবদ্ধতার যুক্তি বাস্তব হলেও জনস্বার্থের চেয়ে তা বড় হতে পারে না। জনজীবনে স্বস্তি নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। রমজান বা ঈদের মতো বিশেষ দিনে এই কার্যক্রম চালু রাখা অবশ্যই প্রশংসনীয়, কিন্তু জনগণের দৈনন্দিন সংকট তো সারা বছরের। সরকারের উচিত ভর্তুকির পরিমাণ নিয়ে নতুন করে ভাবা এবং টিসিবির ট্রাক সেলের মতো কার্যক্রমকে কেবল বিশেষ সময়ের জন্য সীমিত না রেখে বছরজুড়ে চালিয়ে যাওয়া। প্রয়োজনে শহরের নির্দিষ্ট কিছু দরিদ্র অঞ্চলে এই কার্যক্রম সীমিত রাখা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যখন কমছে, তখন তাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা কেবল অর্থনৈতিক সংকটই দূর করে না, বরং সরকারের প্রতি তাদের আস্থা ও ভরসাও বাড়ায়। এই বিনিয়োগ দীর্ঘ মেয়াদে সমাজের জন্য আরও ফলপ্রসূ হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র র জন য ভর ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপিসহ ৩ দল পেল চূড়ান্ত নিবন্ধন
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন তিনটি নতুন রাজনৈতিক দলকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দিয়েছে। এর মধ্যে আছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
রংপুর-৩: জাতীয় পার্টির আসন দখলে নিতে প্রচারণা শুরু বিএনপির
কিশোরগঞ্জ-৪, নতুন করে আলোচনায় ফজলুর রহমান
তিনি বলেছেন, দলগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
   
ঢাকা/এএএম/রফিক