কুষ্টিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে সফল হয়েছেন সদর উপজেলার সাইফুল ইসলাম। মাত্র ছয় হাজার টাকা ধার নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করা এই ব্যক্তি এখন প্রতিমাসে আয় করছেন দেড় লাখ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো। শুধু নিজে সাবলম্বী হয়ে থেমে থাকেননি তিনি, এলাকার ৫০০ মানুষ হাতে-কলমে তার কাছ থেকে শিখেছেন মাশরুম চাষের পদ্ধতি।   

কুষ্টিয়া শহরের ব্যস্ততম সাদ্দাম বাজার মোড়ের সদর হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তার শুরুতেই সাইফুলের মাশরুমের দোকান। এখানে মাশরুমের তৈরি বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। পাশাপাশি মাশরুম ড্রাই ও পাউডার আকারেও বিক্রি করা হয়। দুইজন কর্মচারী মাশরুমের খাবর তৈরিতে সবসময় ব্যস্ত থাকেন। সাইফুল করেন হিসাব দেখাশোনার কাজ।

আরো পড়ুন:

শিশুদের ‘নোবেল’ পুরস্কারে মনোনীত কিশোরগঞ্জের মাহবুব

‍‍ছাগল পালনে সাবলম্বী তৃতীয় লিঙ্গের ‍শিলা

সাইফুল ইসলাম বলেন, “২০১৮ সালে আমি মাশরুম চাষ শুরু করি। আমি বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরী করেছি। চাকরি হারিয়ে আমি বাড়ি ফিরে একটি ব্যবসা শুরু করি। সেখানে লস খেয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। তখন আমার মনে পড়ে, চাকরিতে থাকা অবস্থায় মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এরপর মাশরুম চাষের পরিকলাপনা করি।” 

তিনি বলেন, “এসময় কোনো টাকা ছিল না আমার কাছে। অনেক কষ্টে ছয় হাজার টাকা ধার নিয়ে আমি মাশরুম চাষ শুরু করি। সাভার মাশরুম সেন্টার থেকে ১০০ পিস স্পন কিনে আনি। বর্তমানে আমার প্রতি চালানে ৮ হাজার মতো স্পন তৈরি হয়। ১৫ হাজার মতো স্পন রাখার স্থান রয়েছে আমার খামারে। আমি আমার এখানে মাশরুমের মাদার, স্পন এবং টিস্যু কালচার করি।”

সফল এই উদ্যোক্তা বলেন, “মাশরুম চাষ করায় এক সময় আমাকে অনেকেই কটু কথা বলতেন। ব্যাঙের ছাতা তৈরি করি বলে অনেক বন্ধুরা আমার সঙ্গে মেশা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে হতাশায় ভুগতাম। তবে, সাহস পেয়েছি কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায়।”

সাইফুল বলেন, “আমার এখানে ১৫-১৬ জন কাজ করে। প্রতিদিন ৪০-৬০ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। প্রতিকেজি ২০০ টাকা করে বিক্রি করি। এছাড়া একটি বিক্রয় কেন্দ্র করেছি। সেখানে দুইজন শ্রমিক কাজ করেন। তারা সেখানে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করেন মাশরুম থেকে। শুরুতে মাশরুম বিক্রি করতে পারতাম না তবে বর্তমানে মাশরুমের যে চাহিদা তাতে ড্রাই করার মতো সময় পাই না। ড্রাই করতে পারলে বিদেশে রপ্তানি করা যায়।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে ২৫-২৬ লাখ টাকার মতো মূলধন সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিমাসে আমার ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। আমার ইচ্ছা, সারা দেশে মাশরুমের বীজ সরবরাহ করা। যার মাধ্যমে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মানুষের বেকারত্ব দূর করতে পারব।”

এই উদ্যোক্তা বলেন, “আমার এখান থেকে প্রায় ৫০০ জন হাতে-কলমে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ এখনো টিকে আছে। তারাও বানিজ্যিকভাবে মাশরুম উৎপাদন করছেন। নারীরা ঘরে বসে মাশরুম চাষ করতে পারছেন, সে কারণে তারা বেশি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।”

সাইফুল বলেন, “আমার এ মাশরুম চাষ, বাজারজাত এবং পরামর্শ দিয়ে সাবক্ষণিক সহযোগিতা করছে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প। এ প্রকল্প থেকে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি মাশরুম চাষ ও বাজারজাত করণের উপরে। তারা প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে দিয়েছে। আগামীতে ড্রাই করা এবং প্যাকেট করার জন্য কিছু মেশিনারিজ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা রয়েছে, সেগুলো পেলে আরো উপকৃত হব।”

সাইফুলের এ মাশরুম খামার দেখতে আসা কুমারখালীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই খামার দেখতে ও শিখতে এসেছি। নিজ বাড়িতে মাশরুমের খামার করার ইচ্ছা আছে। এটি বেশ লাভজনক একটি ব্যবসা। আমার মতো অনেকেই আসছেন।”

সাইফুলের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বানিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ শুরু করেছেন কুষ্টিয়ার জগতি এলাকার বাসিন্দা শিরিনা আক্তার। তিনি মোবাইলে ইউটিউব থেকে সাইফুল ইসলামের কাছে মাশরুম চাষ সম্পর্কে হাতে-কলমে শিখে নিজেই এখন মাশরুমের স্পন (বীজ) তৈরি করছেন এবং চাষাবাদ করছেন।

শিরিনা আক্তার বলেন, “আমি গৃহস্থলির কাজের পাশাপাশি কাঁথা সেলাই করতাম। এখন মাশরুম চাষ করছি। আমার বাড়িতেই ছোট একটি ঘরে ৫০০ প্যাকেট মাশরুমের স্পন দিয়ে চাষ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে মাশরুম বিক্রি শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে আমার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। আশা করছি, আমি ৫০ হাজার টাকার মাশরুম পাব এই মৌসুমে। এটি বাড়িতে করা যায় এবং নারীরাও বেশ সহজেই করতে পারেন।”

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসিম রেজা বলেন, “মাশরুম চাষের জন্য আলাদা করে জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়িতেই মাশরুম চাষ করা যায়। আমরা যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দিচ্ছি। এই এলাকায় সাইফুলের দেখা দেখি ৩০জন কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়ে মাশরুম চাষ করছেন।”

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুপালী খাতুন বলেন, “আমরা মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সাইফুল ইসলামকে চাষি প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ দেই। পাশাপাুিশ তাকে একটি মাশরুমের প্রদর্শনী প্রদান করি। যার মাধ্যমে তিনি বানিজ্যিকভাবে মাশরুম উৎপাদন করছেন। তিনি ইতোমধ্যে শহরে একটি সেল্স সেন্টারের মাধ্যমে মাশরুম বিক্রি করছেন। তিনি মাশরুমের বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করে বিক্রি করছেন।”

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, “মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। এটি চাষাবাদ খুবই লাভজনক। আমরা এর চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী প্রদান করছি। বাজারজাতকরণে সার্বিক সহযোগিতা করছি এবং মাশরুম উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে বিতরণ করছি। যার মাধ্যে নতুন কৃষি উদ্যোক্তা ও চাষীরা এ মাশরুম চাষ করে বেশ সফল হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার সাইফুল আমাদের একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি আমাদের সহযোগিতায় মাশরুম উৎপাদন করছেন।”

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত ফসল উদ য ক ত ট কসই ক ষ উদ য ক ত আম র এ ন করছ করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কাঠামো, ব্যয় বাড়ছে সব খাতে

চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কাঠামো কার্যকর হচ্ছে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে। গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে বিভিন্ন সেবার খরচ। নতুন মাশুল হার অনুযায়ী, প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারে গড়ে ৩৯ ডলার বা প্রায় ৪ হাজার ৪০০ টাকা বেশি দিতে হবে। প্রতি বক্স কনটেইনারে সর্বোচ্চ বাড়তি খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৬০ ডলার পর্যন্ত।

বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিটি কনটেইনার (২০ ফুট লম্বা) থেকে গড়ে মাশুল আদায় করে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। নতুন মাশুল কার্যকর হলে কনটেইনারপ্রতি বাড়তি দিতে হবে গড়ে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। সব মিলিয়ে কনটেইনারপ্রতি গড়ে মাশুল দিতে হবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কনটেইনারে মাশুল বাড়ছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।

শিপিং কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে। ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক কনটেইনার লাইন তাদের টার্মিনাল হ্যান্ডলিং চার্জ ২০ ফুট কনটেইনারে ১২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৬৫ ডলার করেছে। ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে এই চার্জ ২০৫ থেকে ৩১০ ডলার হয়েছে। একইভাবে সিএমএ সিজিএম, সিএনসি ও এএনএলও ২৬ অক্টোবর থেকে প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারে ৪৫ ডলার বাড়তি সারচার্জ আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মাশুল বৃদ্ধির ফলে প্রতিটি কনটেইনারে মোট খরচ দাঁড়াবে গড়ে ১৮৬ ডলার।

মাশুল বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কনটেইনার পণ্যে। খোলা বা বস্তাবন্দি পণ্যে তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব পড়বে। তেল, চিনি, গম, ইস্পাত, সিরামিকসহ উৎপাদনমুখী শিল্প খাত এবং ভোগ্যপণ্যের দামে চাপ পড়ার আশঙ্কা আছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন পর বিভিন্ন সেবার মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এতে উন্নত অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

তবে, ব্যবসা সংগঠনগুলো বলছে, এই বাড়তি ব্যয় সরাসরি পণ্যের দামের ওপর প্রভাব ফেলবে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ