আগারগাঁওয়ের এডিবি ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
Published: 15th, November 2025 GMT
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ শনিবার রাত ৮টা ৪৯ মিনিটের দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কারও হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় দুজন ব্যক্তি এডিবি ভবনের সামনের ফুটপাতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি ককটেল। কোনো হতাহত হয়নি।
এর আগে আজ বিকেল থেকে রাজধানীর মিরপুর, মৌচাক, হাতিরঝিলে আরও পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে একটি, মিরপুর–১২ মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে দুটি, হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজের নিচে একটি এবং মৌচাক ক্রসিংয়ের কাছে আরও একটি ককেটল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার নির্ধারিত দিন ছিল ১৩ নভেম্বর। সেই দিনটিতে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এরপর ৭ নভেম্বর রাত থেকে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়। ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১।
এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে আবারও বিভিন্ন কর্মসূচির কথা বলছে। এরই মধ্যে আজ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কপে মতবিরোধ তীব্র, চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা
ব্রাজিলের বেলেম শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনা চলছে। গত সোমবার শুরু হয়েছে ১২ দিনের এ সম্মেলন। সম্মেলনে ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এমনকি কোন কোন বিষয়ে একমত হওয়া যেতে পারে, এ নিয়ে তীব্র মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। সম্মেলন শেষে সবাই একমত হয়ে কোনো ধরনের চুক্তি আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়ে গেছে।
এদিকে সম্মেলনের বাইরে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বন উজাড় করে জলবায়ুকে হুমকির মুখে ফেলা শিল্প ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিরুদ্ধে ব্রাজিলের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ করছে। গত শুক্রবার সম্মেলনের প্রধান প্রবেশপথে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা কপ৩০ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগোর সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানায়। তাদের দাবি মেনে নিয়েছে কপ৩০ আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
উত্তর ব্রাজিলে প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার (৯ হাজার বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মুন্দুরুকু আদিবাসী গোষ্ঠীর লোকজন। ওই এলাকা প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের সমান। মুন্দুরুকু আদিবাসী গোষ্ঠীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরাই জলবায়ুর রক্ষক। আমাজন বনকে বড় বড় কোম্পানির মুনাফার জন্য আর ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।’
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এ বছরের কপ৩০ আলোচনায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তবে আদিবাসী প্রতিনিধিরা কোরেয়া দো লাগোর সঙ্গে বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন—আলোচনার অংশ না করেই কেন তাদের স্বাগতিক শহর বেলেমে আনা হলো? ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী মারিনা সিলভা বলেন, তাদের যেসব দাবি রয়েছে, তা মূলত ব্রাজিল সরকারের উদ্দেশে এবং সেখানেই সেগুলোর সমাধান হওয়া উচিত।
সম্মেলনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তাএবারের সম্মলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে ব্রাজিল। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেয়ে অতীতের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নেই এবার সম্মেলনের মূল জোর।
সম্মেলনের শুরুতে এজেন্ডা নিয়ে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে, কোরেয়া দো লাগো আগেভাগে একটি সমঝোতা করেন। এতে জলবায়ু অর্থায়ন, জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনার ঘাটতি, বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর লক্ষ্যের মতো বিতর্কিত ইস্যুগুলো আলাদা করে রাখা হয় এবং আলাদাভাবে আলোচনার জন্য ঠাঁই দেওয়া হয়।
আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় ১৯৫টি দেশের আলোচকেরা আগের চুক্তিগুলো বিস্তারিত করার কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে চরম আবহাওয়া ও অন্যান্য জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন পরিমাপ ও সহায়তার উপায় এগিয়ে নেওয়া। তবে সম্মেলনের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, তীব্র জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া খুবই দুর্বল হতে পারে। কিংবা আলোচনাই ভেঙে পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চেম্বারের নীতিবিষয়ক উপমহাসচিব অ্যান্ড্রু উইলসন বলেন, ‘যদি আমরা এই গতিতেই চলি, তাহলে ফলাফল হবে খুবই দুর্বল।’
স্বাগতিক ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ চাইছে, কপ২৮–এর প্রতিশ্রুতি বহাল রেখে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার আহ্বানকে আরও জোরালো তুলে ধরতে। তবে তার বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে চাপকপ৩০ জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক ব্রাজিল ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেকসই জ্বালানির ব্যবহার চার গুণ বাড়ানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি চাপ দিচ্ছে। এই টেকসই জ্বালানির মধ্যে রয়েছে বায়োফুয়েল, হাইড্রোজেন ও বায়োগ্যাস। তবে পরিবেশবিদেরা সতর্ক করছেন, ফসল থেকে জ্বালানি তৈরি করলে খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক টিমোথি সার্চিঙ্গার বলেন, ‘যখন জমি খাদ্যের বদলে জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, তখন অন্য কোথাও আরও জমি পরিষ্কার করতে হয় অথবা মানুষকে কম খেতে হয়।’
টিমোথি সার্চিঙ্গার আরও বলেন, ‘দেশগুলো মনে করে, তারা নির্গমন কমাচ্ছে। কারণ, বায়োফুয়েল থেকে নির্গমন “শূন্য” হিসেবে ধরা হয়। বাস্তবে এটি জমি ও খাদ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ায়।’ এই চাপ ইতিমধ্যে ভারতে দৃশ্যমান, যেখানে পেট্রলে ইথানলের মিশ্রণের হার দ্রুত বাড়ানো হয়েছে এবং গত দশকে এতে তেল আমদানিতে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে।
কিন্তু এর মূল্য হিসেবে চাষযোগ্য জমির একটি বড় অংশ খাদ্যের বদলে জ্বালানির ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বহু চালক অভিযোগ করছেন, ইথানল–মিশ্রিত জ্বালানিতে তাঁদের গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্রাজিলের দীর্ঘমেয়াদি বায়োফুয়েল প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। আইআরইএনএর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ব্রাজিলের পরিবহন খাতে ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় এক-চতুর্থাংশই ছিল বায়োফুয়েল এবং এ খাতে আনুষঙ্গিক কার্যক্রমে প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।