ইয়াংওয়ান করপোরেশন পেল ডব্লিউসিডি ভিশনারি অ্যাওয়ার্ডস
Published: 14th, October 2025 GMT
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নারী পরিচালকদের নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ওমেন করপোরেট ডিরেক্টরসের (ডব্লিউসিডি) ভিশনারি অ্যাওয়ার্ড সম্মাননা পেয়েছে কোরিয়ার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশন। এক বিজ্ঞপ্তিতে ইয়াংওয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারী নেতৃত্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থানে অবদানের জন্য ‘ইমার্জিং লিডারশিপ’ বিভাগে এ সম্মাননা পেয়েছে ইয়াংওয়ান করপোরেশন। প্রথম কোরিয়ান কোম্পানি হিসেবে ইয়াংওয়ান ডব্লিউসিডির এ সম্মাননা পেয়েছে। ৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা গ্রহণ করেন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। বাংলাদেশেও ইয়াংওয়ানের কার্যক্রম রয়েছে। ১৯৮০-র দশকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে ইয়াংওয়ান।
বিশ্বের বৃহত্তম নারী করপোরেট পরিচালকদের সংগঠন বা নেটওয়ার্ক ডব্লিউসিডি এ বছর তাদের যাত্রা শুরুর ২৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে। সংগঠনটিতে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৭০০ জন নারী বোর্ড সদস্য বা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী, নির্বাহী ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ যুক্ত রয়েছেন। এটির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, করপোরেট সুশাসনের উন্নয়ন ও টেকসই নেতৃত্ব প্রসারে কাজ করে।
প্রতিবছর ডব্লিউসিডি ভিশনারি অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে এই অ্যাওয়ার্ডসের জন্য নির্বাচিত করা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান করপোরেট সুশাসন, বৈচিত্র্য ও টেকসই নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
প্রথম কোরিয়ান কোম্পানি হিসেবে এই সম্মাননা গ্রহণকালে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং বলেন, ‘এই সম্মাননা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সব নারী কর্মীর জন্য একটি স্বীকৃতি। নারীদের সমান সুযোগই আমাদের প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। আমরা এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ই সমানভাবে সম্মানিত ও ক্ষমতায়িত হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে ইয়াংওয়ান জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি মানুষকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির কোরিয়ান সদর দপ্তরে প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মী নারী। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে (বিভাগীয় প্রধান বা তার ঊর্ধ্বে) নারী কর্মী প্রায় ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া নারী কর্মীদের গড় চাকরির মেয়াদ পুরুষ কর্মীদের তুলনায় প্রায় দেড় বছর বেশি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করপ র ট প
এছাড়াও পড়ুন:
ইলুমিনাতি স্যাটানিজম বা শয়তানবাদ সম্পর্কে কতটুকু জানেন?
প্রায় ২৪৮ বছর আগে ‘ইলুমিনাতি’ নামে একটি গোপন ‘বাস্তব সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই একই নাম ছিল একটি কাল্পনিক সমাজেরও। অনেকেই মনে করেন এই রহস্যময় বৈশ্বিক সংস্থা, পুরো বিশ্ব দখল করারে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই বিশ্বের বড় বড় বিপ্লব এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।
দ্য অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি হলো ব্যাভারিয়াতে (বর্তমান আধুনিক জার্মানির অংশ) প্রতিষ্ঠিত একটি গোপন সমাজ। যেটার ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৭৭৬ থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত। এই সমাজের সদস্যরা নিজেদেরকে 'পারফেকশনিস্ট' বা ‘নিখুঁত’ বলে পরিচয় দিতো।
আরো পড়ুন:
সর্বাত্মক ফ্যাসিবাদ কায়েম হয় ২০১৪ সন থেকে: সলিমুল্লাহ খান
রাশিয়ায় যুদ্ধে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল, পরিবার জানল ৭ মাস পর
ইলুমিনাতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আইনের অধ্যাপক অ্যাডাম উইসাপট। তিনি ইউরোপে রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন, সরকারের উপর ধর্মের প্রভাব অপসারণ করতে এবং জনগণকে ‘আলোর নতুন পথ’ দেখাতে চেয়েছিলেন।
সংগঠনটি পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছিলো। তারা ১৭৭৬ সালের পহেলা মে ইঙ্গলস্ট্যাড শহরের কাছে একটি জঙ্গলে প্রথম বৈঠক করে। তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে চায়, সেইসাথে রাজতন্ত্র ও চার্চের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাব কীভাবে ব্যাহত করা যায়, তার ওপর মনোযোগ দিতে চায়। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। তারা আরও সদস্য বাড়ানোর জন্য ফ্রিম্যাসন সোসাইটিতে যোগ দেয়।ফ্রিম্যাসন সোসাইটি হলো শুধুমাত্র পুরুষদের নিয়ে গঠিত একটি প্রাচীন গোপন সমাজ।
কেউ যদি ইলুমিনাতিতে যোগ দিতে চায়, তাহলে তার সেই সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের অনুমতি এক কথায় সর্বসম্মত অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।একই সঙ্গে অঢেল সম্পদ থাকতে হয় এবং খ্যাতিমান হতে হয়।
ইলুমিনাতিরা কী ধরণের আচার-অনুষ্ঠান পালন করে তার বেশিরভাগই জানা যায় না। সামান্য যেটুকু জানা যায় তাহলো— তাদের ছদ্মনাম থাকে। অনেকেই বিশ্বাস করে যে ইলুমিনাতি বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, মূল ইলুমিনাতি সংগঠনের প্রভাব বেশ সীমিত। রা কেবলমাত্র মধ্যপন্থী হতে পেরেছিল।
ইলুমিনাতি গ্রুপের বিখ্যাত সদস্য কারা ছিলেন?
১৭৮২ সালের মধ্যে, ইলুমিনাতি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৬০০ জনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তাদের মধ্যে একজন হলেন ব্যারন অ্যাডলফ ভন নিগে, তিনি জার্মান সমাজের অভিজাতদের মধ্যে একজন বলে মনে করা হয়।তিনি এর আগে ফ্রিম্যাসন সমাজের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সাবেক ফ্রিম্যাসন হিসেবে, ইলুমিনাতিকে সংগঠিত ও প্রসারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন।
প্রাথমিকভাবে, শুধুমাত্র অ্যাডাম উইসাপটের ছাত্ররা ইলুমিনাতির সদস্য ছিলেন, কিন্তু শিগগিরই ডাক্তার, আইনজীবী এবং সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এই দলে যোগ দেন।
বলা হয় যে ১৭৮৪ সালের মধ্যে ইলুমিনাতির সদস্য দুই থেকে তিন হাজারের মত হয়ে যায়। কিছু সূত্র দাবি করেছে যে বিখ্যাত লেখক ইয়োহান ওয়ালফগ্যাং ফন গুঠাও এই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন, তবে এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইলুমিনাতির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে কখন?
১৭৮৪ সালে, ব্যাভারিয়ার শাসক (ডিউক) কার্ল থিওডর আইন দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন কোনও কর্পোরেশন বা সমাজ তৈরি করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরের বছর তিনি দ্বিতীয় আদেশ পাস করেন, যেখানে স্পষ্টভাবে ইলুমিনাতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ওই সময় ইলুমিনাতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সেখানকার সদস্যদের গ্রেফতার করা হতো, তখন বেশ কিছু নথি পাওয়া যায়, যেখানে নাস্তিক্যবাদ এবং আত্মহত্যার মত ধারনাকে সমর্থন করা হয়েছিল। সেইসাথে গর্ভপাত করার নির্দেশনাও পাওয়া যায়।
এসব নথিপত্র থেকে তৎকালীন শাসকদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে যে এই সংগঠনটি রাষ্ট্র এবং চার্চ উভয়ের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারপর থেকে, অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি সাধারণ মানুষের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। যদিও অনেকের ধারণা যে তারা গোপনে গোপনে ঠিকই সংগঠন টিকিয়ে রেখেছে।
অ্যাডাম উইসাপটের পরিণতি কী?
অ্যাডাম উইসাপট ইউনিভার্সিটি অফ ইঙ্গলস্টাডের সাথে যুক্ত থাকলেও পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিলো। এরপর তিনি ব্যাভারিয়া থেকেও নির্বাসিত হন। পরে জার্মানির গোথা শহরে তিনি জীবনের বাকি দিনগুলো কাটান। এই শহরেই ১৮৩০ সালে মারা যান অ্যাডাম।
১৭৯৭ সালে, ফরাসি ধর্মযাজক অ্যাবে অগাস্টিন বোরেলের ধারণা যে ‘অর্ডার অফ দ্য ইলুমিনাতি’র মত গোপন সমাজ ফরাসি বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছে।
কেন আজও মানুষ ইলুমিনাতিতে বিশ্বাস করে?
ইলুমিনাতি বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, এই ধারণাটি মানুষের মন থেকে সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে যায়নি বরং এটি পপুলার কালচারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের পিছনে ইলুমিনাতির ভূমিকা ছিল বলে দাবি করে ডিসকর্ডিয়ানিজমের কিছু অনুসারী। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন জার্নালে জাল চিঠিও পাঠায়।
সাহিত্যে নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে
ইলুমিনাতি সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস ও ধারণা থেকে সাহিত্যে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। উইলসন পরে রবার্ট শিয়াকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন, যার নাম ‘দ্য ইলুমিনাতি ট্রায়োলজি’। বইটি বিশ্বে ভীষণ জনপ্রিয় হয় এবং এর সর্বাধিক কপি বিক্রি হয়। ড্যান ব্রাউনের উপন্যাস ‘এঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস’ যা নিয়ে পরে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এটি ওই কথাসাহিত্যের নতুন ধারায় অনুপ্রাণিত সৃষ্টি।
ইলুমিনাতি স্যাটানিজম বা শয়তানবাদ ধীরে ধীরে অন্যান্য আদর্শের সাথেও যুক্ত ছিল। এর ফলে সংগঠনটি ১৮ শতকের মূল ব্যাভারিয়ান গোষ্ঠীদের থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল।
সূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি