একজন মানুষের দৈনিক কতক্ষণ বা সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত? আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নীতি অনুযায়ী সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা। ওভারটাইমসহ তা হতে পারে সর্বোচ্চ ৬০ ঘণ্টা। কিন্তু কেমন হয় যদি দৈনিক ১২ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়? কাজের এমন নীতি আগে বহাল ছিল এবং তা হয়তো আবারও ফিরে আসছে। জানা যাক এই ’৯৯৬’ কর্মসংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা সম্পর্কে।

‘৯৯৬’ কী?

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা, সপ্তাহে ৬ দিন কাজ; এটিই পরিচিত ‘৯৯৬’ হিসেবে। ২০১০ সালের দিকে চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু হওয়া এই ‘৯৯৬’ কর্মসংস্কৃতি সব সময়ই ছিল বিতর্কিত। ২০১৯ সালে গিটহাবের মাধ্যমে ‘অ্যান্টি-৯৯৬’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর, চীনের প্রযুক্তি খাতে এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। ২০২১ সালে চীনের সর্বোচ্চ আদালত ৯৯৬ সংস্কৃতিকে অবৈধ ঘোষণা করলেও বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো এই সংস্কৃতি অনুসরণ করে। এই প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে সিলিকন ভ্যালিতে। এখন প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাজ্য কি এর কবলে পড়তে পারে?

আরও পড়ুনবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে চাকরি, নবমসহ বিভিন্ন গ্রেডে নিয়োগ১১ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে গ্রহণ

যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম আইন অনেকটাই নিয়োগকর্তার নিয়ন্ত্রণে। ফলে সেখানে ৯৯৬ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নতুন এআই ও টেলিহেলথ স্টার্টআপগুলোয় কমপক্ষে ৭০ ঘণ্টার কাজ প্রত্যাশা করা হয়। কেউ যদি স্বেচ্ছায় আরও বেশি সময় দিতে রাজি হন, তাঁদের জন্য বেতন ও শেয়ার বৃদ্ধি করা হয়।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৯৬তম বিএমএ কোর্স, আবেদনের সুযোগ যাদের০৯ অক্টোবর ২০২৫

আইনি ফাঁক ও উদ্যোক্তাদের প্ররোচনা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কোনো কর্মঘণ্টার বৈধ সীমা নেই। ২০২২ সালে ইলন মাস্ক টুইটার কর্মীদের জানিয়েছিলেন, ‘চরম কঠোর’ কর্মসংস্কৃতিতে অংশ নিতে হবে। এর পর থেকে কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ও স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা ৯৯৬ ধারার কাজকে ‘বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার একমাত্র উপায়’ হিসেবে প্রচার করছেন।

যুক্তরাজ্য যা হতে পারে

ব্রিটেনে সপ্তাহে গড়ে ৪৮ ঘণ্টার সীমা থাকলেও একটি বড় ফাঁক রয়েছে। তা হলো, কর্মীরা স্বেচ্ছায় চুক্তি সই করলে সীমার বাইরে কাজ করতে পারেন। এটি কিছু প্রতিষ্ঠানকে ইউরোপীয় মানদণ্ডের বাইরে যেতে উদ্বুদ্ধ করছে। ইতিমধ্যেই লন্ডনের কিছু স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা সাত দিন কাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিশ্বের সেরা প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে এটি অপরিহার্য।

আরও পড়ুনএআই বাড়াচ্ছে কাজের চাপ, চীনের ‘৯৯৬’ সংস্কৃতি কি ফিরছে১২ অক্টোবর ২০২৫৯৯৬-এর প্রসার স্পষ্ট করছে যুক্তরাজ্য কি কর্ম ও জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করবে, না সিলিকন ভ্যালির অনুপ্রেরণায় এই ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতি গ্রহণ করবে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর জ য

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে সংশোধন হচ্ছে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা

দেশের প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠনের আপত্তির মুখে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন জারির পাঁচ মাসের মধ্যে আবার সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এই বিধিমালার ১০টি বিধির সংশোধন চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন বিধিমালায় ফেডারেশনসহ বাণিজ্য সংগঠনে টানা দুবার পদে থাকার পর একবার বিরতির বিধান বাতিল, ফেডারেশন ছাড়া অন্য সংগঠনে পরিচালকদের ভোটে সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের বিধান করা, পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শিথিল, বাণিজ্য সংগঠনে সদস্য হওয়ার ও সদস্যপদ নবায়ন ফি কমানোসহ কিছু বিধানে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। গত মাসে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সম্ভাব্য সংশোধন নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের মতামত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

প্রায় তিন দশক পর গত মে মাসে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগের বিধিমালাটি ছিল ১৯৯৪ সালের। এটি করা হয় ১৯৮৫ সালের বিধিমালা বাতিল করে।

বিধিমালা জারির পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) দেশের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন বেশ কিছু বিধি সংশোধনের দাবি জানায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ব্যবসায়ী নেতারা জানান, নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার কিছু বিধানের কারণে এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বারের মতো কিছু সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সংশোধনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে মোটামুটি একমত হওয়া গেছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

আমরা ঢাকা চেম্বার থেকে কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের অনুরোধ করেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে রাজি হয়েছেতাসকীন আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার

যেসব পরিবর্তন আসছে

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টানা দুবার বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদে থাকলে একবার বিরতি দিয়ে আবার নির্বাচন করা যাবে। নিয়মটি ভবিষ্যতের পাশাপাশি বিগত সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে বলে নতুন বিধিমালায় বলা হয়। কিন্তু এই বিধানের কারণে এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের অনেক সাবেক ও বর্তমান নেতার পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ কারণে বিধানটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ। ব্যবসায়ীদের এই ক্ষোভের কারণে বিধানটি বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া বর্তমান বিধি অনুযায়ী, ফেডারেশনসহ সব বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকেরা সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার হওয়ার কথা। তবে সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, ফেডারেশন ছাড়া দেশের অন্য বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সহসভাপতি সরাসরি সদস্যদের ভোটে কিংবা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করার বিধান সংযোজন করা হচ্ছে। নতুন বিধিমালা জারির আগে এই পদ্ধতিতেই বাণিজ্য সংগঠনগুলোর পর্ষদের শীর্ষ পদের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছিল।

এবারের বিধিমালায় ফেডারেশন ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ মাস বেঁধে দেওয়া হয়। তবে পাঁচ যুগ ধরে এমসিসিআইয়ে তিন বছর মেয়াদি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে, সেখানে প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ পরিচালক অবসরে যান। সংশোধনী প্রস্তাবে, ফেডারেশন ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ অথবা ৩৬ মাস করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

বিদ্যমান বিধিমালায় বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য হওয়ার ফি বা মাশুল এক লাফে ৪৩ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয় সদস্যদের বার্ষিক চাঁদার পরিমাণও। এর ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে সদস্য হওয়া ও সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা বৃদ্ধির বিধানটি নিয়ে সারা দেশে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে এ-সংক্রান্ত বিধানও সংশোধন করা হচ্ছে।

বিধিমালায় কী কী সংশোধন হচ্ছে, সেসব বিষয়ে গত মাসে এক বৈঠকে আমাদের জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসে, সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি আমরামীর নিজাম উদ্দিন, সাবেক সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিধিমালার সংশোধনী প্রস্তাবে সদস্য হওয়ার ফি ও বার্ষিক চাঁদা কমানোর বিষয়টি আছে। যেমন—ক শ্রেণির বাণিজ্য সংগঠনে সাধারণ সদস্য হওয়ার ফি ১৫ হাজার থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা এবং বার্ষিক চাঁদা ৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা করা হতে পারে। খ শ্রেণির বাণিজ্যে সংগঠনে সদস্য হওয়ার ফি ও বার্ষিক চাঁদা একই থাকবে। সহযোগী সদস্যের জন্যও সদস্য ফি ও বার্ষিক চাঁদার হার একই হবে।

বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করার দাবি নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল ফেডারেশনের সদস্যদের একাংশের জোট—এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ। এই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিধিমালার সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষে হলে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন নির্বিঘ্ন হবে।

মীর নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বাণিজ্য সংগঠন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন বিধি বাদ দিতে অনুরোধ করি। বিধিমালায় কী কী সংশোধন হচ্ছে, সেসব বিষয়ে গত মাসে এক বৈঠকে আমাদের জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসে, সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা।’

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা চেম্বার থেকে কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের অনুরোধ করেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে রাজি হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় অন্য সবার কথাও শুনছে। শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসবে, সেটি হয়তো মন্ত্রণালয় জানাবে। আমরা ফলোআপ করছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ