আসামি না হয়েও জুলাই হত্যা মামলায় কারাগারে প্রবাসী, পাচ্ছেন না জামিন
Published: 16th, October 2025 GMT
ফেনীতে জুলাই আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি না হয়েও প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে কারাবন্দী প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারী ওরফে সাদ্দাম। গত ১৬ জুন ফেনী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর জুলাই আন্দোলনের দুটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরিবারের দাবি, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেনের অনুসারী স্থানীয় এক ছাত্রদল কর্মীকে মোটরসাইকেল না দেওয়ায় প্রবাসী নজরুলকে আসামি বানিয়ে র্যাবকে ভুল তথ্য দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। দুটি হত্যাচেষ্টা মামলায় নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে রিয়াদ হিসেবে। অথচ প্রকৃত আসামি মো.
নিম্ন আদালতে একাধিকবার নজরুলের আইনজীবী বিষয়টি উত্থাপনের পরও জামিন হয়নি। পরে উচ্চ আদালতেও জামিনের আবেদন করেন তাঁরা। আদালত জামিনও দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতার কারণে স্থগিত হয় তাঁর জামিন।
সৌদিপ্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারীর বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবুল খায়ের মিন্টু হাজারী। অন্যদিকে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দুটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক মো. নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদের বাড়ি মধ্যম ধলিয়া গ্রামে। বাবার নাম আবুল খায়ের। স্বজনেরা বলছেন, রিয়াদের বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় নজরুলকে মামলার আসামি বানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুশেন চন্দ্র শীলের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি সৌদি আরব চলে যান বলে তাঁর পরিবারও স্বীকার করেছে। কিন্তু র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার নজরুলই রিয়াদ। এ নিয়ে কথা হয় নুরুল হুদার বোনের স্বামী আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তাঁর শ্যালক রিয়াদ সৌদি আরব চলে যান। বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন শত্রুতাবশত আমার শ্যালককে বৈষম্যবিরোধী হত্যাচেষ্টার দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তিনি ঘটনার সময় ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন না।
‘ছোট ভাই গ্রেপ্তারের পর আমরা আদালত, আইনজীবী ও পুলিশে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই কারাবন্দী ভাইকে মুক্ত করার কোনো উপায় মেলেনি। গত ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও ২৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করায় আমার ভাই মুক্তি পাননি।’ ফেরদৌস আরা, প্রবাসী নজরুলের বড় বোনযা আছে মামলার এজাহারে
যে দুই মামলায় নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তার একটির বাদী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের হাফেজ আহমদের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৪)। অপরটির বাদী ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের ছেলে আফসার হোসেন ওরফে মহিন (৩১)। তাঁরা দুজনই যুবদলের কর্মী বলে জেলা যুবদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন খন্দকার নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার বাদী মহিউদ্দিন ও আফসার হোসেন বর্তমানে যুবদলের কোনো পদ পদবিতে নেই। তবে তাঁরা যুবদলের কর্মী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিউদ্দিন ও আফসার দুজনই যুবদল নেতা জাকির হোসেন ওরফে জসিমের অনুসারী।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর মহিউদ্দিন বাদী হয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। ওই মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহিপাল এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন। এ সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে মহি উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ১৫৫ জনকে। এজাহারভুক্ত ১৪ নম্বর আসামির নাম রিয়াদ (৩৪)। যার বাবার নাম মৃত আবুল খায়ের, ঠিকানা মাধ্যম ধলিয়া, ফেনী সদর।
ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ। তাঁর নামে হওয়া হত্যা চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় নজরুলকেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হত য চ ষ ট য বদল র য বল গ প রব স উপজ ল আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও জুলাই হত্যা মামলায় কারাগারে প্রবাসী, পাচ্ছেন না জামিন
ফেনীতে জুলাই আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি না হয়েও প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে কারাবন্দী প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারী ওরফে সাদ্দাম। গত ১৬ জুন ফেনী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর জুলাই আন্দোলনের দুটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরিবারের দাবি, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেনের অনুসারী স্থানীয় এক ছাত্রদল কর্মীকে মোটরসাইকেল না দেওয়ায় প্রবাসী নজরুলকে আসামি বানিয়ে র্যাবকে ভুল তথ্য দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। দুটি হত্যাচেষ্টা মামলায় নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে রিয়াদ হিসেবে। অথচ প্রকৃত আসামি মো. নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক। তিনি বর্তমানে দেশে নেই। তাঁর বাবার নামের সঙ্গে নজরুলের বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে।
নিম্ন আদালতে একাধিকবার নজরুলের আইনজীবী বিষয়টি উত্থাপনের পরও জামিন হয়নি। পরে উচ্চ আদালতেও জামিনের আবেদন করেন তাঁরা। আদালত জামিনও দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতার কারণে স্থগিত হয় তাঁর জামিন।
সৌদিপ্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারীর বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবুল খায়ের মিন্টু হাজারী। অন্যদিকে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দুটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক মো. নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদের বাড়ি মধ্যম ধলিয়া গ্রামে। বাবার নাম আবুল খায়ের। স্বজনেরা বলছেন, রিয়াদের বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় নজরুলকে মামলার আসামি বানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুশেন চন্দ্র শীলের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি সৌদি আরব চলে যান বলে তাঁর পরিবারও স্বীকার করেছে। কিন্তু র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার নজরুলই রিয়াদ। এ নিয়ে কথা হয় নুরুল হুদার বোনের স্বামী আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তাঁর শ্যালক রিয়াদ সৌদি আরব চলে যান। বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন শত্রুতাবশত আমার শ্যালককে বৈষম্যবিরোধী হত্যাচেষ্টার দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তিনি ঘটনার সময় ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন না।
‘ছোট ভাই গ্রেপ্তারের পর আমরা আদালত, আইনজীবী ও পুলিশে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই কারাবন্দী ভাইকে মুক্ত করার কোনো উপায় মেলেনি। গত ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও ২৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করায় আমার ভাই মুক্তি পাননি।’ ফেরদৌস আরা, প্রবাসী নজরুলের বড় বোনযা আছে মামলার এজাহারে
যে দুই মামলায় নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তার একটির বাদী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের হাফেজ আহমদের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৪)। অপরটির বাদী ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের ছেলে আফসার হোসেন ওরফে মহিন (৩১)। তাঁরা দুজনই যুবদলের কর্মী বলে জেলা যুবদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন খন্দকার নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার বাদী মহিউদ্দিন ও আফসার হোসেন বর্তমানে যুবদলের কোনো পদ পদবিতে নেই। তবে তাঁরা যুবদলের কর্মী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিউদ্দিন ও আফসার দুজনই যুবদল নেতা জাকির হোসেন ওরফে জসিমের অনুসারী।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর মহিউদ্দিন বাদী হয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। ওই মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহিপাল এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন। এ সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে মহি উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ১৫৫ জনকে। এজাহারভুক্ত ১৪ নম্বর আসামির নাম রিয়াদ (৩৪)। যার বাবার নাম মৃত আবুল খায়ের, ঠিকানা মাধ্যম ধলিয়া, ফেনী সদর।
ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ। তাঁর নামে হওয়া হত্যা চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় নজরুলকে