বগুড়ার শেরপুরে একটি বিদ্যালয়ে ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় দুই শিক্ষকের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বেলা একটার দিকে শেরপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরিস্থিতি শান্ত করতে বিদ্যালয়ে পুলিশ ডাকা হয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সাহেব আলী ও ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর মাহমুদুল হাসানের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় প্রথমে মাহমুদুলকে মারধর করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। পরে মাহমুদুলের পক্ষে বহিরাগত কয়েকজন বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষক সাহেব আলীকে মারধর করেন। এতে আহত হয়ে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে মারামারির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের অনেকে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস না করে বাড়িতে চলে যায়। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোজাফফর আলী বলেন, ওই দুই শিক্ষকের মধ্যে এবং বহিরাগত কয়েকজন এসে বিদ্যালয় চত্বরে মারামারি করেন। এতে দুজন শিক্ষক আহত হয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সহকারী শিক্ষক সাহেব আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে তিনি বিদ্যালয়ের ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর মাহমুদুল হাসানের কাছে ওই পাসওয়ার্ড চান। কিন্তু তিনি পাসওয়ার্ড না দিয়ে তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। একপর্যায়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তাঁকে মারধর করেন। পরে পৌর শহরের টাউন কলোনি মহল্লা থেকে মাহমুদুল তাঁর নিকটাত্মীয়দের ডেকে এনে দোতলায় শ্রেণিকক্ষের সামনে আবার মারধর করেন।

অভিযোগের বিষয়ে মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে বিদ্যালয়ের ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড তিনি বসিয়ে থাকেন। প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া তিনি পাসওয়ার্ড দিতে রাজি না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক সাহেব আলী তাঁর ওপর চড়াও হন এবং মারধর করেন। তিনি বলেন, তাঁকে মারধর করায় তাঁর আরেক ভাই বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। বহিরাগত বলে যা বলা হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার পর বিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ আসার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাটি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে জানানো হয়েছে।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পর বিদ্যালয় থেকে পুলিশ থানায় ফিরেছে। মারধরের ঘটনা নিয়ে কোনো পক্ষেই অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক স হ ব আল র কর ন সহক র প সওয

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা

জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।

দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপট

হাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’

এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)

আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।

দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকত

এই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯

আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।

আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।

দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ