জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর অনুমতি বাতিল বাংলা একাডেমির
Published: 11th, January 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র ‘দ্য রিমান্ড’–এর বিশেষ প্রদর্শনী এবং প্রদর্শনী-পরবর্তী আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল বাংলা একাডেমিতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অনুমতি বাতিল করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। অনুমতি বাতিলের প্রতিবাদে একাডেমির মূল ফটকের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজকেরা।
শনিবার বেলা চারটার দিকে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আজ বেলা সাড়ে তিনটায় ‘রেডপোস্ট’–এর উদ্যোগে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘দ্য রিমান্ড’ চলচ্চিত্রের কিছু অংশ প্রদর্শনীর কথা ছিল। এরপর সেখানে ‘ফ্যাসিজমমুক্ত বাংলাদেশে স্বাধীন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল।
অনুষ্ঠানটির জন্য একাডেমি প্রথমে অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু আজ বেলা দেড়টার দিকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) অনুমতি বাতিল করেছেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশে তা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু অনুমতি বাতিলের নির্দিষ্ট কোনো কারণ তিনি জানাননি।
আলোচনা সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব, সাংবাদিক শফিক রেহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু একাডেমি অনুমতি বাতিল করায় অতিথিদের আসতে বারণ করা হয়। তবে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সংবাদ সম্মেলনে আসতে বলেছিলেন আয়োজকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমার প্রাথমিক অনুভূতি হলো ‘দ্য রিমান্ড’ এখন রিমান্ডে আছে। এই ছবিটা কেন দেখতে দেওয়া হলো না, তার একটা যুক্তিসংগত কারণ থাকতে পারে উনাদের (একাডেমির কর্তৃপক্ষের) কাছে। আমি যেহেতু সে বিষয়ে জানি না, তাই সেটা নিয়ে কোনো চর্চা করছি না।’
এরপর নাগরিক ঐক্যের এই সভাপতি বলেন, ‘একটা ছবি দেখবার পরে সেন্সর বোর্ডের দায়িত্বের মধ্যেই আছে যে তারা বলবে ছবিটিকে তারা অনুমতি দিচ্ছে কি দিচ্ছে না, না দিলে কেন দিচ্ছে না। সেটা তো বলা হয়নি, সেটা কেন?’
‘দ্য রিমান্ড’–এর প্রযোজক অ্যাডভোকেট বেলায়েত বেলাল বলেন, ‘বাংলা একাডেমির ডিজি মহোদয় চলচ্চিত্র পরিচালক আশরাফুর রহমানকে দেড়টার দিকে টেলিফোনে অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা যাবে না বলে জানিয়েছেন। তিনি নাকি তার ঊর্ধ্বতন থেকে নির্দেশিত হয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্য রিমান্ড’–এর পরিচালক আশরাফুর রহমান বলেন, ‘দ্য রিমান্ড দেখে তাঁরাই ভয় পাবেন, যাঁদের ঘাড়ের মধ্যে ফ্যাসিজম চেপে বসে আছে। দ্য রিমান্ড ফ্যাসিস্টদের চরিত্র উন্মোচনের একটি ছবি, তাহলে ভয় পেল কারা? এটা আমাদের জানা দরকার। আজকে ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে যখন আমার কথা হলো, তিনি বললেন, “সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন যে এটি দেখানো যাবে না।” আসল কথা হচ্ছে যারা ভয় পেয়েছে, তারা দেখাতে দিচ্ছে না।’
আরও পড়ুনচলচ্চিত্র শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সরকার: নাহিদ ইসলাম২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।