সচেতনতা ও স্ক্রিনিং বাড়লেই ক্যানসার সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
Published: 15th, October 2025 GMT
স্তন ক্যানসার হলো টিস্যু থেকে সৃষ্ট একধরনের ম্যালিগন্যান্সি, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে। যেহেতু এটি ব্রেস্ট টিস্যু থেকেই তৈরি হয়, তাই একে ব্রেস্ট ক্যানসার বলা হয়। সচেতনতা ও স্ক্রিনিং বাড়ানো হলে ক্যানসার সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
কথাগুলো বলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা.
অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস। এ উপলক্ষে রোববার (১২ অক্টোবর) এসকেএফ অনকোলজির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান। তিনি বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, রোগনির্ণয়, ডায়াগনসিস ও চিকিৎসা–সুবিধা বিষয়ে কথা বলেন। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
শুরুতেই উপস্থাপক জানান, স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস উদ্যোগটির সূচনা হয় ১৯৮৫ সালে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি ও কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির যৌথ প্রচেষ্টায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং ম্যামোগ্রামের মতো প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা। সেই সময় থেকেই ‘পিংক রিবন’ প্রতীকটি হয়ে ওঠে আশা, সচেতনতা ও লড়াইয়ের প্রতীক, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতার এক অনন্য প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত।
এরপর উপস্থাপক জানতে চান স্তন ক্যানসারের ধরন সম্পর্কে?
উত্তরে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, ব্রেস্ট ক্যানসারের ধরন নির্ভর করে ‘হিস্টোপ্যাথলজি’ ও ‘হরমোনাল স্ট্যাটাসের’ ওপর। যেমন হরমোন রিসেপ্টর পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যানসার (ইস্ট্রোজেন বা প্রজেস্টেরন রিসেপ্টর পজিটিভ থাকে), হারটু পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যানসার (হরমোন রিসেপ্টর নেগেটিভ হলেও হারটু নামক উপাদান পজিটিভ হয়), ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যানসার (ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন ও হারটু—তিনটিই নেগেটিভ থাকে) এবং ট্রিপল পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যানসার (তিনটি রিসেপ্টরই পজিটিভ থাকে)।
এ পর্যায়ে উপস্থাপক জিজ্ঞাসা করেন, উন্নত দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার শনাক্ত হলেও কিন্তু আমাদের দেশে দেরিতে কেন?
এ বিষয়ে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, ‘আমাদের দেশে সচেতনতার অভাবই প্রধান কারণ। অনেকেই “সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন” করেন না। তাই প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথা না থাকায় বিষয়টি অলক্ষ্যেই থেকে যায়। ফলে বেশির ভাগ রোগী স্টেজ থ্রি বা স্টেজ ফোর অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে যান।’
সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন শুরুর সঠিক সময় প্রসঙ্গে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর থেকে মাসে একবার সেলফ এক্সামিনেশন করা উচিত। যাঁদের পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁরা আক্রান্ত সদস্যের বয়স থেকে ১০ বছর আগে স্ক্রিনিং শুরু করবেন। গোসলের সময় প্রতি মাসে নিজের স্তনে কোনো চাকা বা অস্বাভাবিক গঠন আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে।
উপস্থাপক ম্যামোগ্রাম ও এটির সময় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, ম্যামোগ্রাম একটি ‘ডায়াগনস্টিক স্ক্রিনিং টুল’। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। এটি ক্যানসার শনাক্তে যথেষ্ট সংবেদনশীল ও নির্ভরযোগ্য।
এরপর বায়োপসির প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, বায়োপসি হলো ক্যানসার নিশ্চিত করার একমাত্র পরীক্ষা। সন্দেহজনক টিস্যুর নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করে দেখা হয়, সেখানে ‘ম্যালিগন্যান্ট সেল’ আছে কি না।
স্টেজ অনুযায়ী চিকিৎসা কীভাবে ভিন্ন হয়? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যানসারের স্টেজ ও হরমোনাল স্ট্যাটাসের ওপর। মূল চিকিৎসাগুলো হলো সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি। তবে প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসার পরিকল্পনা আলাদা হয়ে থাকে।
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ সম্পর্কে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, খরচ নির্ভর করে কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার ওপর। সাধারণত আলট্রাসনোগ্রাম ১ থেকে ২ হাজার টাকা, বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা, সিটি স্ক্যান ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, কেমোথেরাপি ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বেশি, সার্জারি ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ও রেডিওথেরাপির খরচ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কেমোথেরাপির সময় চুল পড়ে গেলে কী করা উচিত? জানতে চাইলে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, চুল পড়া কেমোথেরাপির সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ঠান্ডা পানি বা বরফ দিয়ে মাথা ঠান্ডা রাখলে চুল পড়া কিছুটা কমে। চিকিৎসা শেষে আবার চুল নতুন করে গজায়, এটা সাময়িক পরিবর্তন মাত্র।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, রোগনির্ণয়, ডায়াগনসিস ও চিকিৎসা–সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন খানউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুবিতে আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা উদ্বোধন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) বাংলা বিভাগ বনাম ইংরেজি বিভাগের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা- ২০২৫ উদ্বোধন করা হয়েছে। ম্যাচে ইংরেজি বিভাগকে ৪- ১ গোলে হারিয়ে বাংলা বিভাগ জয়লাভ করে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী।
আরো পড়ুন:
হংকংয়ের মাঠ থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফিরল বাংলাদেশ
পেনাল্টি গোলে প্রথমার্ধে পিছিয়ে বাংলাদেশ
ক্রীড়া পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “খেলোয়াড় সুলভ আচরণের মাধ্যমেই খেলা সম্পন্ন হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সুষ্ঠুভাবে খেলা সম্পন্ন হবে বলে আমি আশাবাদী। এছাড়া প্রশিক্ষকের মাধ্যমে বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের দল গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে।”
ক্রীড়া পরিচালনা কমিটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, “খেলাধুলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীরা ভালো খেলবে, ভালো খেলা দেখবে। খেলাধুলার মাধ্যমে খেলোয়াড়দের মন হয় বড়, মানসিকতা হয় উন্নত। আর সেই মনোভাব যেন মাঠে প্রতিফলিত হয়।”
তিনি বলেন, “সৌহার্দ্যের জন্য খেলা, বন্ধুত্বের জন্য খেলা, বিরোধিতার জন্য নয়। খেলোয়াড়দের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা সুস্থ ও সুন্দরভাবে খেলা সম্পন্ন করে এবং মাঠে রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে খেলা চালিয়ে যায়।”
এবারের টুর্নামেন্টে ১৯টি বিভাগ অংশগ্রহণ করেছে। আগামী ২৯ অক্টোবর ফাইনাল খেলার মধ্য দিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী