যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 15th, October 2025 GMT
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে তাহিরপুর থানায় ৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার মামলাটি করেছেন উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও (পুরান ঘাট) গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন আরিফ তালুকদার নামের এক ব্যক্তি।
মামলার বিষয়টি তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী আরিফ নদীর যাদুকাটা-১ বালুমহালের ইজারাদার মো.
মামলার এজাহারে থাকা আসামিদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে বাসিন্দাদের ভাষ্য, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বিএনপির স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর নামও আলোচনায় আছে। কিন্তু মামলার আসামির তালিকায় তাঁদের নাম দেখা যায়নি।
ওসি দেলোয়ার হোসেন মঙ্গলবার বিকেলে নদীতীরের লাউড়েরগড় এলাকায় যাদুকাটা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তলন ও লুট নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে ওসি বালু লুটের হোতা হিসেবে লাউড়েরগড় গ্রামের বাসিন্দা লাউড়েরগড় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল কাইয়ুম ওরফে খেলু মাস্টার ও একই গ্রামের খাজা মাইনুদ্দিনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। এই দুজনকে নদীর তীরে পেলেই গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন ওসি। মামলায় এই দুজনকেও আসামি করা হয়েছে।
খাজা মাইনুদ্দিন স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। আবদুল কাইয়ুম স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তবে আবদুল কাইয়ুম তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ৯ অক্টোবর ভোর ৫টা থেকে ১১ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত আসামিরা নৌকা, বাল্কহেড ইত্যাদি নিয়ে নদীতে জড়ো হন। পরে নদীর ইজারা সীমানার বাইরে লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পাড় থেকে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যান। তাঁদের বাধা দিলেও কোনো কাজ হয়নি। আসামিরা এখনো বালু তুলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
যাদুকাটা নদীর বালু উত্তোলন নিয়ে চলতি মাসের শুরু থেকেই অস্থিরতা চলছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ইজারাদার পক্ষের যোগসাজশ আছে বলেও অভিযোগ আছে। সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় দুটি বালুমহাল তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে অবস্থিত। মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় গত পাঁচ মাস এই দুটি বালুমহালে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকার পর চলতি মাস থেকে আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই নদীর সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় ইজারা সীমানার বাইরে গিয়ে একটি পক্ষ জোর করে বালু উত্তোলন করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ফলে আশপাশের গ্রামসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এ দুটি বালুমহাল এবার জেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়। কিন্তু মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় ইজারাদারকের মহাল বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। চলতি মাসে প্রশাসন ইজারাদারদের মহাল দুটি বুঝিয়ে দেয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রনের জন্য আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কেনার আহ্বান
ইউক্রেনের জন্য আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কিনতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। গত জুলাই ও আগস্টে ইউক্রেনে সামরিক সহযোগিতা অনেক কমে গেছে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ আহ্বান জানালেন তিনি।
গতকাল বুধবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে বৈঠকে বসার কথা জোটের সদস্যদেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের। সেই বৈঠকের আগে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনি তখনই শান্তিতে থাকতে পারবেন, যখন আপনি নিজে শক্তিশালী। শক্ত শক্ত কথা বললে অথবা আঙুল নাড়ালে নয়—শান্তি আসে তখনই, যখন আপনার এমন বাস্তব ও দৃঢ় সক্ষমতা থাকে, যেটা প্রতিপক্ষের শ্রদ্ধা আদায় করে।’
ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর গৃহীত কর্মসূচি পিইউআরএল-এ অর্থায়ন আরও বাড়াতে ন্যাটো মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেগসেথ। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা হলো আরও বেশি দেশ আরও বেশি করে এতে অর্থায়ন করুক। চলমান সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাইলে এটা করতে হবে।এতে ইউক্রেনকে দেওয়ার জন্য আরও বেশি অস্ত্র কিনতে পারবে তারা।’
প্রসঙ্গত, পিইউআরএল কর্মসূচিতে পশ্চিমা দেশগুলো যে অর্থ দেয়, সেই অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনে সেগুলো দেওয়া হয় ইউক্রেনকে।
ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তেও গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, পিইউআরএলের মাধ্যমে ইউক্রেনকে ২০০ কোটি ডলারের সহযোগিতা করবে এমন প্রতিশ্রুতি ইতিমধ্যে করেছে তারা। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রত্যাশার চেয়ে অর্থের পরিমাণ অনেকটাই কম। চলতি অক্টোবরের মধ্যে ৩৫০ কোটি ডলার অস্ত্র সহযোগিতা চেয়েছিলেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে গঠিত তহবিলে আরও অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা গতকাল জানিয়েছে সুইডেন, এস্তোনিয়া ও ফিনল্যান্ড। তবে কিয়েভকে সামরিক সহযোগিতা কমানোর কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালি। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন অস্ত্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ইউক্রেন। এদিকে আরেকটি শীতও আসছে। এখন পশ্চিমা সামরিক সহযোগিতা দেশটির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মানির অলাভজনক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান দ্য কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকনোমি। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, এই বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় জুলাই ও আগস্টে কিয়েভকে সামরিক সহায়তা কমেছে ৪৩ শতাংশ।