জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.

)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।

দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপট

হাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’

এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)

আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।

দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকত

এই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯

আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।

আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।

দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সন ত ন ল ভ পর ব র র বরকত র র জ বন র জন য এই দ য আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

শিরক প্রতিরোধে মহানবী (সা.)-এর ৭ নির্দেশনা

তাওহিদ ইসলামের মূল ভিত্তি এবং ইমানের প্রাণ। এটি আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস ও তাঁর ইবাদতে অটল থাকার নিশ্চয়তা। অন্যদিকে শিরক মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ, যা সকল আমলকে ধূলিকণার মতো মূল্যহীন করে দেয়।

শিরক করা কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ, যা একজন ধর্মভীরু বা তাহাজ্জুদগুজার বান্দার সারাজীবনের আমলকেও নষ্ট করে দিতে পারে।

তাওহিদ সংরক্ষণ করা এবং শিরক থেকে মুক্ত থাকা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চাবিকাঠি। রাসুল (সা.) তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাওহিদ প্রতিষ্ঠা এবং শিরকের পথ বন্ধ করতে। তাঁর নির্দেশনাগুলো আজও আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক।

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না, তবে এর নিম্ন পর্যায়ের গুনাহ তিনি যার জন্য ইচ্ছা করেন, ক্ষমা করেন।সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮, ১১৬তাওহিদ ও শিরকের গুরুত্ব

আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না, তবে এর নিম্ন পর্যায়ের গুনাহ তিনি যার জন্য ইচ্ছা করেন, ক্ষমা করেন।” (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮, ১১৬)

রাসুল (সা.) বলেছেন, “শিরকের চেয়ে বড় গুনাহ আর নেই।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৮৬১)

তাওহিদের সংরক্ষণ মানে শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” মুখে বলা নয়, বরং শিরকের সকল রূপ থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর ইবাদতে একনিষ্ঠ থাকা।

আরও পড়ুনতাওহিদ বলতে কী বোঝায়১২ জুলাই ২০২৫শিরক প্রতিরোধে রাসুলের নির্দেশনা

রাসুল (সা.) তাওহিদ সংরক্ষণ ও শিরক প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা নিম্নরূপ:

১. ইসলামের ব্যাপারে অতিরঞ্জন নিষেধ: রাসুল (সা.) ইসলামের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি বা অতিরঞ্জন নিষেধ করেছেন, কারণ এটি শিরকের সূচনার কারণ। তিনি বলেছেন, “ইসলামের ব্যাপারে অতিরঞ্জন থেকে সাবধান। কারণ পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংসের কারণ ছিল অতিরঞ্জন।” (সুনান নাসায়ি, হাদিস: ৩০৫৭)

২. কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ নিষেধ: রাসুল (সা.) কবরের পাশে বা উপরে মসজিদ নির্মাণ এবং কবর পাকা বা চুনকাম করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আল্লাহ ইহুদি ও নাসারাদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৫)

এটি কবর-পূজার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রথম ধাপ।

৩. কবরের কাছে নামাজ নিষেধ: তিনি কবরের কাছে নামাজ পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, যাতে মৃতদের উদ্দেশে ইবাদত না হয়। তিনি বলেছেন, “কবরস্থানে নামাজ পড়ো না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭২)

৪. কবরে উৎসব করা নিষেধ: রাসুল (সা.) নিজের কবর বারবার জেয়ারত, নিয়মিত দোয়া বা নৈকট্যের আশায় জমায়েত নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমার কবরকে উৎসবের স্থান বানিয়ো না।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ২০৪২)

৫. কাফেরদের অনুকরণ নিষেধ: তিনি কাফেরদের সংস্কৃতি বা আচরণের অনুকরণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য করে, সে তাদেরই একজন।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)

মুসলিম পরিচয় তাওহিদের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া উচিত।

আরও পড়ুনকেন শিরক সবচেয়ে বড় পাপ১৮ জুন ২০২৫রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে শিরকের ছায়া থেকে দূরে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাওহিদ মানে শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা নয়, বরং শিরকের সকল রূপ থেকে মুক্ত থাকা।

৬. ছবি অঙ্কন বা মূর্তি নির্মাণ নিষেধ: রাসুল (সা.) জীবিত বা মৃত কারও সম্মানে ছবি অঙ্কন, মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “যারা প্রাণীর ছবি অঙ্কন করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৫১)

শিরকের সূচনা প্রিয়জনের মূর্তি পূজা থেকেই হয়েছিল।

৭ . শরিয়তবহির্ভূত বরকত কামনা নিষেধ: রাসুল (সা.) শরিয়তবহির্ভূত পদ্ধতিতে বরকত কামনা নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বরকত একমাত্র আল্লাহই দান করেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭১)

এমনকি তিনি এমন কথা বলতেও নিষেধ করেছেন যা তাওহিদের মর্যাদার বিরুদ্ধে যায়। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০১৮)

রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে শিরকের ছায়া থেকে দূরে রাখতে এবং তাওহিদ সংরক্ষণে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাওহিদের সংরক্ষণ মানে শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা নয়, বরং শিরকের সকল রূপ থেকে মুক্ত থাকা।

উপর্যুক্ত নির্দেশনাগুলো মেনে চললে আমরা শিরক থেকে নিরাপদ থাকতে পারব। মহান আল্লাহ আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত তাওহিদের পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুনধর্মে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণের বিপদ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে বাফুফেকে স্টেডিয়াম ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
  • শিরক প্রতিরোধে মহানবী (সা.)-এর ৭ নির্দেশনা