অ্যালার্ম বন্ধ করে শাহেদ ঘুমিয়ে পড়ে
Published: 14th, October 2025 GMT
একদিন বেলা ১১টার দিকে কেউ একজন শাহেদের ঘরের দরজায় টোকা দেয়। দরজা খুলে সে দেখে বাড়িওয়ালার ছোট ভাই, সঙ্গে দুজন পুলিশ। খালি গায়ে, হাফপ্যান্ট পরে ঘুমচোখে পুলিশসহ তিন-চারজন মানুষ দেখে শাহেদ কিছুটা অবাক হয়। ঝটপট একটি টি-শার্ট নিয়ে গায়ে দেয়।
আগত তিন ব্যক্তিকে বসার জন্য নিজের অগোছালো ঘরে না ডেকে পাশে খোলা ছাদে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় শাহেদ। পুরোনো ধাঁচের রেলিংঘেরা সুন্দর ছাদটিতে যেতে না-যেতেই এক পুলিশ জিজ্ঞেস করে, বাসায় কি নেংটা হয়ে থাকেন? কালক্ষেপণ না করে আরেক পুলিশ বলে, আজকাল রাস্তাঘাটে মেয়েরা যেভাবে বের হয়! আমার তো মনে হয়, বাসায় সবাই জন্মদিনের পোশাকেই থাকে! (হে হে হে)
হতভম্ব শাহেদ কিছু বলার আগেই পুলিশ বলে, প্যান্ট পরেন। থানায় যেতে হবে।
শাহেদ দু-এক কথা বলতে চেষ্টা করে.
বাড়িওয়ালার ছোট ভাই বলে, ভাই যান। এত তক্কের কী আছে! কারণ আছে বলেই তো পুলিশ ডাকতাছে। যান, থানা গিয়ে ফয়সালা করেন।
প্যাকেটে ওই দম্পতির কিছু অন্তরঙ্গ রঙিন ছবির প্রিন্ট ছিল। আর ছিল কিছু ছায়াচিত্র—যার কোনোটিতে ছায়ামূর্তির হাঁটার ভঙ্গি, কোনোটিতে জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে, বসে বা বিছানায় শুয়ে থাকার আকৃতি। সঙ্গে একটি ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস দেওয়া ছিল।আজিমপুরের গোর-ই-শহিদ মাজার থেকে একটু ভেতরের এই পাঁচতলার ছাদের চিলেকোঠা থেকে নামতে নামতে শাহেদের কয়েক দিন আগের একটি খবরের কথা মনে পড়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই খবরটি ছিল এমন: সকালে অফিসে যাওয়ার পথে বনানীতে এক দম্পতির গাড়ির গতি রোধ করে দুই যুবক একটি প্যাকেট ছুড়ে দিয়ে মুহূর্তে ছিটকে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা প্রথমে কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। গাড়ি স্লো করে। তবে দ্রুত স্নায়ুচাপ সামলে নিয়ে ছেলেটি গাড়ি না থামিয়ে চালাতে থাকে। মেয়েটি প্রাথমিক দ্বিধার পর বরকে মাস্ক পরতে বলে, নিজেও মাস্ক পরে টিস্যু পেঁচিয়ে ধরে প্যাকেটটি খোলে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে ওঠে, ‘What the f—?! Stop the f—ing car!’
প্যাকেটে ওই দম্পতির কিছু অন্তরঙ্গ রঙিন ছবির প্রিন্ট ছিল। আর ছিল কিছু ছায়াচিত্র—যার কোনোটিতে ছায়ামূর্তির হাঁটার ভঙ্গি, কোনোটিতে জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে, বসে বা বিছানায় শুয়ে থাকার আকৃতি। সঙ্গে একটি ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস দেওয়া ছিল। সেটিতে ঢুকতেই তারা একই ধরনের আরও অনেকগুলো সিলুয়েট দেখতে পেল। কয়েকটি ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপও ছিল, যাতে একক ও দ্বৈত ছায়ামূর্তির নানা ভঙ্গির নড়াচড়া দেখা গেছে। আসবাবের অবয়ব ও সাজিয়ে রাখার ধরনের সঙ্গে নিজেদের শোবারঘরের সাদৃশ্য দেখে তারা দুজনে চোখে শর্ষে ফুল দেখতে শুরু করে।
ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম সেন্সরের অগ্রগতি হলে আবদ্ধ ঘরের অভ্যন্তরের বা মাটির গভীরের সুড়ঙ্গের স্পষ্ট ছবিও বাইরে থেকে অনায়াসে ধারণ করা যাবে।কয়েক দিন আগে ফেসবুকে একজন লিখেছে, টেলিগ্রামে বিভিন্নজনের কাছে লিংকের সঙ্গে একটি এসএমএস এসেছে। বলা হয়েছে: ‘এই লিংকে আপনার ছবি দেখা গেছে।’ কিন্তু বেশির ভাগই লিংকে ঢুকতে পারেননি। যাঁরা ঢুকতে পেরেছেন, তাঁদের মোবাইল হ্যাকড হয়েছে, কিংবা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
ছাগলনাইয়া, খুরুশকুল, সালথাসহ দেশের আরও অনেক জায়গা থেকে একই ধরনের খবর শোনা গেছে। অনেকের ফেসবুক, মোবাইল, টেলিগ্রাম, ই-মেইল বা লিংকডইনেও এ ধরনের লিংক এসেছে। বেশির ভাগ লিংকে ঢোকা যায়নি। যাঁরা ঢুকতে পেরেছেন, তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, লিংকে যেসব ছায়ামূর্তি বা ভৌতিক ছবি ও ভিডিও তাঁরা দেখেছেন, সেগুলো তাঁদের নিজেদের ঘরের মতো মনে হয়েছে।
দরজা-জানালা আবদ্ধ বা পর্দা ঝোলানো ঘরের ভেতরের এসব ইমেজ ও ভিডিও কী উপায়ে ধারণ করা হচ্ছে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে—তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। এসব ছায়ামূর্তি কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি, নাকি আসল?
এসব প্রশ্ন নিয়ে শাহেদ অনেক ভেবেছে। খোঁজখবর নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরজা-জানালা বন্ধ অন্ধকার ঘরের এসব তাপচিত্র বা রে-মূর্তি ভুয়া হতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম সেন্সরের অগ্রগতি হলে আবদ্ধ ঘরের অভ্যন্তরের বা মাটির গভীরের সুড়ঙ্গের স্পষ্ট ছবিও বাইরে থেকে অনায়াসে ধারণ করা যাবে। তখন এসব ‘অতিব্যক্তিগত’ পরিসরের ভিডিও আরও সহজলভ্য হবে হয়তো।
এসব সাতপাঁচের ঘোরে মোবাইলের অ্যালার্মে শাহেদের ঘুম ভাঙে। সে হাত বাড়িয়ে অ্যালার্ম বন্ধ করে পাশ ফিরে আবার অঘোর ঘুমে তলিয়ে যায়...
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাদেশের দাবিতে বিক্ষোভ, ঢাকা কলেজে শিক্ষককে হেনস্তা, কাল শিক্ষা ক্যাডারের কর্মবিরতি
ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি করা নিয়ে জটিলতা আরও বাড়ছে। এ নিয়ে আন্দোলন এখন সহিংসতার দিকে গড়াচ্ছে। আজ সোমবার ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীকে মারধর ও একজন শিক্ষককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসা ও অন্যান্য অফিসে দিনব্যাপী সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আজ রাজধানীর শিক্ষা ভবনসংলগ্ন রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ওই সাত কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী। এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। সচিবালয় অভিমুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ কারণে ওই পথ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে ছয় হাজারের বেশি মতামত পাওয়া গেছে। এগুলো সংকলন ও বিশ্লেষণের কাজ চলছে। এরপর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অংশীজনের সঙ্গে শিগগির ধারাবাহিক পরামর্শ সভা করা হবে।
২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই সংকট ছিল। সরকারি এসব কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই কলেজগুলোকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত করার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন এসব কলেজ একীভূত করে সরকার নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। সাতটি কলেজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকেন্দ্র (একাডেমিক ক্যাম্পাস)। একেক ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা বিষয়ে (ডিসিপ্লিন) পড়ানো হবে। বিষয়ও কমে যাবে। প্রস্তাবিত এই কাঠামো নিয়ে ওই সব কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বেশ কিছুদিন ধরেই পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন করছেন।
কলেজগুলোর উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের অনেকেই প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না। এ জন্য তাঁরা খসড়া অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই অবস্থায় আছেন বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ছাত্রীদের অনেকেই।
আর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি দ্রুত করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, তাঁরা ‘মার্চ ফর অর্ডিন্যান্স’ কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে দাবিতে আজ বেলা ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনসংলগ্ন সড়কে জমায়েত হন। কয়েক শ শিক্ষার্থী সেখানে অংশ নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারির দাবিতে মিছিল করেন ও স্লোগান দেন।
এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে তাঁরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়াও প্রকাশ করে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। এখন তাঁরা চান, দ্রুতই অধ্যাদেশ প্রকাশ করা হোক। কারণ, তাঁরা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও নেই, আবার নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও নেই। এতে পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে।
শিক্ষক হেনস্তা, উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীকে মারধর, কর্মবিরতির ঘোষণা
এদিকে ঢাকা কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বিলুপ্তির আশঙ্কায় কলেজটির উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে অভিযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। আবার স্নাতক-স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের আরেকাংশ শিক্ষা ভবনের সামনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ নিয়ে শিক্ষকেরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। একপর্যায়ে ইতিহাস বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপককে হেনস্তা ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কিছু ছাত্রকেও মারধর এবং কলেজের শিক্ষক লাউঞ্জ ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন শিক্ষকেরা। তাঁরা ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন শিক্ষকেরা।
পরে সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সহকর্মীদের জানানো হয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সব কর্মকর্তাকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ ও সদস্যসচিব মো. মাসুদ রানা খান।