সনদে সই করব কি না অনুষ্ঠানে গেলে দেখতে পারবেন: তাহের
Published: 15th, October 2025 GMT
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তাঁরা দাওয়াত পেয়েছেন এবং আশা করছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। সনদে সই করবেন কি না, সেটা অনুষ্ঠানের দিন সবাই দেখতে পারবেন।
আজ বুধবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অতি জরুরি বৈঠক শেষে বের হয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
সনদে স্বাক্ষর করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘১৭ তারিখে (শুক্রবার) আমরা আশা করি, যাব। মাত্র এক দিন বাকি আছে, ওই দিন গেলেই ইনশা আল্লাহ দেখে ফেলবেন।’ কোনো অনিশ্চয়তা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে রকম অনিশ্চয়তা আমরা দেখি না।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণভোট আগে হতে হবে। তারা নভেম্বর মাসে গণভোটের প্রস্তাব করেছে। নভেম্বরে গণভোট হলে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, এটা তারা চায়।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে তাতে ভোট পড়ার হার কম হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলের কর্মী–সমর্থকরা তাঁদের পছন্দের মার্কায় ভোট দিতে বেশি আগ্রহী থাকবেন। তখন গণভোটের গুরুত্বই থাকবে না। সে জন্য তাঁরা গণভোট নভেম্বরে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশনকে তাঁরা বলেছেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেগুলো একটি প্যাকেজ করে একটি প্যাকেজেই গণভোট হতে হবে।
গণভোটের জন্য রাজি হওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান জামায়াতে ইসলামীর ওই নেতা। তবে গণভোটের সময় নিয়ে ভিন্নতা থেকে গেছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, গণভোট হবে সংস্কার কমিশনের জন্য। জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়। গণভোটের এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো নির্বাচনী আচরণে কিছু পরিবর্তন আনবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, উচ্চকক্ষ এবং ‘পিআর সিস্টেম বাই ভোটার নট বাই দি এমপিস’ এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচনের আগেই এই সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সেই অনুযায়ী উচ্চকক্ষের ভোট হবে। যদি এটা নির্বাচনের দিনই হয়, তাহলে উচ্চকক্ষ তো পাস হলো না। তাহলে কি আবার একটা নির্বাচন হবে?
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ আজ দলগুলোকে দেবে ঐকমত্য কমিশন
জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি আজ মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে সনদে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কোনো সুপারিশ থাকছে না। এ-সংক্রান্ত সুপারিশ পরে অন্তর্বর্তী সরকার ও দলগুলোর কাছে দেবে ঐকমত্য কমিশন। এটি জুলাই সনদের অংশ হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের (সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন) সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দুই পর্বের আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ।
আগামী শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এই আয়োজনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সহায়তা করছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রায় তিন হাজার অতিথিকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা আছে কমিশনের।
সনদে সই করার জন্য ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আগেই কমিশন দলগুলোর কাছ থেকে দুজন করে স্বাক্ষরকারীর নাম চেয়েছিল। ইতিমধ্যে ৩০টি দল ও জোট দুজন করে স্বাক্ষরকারীর নাম কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে। তবে সব দল শেষ পর্যন্ত সনদে সই করবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
কমিশন সূত্র জানায়, সনদের বিষয়ে আর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে না। এর আগে (গত ১১ সেপ্টেম্বর) যে খসড়া পাঠানো হয়েছিল, মূলত সেটি চূড়ান্ত আকারে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে মূল বিষয়বস্তুর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, কিছু ভাষাগত সংশোধন থাকছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শনসংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ক বিলুপ্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। প্রায় সব কটি দল এর পক্ষে মত দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত সনদে এটি নতুন করে উল্লেখ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।
জুলাই জাতীয় সনদের তিনটি ভাগ আছে। প্রথম ভাগে আছে সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয় ভাগে আছে সনদ বাস্তবায়নের ৭ দফা অঙ্গীকারনামা।
গত জুলাই মাসে জুলাই জাতীয় সনদ সই করার লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এত দিন সনদ আটকে ছিল। তবে কমিশন আগেই জানিয়েছিল, বাস্তবায়নের পদ্ধতি সনদের অংশ হবে না। যদিও এখন পর্যন্ত এই সুপারিশ চূড়ান্ত হয়নি।
গত ৩১ জুলাই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। ৯ অক্টোবর এই আলোচনা শেষ হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতভিন্নতা আছে।
৯ অক্টোবর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কমিশন জানিয়েছিল, বিশেষজ্ঞ ও দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে। এরপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতপার্থক্য কমাতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণভোটের ভিত্তি কী হবে, গণভোট কি সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে নাকি আগে, গণভোটে কী কী প্রশ্ন থাকবে—এসব বিষয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা এখনো কাটেনি। সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ আগামী শুক্রবারের মধ্যে চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে কি না, সেটা নিয়ে আলোচনা আছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই সনদের অনুলিপি মঙ্গলবার দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। কমিশন আশা করছে, এর মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দেওয়া সম্ভব হবে।