বরিশালে জিপিএ–৫—এ এগিয়ে মেয়েরা, ১২ প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেননি
Published: 16th, October 2025 GMT
উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ৫৭। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬৭৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭৪ মেয়ে এবং ৪৫৭ জন ছেলে। পাসের হার ও জিপিএ-৫–এর দিক দিয়ে এবারও এগিয়ে মেয়েরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের হলরুমে ফলাফল ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো.
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ৫৯ হাজার ২৩৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ছাত্র ছিল ২৮ হাজার ৯৯৪ জন এবং ছাত্রী ৩২ হাজার ৪৮৭ জন। এ বছর মোট কলেজের সংখ্যা ৩৪৯টি। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৪৪টি কেন্দ্রে। এ বছর ১২টি কলেজে কেউ পাস করতে পারেননি।
অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল সন্তোষজনক। গত বছর পাসের হার বেশি থাকলেও এ বছর কম। তবে যাঁরা নিয়মিত পড়াশোনা করেছেন, তাঁরাই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করেছেন। যে ১২টি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল শ ক ষ পর ক ষ এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
রকিব হাসান, আমাদের শৈশবের নায়ক
ঝিম ধরে বসে আছি। ঝিম ধরে বসে থাকা আমার অভ্যাস নয়। সব সময় নড়াচড়া করা আমার অভ্যাস। কলেজের ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষার পর খানিকটা অলস সময় কাটাচ্ছি। অলসতা কাটাতে বাইরে যাওয়ার শার্ট গায়ে দিয়ে বের হয়ে পড়লাম। বইয়ের দোকানে গিয়ে বই দেখছি। নতুন কী কী বই এসেছে, তার সন্ধান করছি। সেবা প্রকাশনীর নতুন বই এসেছে। ‘তিমির প্রেম’। লিখেছেন রকিব হাসান। কিনে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম। একটানা পড়ে গেছি ‘তিমির প্রেম’। পড়া শেষ করে হু হু করে কেঁদে ফেলেছি। চুপচাপ বসে আছি। কান্না থামানোর চেষ্টা করছি। কান্না থামাতে পারছি না। শব্দ না করে কেঁদে যাচ্ছি।
সমুদ্রতীরের ছোট উপকূলীয় এলাকায় হঠাৎ এক বিশাল তিমি ভেসে এসেছে। সমুদ্র আর নদীর মোহনার খাঁড়িতে আটকে গেছে তিমি। সে অন্তঃসত্ত্বা। তার গর্ভে সন্তান আছে। খাঁড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে সেই বিশাল তিমি আর সমুদ্রে ফিরে যেতে পারছে না। খাঁড়ির বাইরে তার সঙ্গী তিমি অস্থির হয়ে গেছে। খাঁড়ির ভেতর তিমি দেখে গ্রামবাসী প্রথমে ভয় পেয়েছিল, পরে কৌতূহলী হয়ে উঠেছে। স্থানীয় একজন, যিনি প্রকৃতি আর প্রাণীদের ভালোবাসেন, তাদের প্রতি গভীর মমত্ব বোধ করেন, তিনি তিমিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু গ্রামের অন্যরা সেই তিমিকে ‘অভিশাপ’ বা ‘অলৌকিক প্রাণী’ ভেবে ভয়ানকভাবে আঘাত করে যাচ্ছে। বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে আটকে পড়া তিমি। মানুষ আর তিমির এই লড়াইয়ে ভেতর গড়ে উঠেছে এক নিঃশব্দ, করুণ সম্পর্ক—ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর অপরাধবোধের মিশেল। শেষ পর্যন্ত তিমি মারা গেছে, কিন্তু মানুষের মনে থেকে গেছে হাহাকারের মতো শূন্যতা, গহিন অপরাধবোধ আর প্রকৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
বইয়ের দোকানে গিয়ে বই দেখছি। নতুন কী কী বই এসেছে, তার সন্ধান করছি। সেবা প্রকাশনীর নতুন বই এসেছে। ‘তিমির প্রেম’। লিখেছেন রকিব হাসান। কিনে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম। একটানা পড়ে গেছি ‘তিমির প্রেম’। পড়া শেষ করে হু হু করে কেঁদে ফেলেছি। চুপচাপ বসে আছি। কান্না থামানোর চেষ্টা করছি। কান্না থামাতে পারছি না।আমার মেজ চাচা তখন জ্বরে ভুগছেন। পড়ার জন্য বই চাইলেন। চাচাকে ‘তিমির প্রেম’ পড়তে দিলাম। বই পড়ে চাচা কাঁদলেন। বললেন, অসুখে এমনিতেই দুর্বল হয়ে আছি। এমন বই দিয়েছিস, কাতর হয়ে গেলাম।
আমার কৈশোর পেরোনো সদ্য তরুণ মেজ চাচা পরিণত মানুষ। এক বই পড়ে দুজনই কাঁদছি। যার লেখা বই পড়ে কিশোর বয়সে বুকের ভেতর তীব্র আলোড়ন উঠেছে, সেই লেখকের নাম রকিব হাসান।
বাংলা কিশোরসাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র রকিব হাসান। নক্ষত্র নিভে গেছে। লেখক রকিব হাসান পৃথিবীর স্পর্শ ছেড়ে অনন্তলোকে চলে গেছেন। যিনি আমাদের হাতে প্রথম রহস্যের বই তুলে দিয়েছিলেন, যিনি শিখিয়েছিলেন বন্ধুত্ব, সাহস আর সত্যের মানে; সেই মানুষ চলে গেলেন চিরবিদায় নিয়ে।
১৫ অক্টোবর বিকেলে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন ‘তিন গোয়েন্দা’র স্রষ্টা রকিব হাসান। তিনি দীর্ঘদিন কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭৫ বছর।
তবে রকিব হাসানের অনন্তলোকে চলে যাওয়া শুধু একজন লেখকের মৃত্যু নয়, আমাদের কৈশোরের এক যুগের থমকে যাওয়া। রকিব হাসান সেই মানুষ, যিনি কিশোর বয়সের হাজারো পাঠকের কল্পনার পৃথিবী গড়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান বিশেষভাবে পরিচিত গোয়েন্দা গল্পের লেখক হিসেবে। তিনি ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের স্রষ্টা হিসেবে একনামে খ্যাতি অর্জন করেছেন। হিরো হয়ে উঠেছেন আমাদের কাছে। সিরিজটি সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়ে বাংলাদেশের একাধিক প্রজন্মের কিশোর পাঠকের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তা ছাড়া রকিব হাসান অনুবাদ করেছেন ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’, এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট ও জেরাল্ড ডুরেলের মতো বিশ্বখ্যাত লেখকের বহু ক্ল্যাসিক কৃতিত্বপূর্ণ বই।
আমাদের প্রজন্মের কাছে ‘তিন গোয়েন্দা’ মানেই ছিল এক আলাদা দুনিয়া। ছুটির দিনে কিংবা ছুটির সময় বই হাতে নিয়ে আমরা হারিয়ে গেছি কিশোর, মুসা আর রবিনের সঙ্গে রহস্যের সন্ধানে। তিন বন্ধুর বুদ্ধি, সাহস আর বন্ধুত্বের গল্পে আমরা নিজেদের খুঁজে পেয়েছি। রকিব হাসান আমাদের শিখিয়েছেন, ভয় না পেয়ে প্রশ্ন করা মানেই বেড়ে ওঠা‘ড্রাকুলা’ পড়ে আমরা পরিবারের সবাই এক অলীক অবয়বকে সত্য বলে কল্পনা করতে শুরু করি। তখন থেকে আমাদের ভেতর বিচরণ করতে থাকে ড্রাকুলা। বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে আমরা ড্রাকুলার উপস্থিতি খুঁজে পেতে থাকি। সেই কল্পিত ড্রাকুলা থেকে রেহাই পেতে বইয়ে লেখা পদ্ধতি অনুসরণ করে যাই।
ইংল্যান্ডের তরুণ আইনজীবী জনাথন হার্কার ট্রান্সিলভানিয়ার দুর্গে যান রহস্যময় কাউন্ট ড্রাকুলার সঙ্গে দেখা করতে। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন, ড্রাকুলা মানুষ নয়, এক ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ার, যে মানুষের রক্ত পান করে অমর থাকে। ড্রাকুলা পরে ইংল্যান্ডে এসে একাধিক মানুষকে আক্রান্ত করতে শুরু করে। হার্কার, তার প্রণয়িনী মিনা, ডাক্তার ভ্যান হেলসিংসহ কয়েকজন মিলে তাকে থামানোর জন্য প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যায়। ভয়, মৃত্যু, অন্ধকার আর মানবতার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তারা অবশেষে ড্রাকুলাকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। আমরা পরিবারের সবাই—ভাই, বোন, চাচা, ফুফু ড্রাকুলা ধ্বংসের সেই অভিযানের অংশ হয়ে যাই।
আমাদের প্রজন্মের কাছে ‘তিন গোয়েন্দা’ মানেই ছিল এক আলাদা দুনিয়া। ছুটির দিনে কিংবা ছুটির সময় বই হাতে নিয়ে আমরা হারিয়ে গেছি কিশোর, মুসা আর রবিনের সঙ্গে রহস্যের সন্ধানে। তিন বন্ধুর বুদ্ধি, সাহস আর বন্ধুত্বের গল্পে আমরা নিজেদের খুঁজে পেয়েছি। রকিব হাসান আমাদের শিখিয়েছেন, ভয় না পেয়ে প্রশ্ন করা মানেই বেড়ে ওঠা। আমরা প্রশ্ন করতে শিখেছি। নিজের কাছে, বড়দের কাছে। আমরা যেকোনো রহস্যের সন্ধানে মেতে উঠেছি যেকোনো সময়।
রকিব হাসান জন্মেছিলেন ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর, কুমিল্লায়। বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। ছোটবেলা থেকেই বই ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী—বিশেষ করে রহস্য, গোয়েন্দা আর অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে তিনি চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন, কিন্তু অফিসের বাঁধাধরা জীবনে মন টেকেনি। অবশেষে লেখালেখিকেই নিজের জীবনপথ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
রকিব হাসান (১২ ডিসেম্বর ১৯৫০-১৫ অক্টোবর ২০২৫)