ইসলামবিদ্বেষ এখন ক্ষমতার রাজনীতির নতুন মুদ্রা
Published: 14th, October 2025 GMT
আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি, সেটাকে সবচেয়ে সৎ ভাবে বর্ণনা করা যায় এভাবে—ইসলামবিদ্বেষ এখন বৈশ্বিক ক্ষমতার নতুন মুদ্রা। রাজনীতিবিদদের বক্তৃতায়, কূটনীতিকদের চুক্তিতে, সংবাদপত্রের পাতায় এবং নিরাপত্তা বা সন্ত্রাসবিরোধী ভাষ্যে এই মুদ্রা বেশ ভালোভাবেই চলে। এই মুদ্রা গণহত্যার দায়মুক্তি দেয়, স্বৈরশাসককে দেয় বৈধতা, আর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের নতুন বাজার গড়ে তোলে। গাজার গণহত্যা দেখিয়েছে, মুসলমানের রক্ত শুধু সস্তা নয়; বরং বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর অর্থনীতির জন্য বিনিয়োগযোগ্য পুঁজি।
গাজার দিকে তাকান। দুই বছর ধরে বিশ্ব দেখছে, অবরুদ্ধ একটি জাতিকে কীভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ি ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে পরিবারগুলোর কবর রচিত হচ্ছে, হাসপাতালে বোমা হামলা হচ্ছে, শিশুরা ক্ষুধায় যন্ত্রণায় তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মাচাদো কি আসলেই শান্তিকামী?
ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্র কর্মী মারিয়া করিনা মাচাদোকে ২০২৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে তিনি কি আসলেই শান্তিকামী? সমালোচকদের ভাষ্য, মাচাদো ইসরায়েল এবং গাজায় বোমাবর্ষণকে সমর্থন করেন। শুধু তাই নয়, তিনি তার দেশে সরকার উৎখাতের জন্য বিদেশী হস্তক্ষেপের আহ্বানও জানিয়েছিলেন।
নোবেল পুরস্কার কমিটি মাচাদোকে ‘শান্তির রক্ষক’ হিসেবে প্রশংসা করেছে, যিনি ক্রমবর্ধমান অন্ধকারের মধ্যে ভেনিজুয়েলায় গণতন্ত্রের শিখাকে জ্বালিয়ে রেখেছেন। কমিটির সভাপতি জর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস মাচাদোকে ভেনিজুয়েলার ‘একসময় বিভক্ত রাজনৈতিক বিরোধী দলের মূল, ঐক্যবদ্ধ ব্যক্তিত্ব’ বলে অভিহিত করেছেন।
নোবেল কমিটি নাম ঘোষণার পরপরই সমালোচকরা মাচাদোর ইসরায়েল এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করা পুরনো পোস্টগুলো শেয়ার করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যার’ প্রতি সমর্থন ছিল এই শান্তিকামী নেত্রীর।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আশ্চর্যজনক হামলার পর মাচাদো ইসরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করলেও, তিনি কখনও ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার ঘটনায় তার সহানুভূতি প্রকাশ করেননি। বছরের পর বছর ধরে তার পোস্টগুলো নিশ্চিত করে যে তিনি ইসরায়েলি যুদ্ধবাজ নেতা নেতানিয়াহুর একজন মিত্র।
মাচাদো এক পোস্টে বলেছিলেন, “ভেনিজুয়েলার সংগ্রাম ইসরায়েলের সংগ্রাম।” দুই বছর পর আরেক পোস্টে তিনি ইসরায়েলকে ‘স্বাধীনতার প্রকৃত মিত্র’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এমনকি মাচাদো ক্ষমতায় এলে ভেনিজুয়েলার দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।
নরওয়ের একজন আইনপ্রণেতা বজর্নার মক্সনেস জানিয়েছেন, মাচাদো ২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সাথে একটি সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। অথচ এই লিকুদ পার্টি ‘গাজায় গণহত্যার’ জন্য দায়ী। তাই মাচাদোকে দেওয়া এই পুরস্কার নোবেলের উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসনের অবসান ঘটনাতে বিদেশী হস্তক্ষেপের আহ্বানও জানিয়েছিলেন মাচাদো। ২০১৮ সালে, তিনি তার দেশে শাসন পরিবর্তনের জন্য ইসরায়েল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থন চেয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
মাচাদো অনলাইনে সেই চিঠির একটি অনুলিপি শেয়ার করেছিলেন। সেই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “আজ, আমি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠাচ্ছি, যাতে তারা মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসবাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত অপরাধী ভেনিজুয়েলার শাসনব্যবস্থা ভেঙে ফেলার জন্য তাদের শক্তি এবং প্রভাব প্রয়োগ করতে পারেন।”
ঢাকা/শাহেদ