বরিশালে ব্যবস্থাপনা কমিটির দ্বন্দ্বে ৫০২ বিদ্যালয়ে মামলা
Published: 12th, January 2025 GMT
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে বরিশাল বিভাগের অন্তত ৫০০ বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এই বিরোধের জেরে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি, বরখাস্ত এবং পাল্টাপাল্টি মামলায় জর্জরিত এসব বিদ্যালয়।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এই শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১ হাজার ৮০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫০২টি বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে দলাদলি, মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৬টি মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। নিম্ন আদালতে অনেক মামলা থাকলেও তার হিসাব শিক্ষা বোর্ডের কাছে নেই। শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এসব বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
উচ্চ আদালতে ৮৬টি মামলা ছিল। এর মধ্যে গত এক বছরে আমরা ২১টি মামলার নিষ্পত্তি করিয়েছি। বাকিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা আছে।মো.ইউনুস আলী সিদ্দিকী, চেয়ারম্যান, বরিশাল শিক্ষা বোর্ড
বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়গুলোর এই দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে। কমিটিতে কে আসবেন, কে আসতে পারবেন না—এ নিয়েই বিরোধের শুরু হয়। এর বাইরে দাতা সদস্য, বিদ্যানুরাগী সদস্য নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে। এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে যে স্থানীয় প্রভাবে যাঁরা বিদ্যালয়ের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা, তাঁদেরও কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় স্বার্থান্বেষী মহল প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় গোপনে পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। আবার স্থানীয় প্রভাবশালীরা কমিটি নিয়ে পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়ান। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় পাশাপাশি মামলা চালাতে ব্যয় করতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের তহবিলের অর্থ।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত বিদ্যালয়ের সম্পদ এবং স্থানীয়ভাবে নানা ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতেই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজেদের কবজায় নিতে চান এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এর পেছনে তাঁদের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেন রাজনৈতিক নেতারা।
বরিশাল নগরের প্রাণকেন্দ্র ও বাণিজ্যিক এলাকা গির্জা মহল্লায় প্রায় দুই একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ কে (আসমত আলী খান) ইনস্টিটিউশন। বিদ্যালয়টির সামনের বাণিজ্যিক স্থাপনা থেকে মাসিক ছয় লাখ টাকা ভাড়া আসে। ২০২০ সালের ২৭ জুলাই এই বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ। তিনি বিদ্যালয়ের তহবিল নানাভাবে তছরুপ শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বাধা দেওয়ায় ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসিম উদ্দীনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। এরপর প্রধান শিক্ষক এই সাময়িক বরখস্তের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন। এরপর প্রায় সাড়ে চার বছর পর আদালতের রায়ে প্রধান শিক্ষক পদে বহাল হন।
এ বিষয়ে এইচ এম জসিম উদ্দীন বলেন, ‘আমি পুনরায় যোগদান করার পর প্রাথমিক একটি অডিট করে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে গত চার বছরে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ তহবিল থেকে তছরুপ হয়েছে। নতুন কমিটি আসার পরে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ে গত চার বছর লুটপাট, দলাদলির কারণে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হয়েছে। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়ে গেছে।’
শিক্ষকেরা বলছেন, বিদ্যালয়গুলোতে পরিচালনা কমিটি নিয়ে বিরোধ-মামলায় প্রধান শিক্ষকসহ সাধারণ শিক্ষক ও কর্মচারী বরখাস্তের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এর মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলায় জড়িয়ে কারাবাসসহ নানাভাবে শিক্ষকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। শিক্ষকতা করতে এসে পাঠদান রেখে শিক্ষকদের আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
আমি পুনরায় যোগদান করার পর প্রাথমিক একটি অডিট করে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে গত চার বছরে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ তহবিল থেকে তছরুপ হয়েছে। নতুন কমিটি আসার পরে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ে গত চার বছর লুটপাট, দলাদলির কারণে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হয়েছে। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছেড়ে গেছে।প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসিম উদ্দীনবোর্ড সূত্র জানায়, ১৬ বছর ধরে বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই। মনোনীত অ্যাডহক কমিটি দিয়েই বেশির ভাগ বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ ছয় মাস। বারবার রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের লোকদের মনোনীত করে অ্যাডহক কমিটি করে এত দিন বিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করেছেন। আর এ নিয়েই প্রধান শিক্ষক কিংবা স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং মামলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা হলে তার প্রভাব শিক্ষার্থীসহ সবার ওপর পড়ে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নতুন করে চিন্তাভাবনা করা দরকার। পাশাপাশি বিদ্যালয়সংক্রান্ত মামলা গ্রহণের আগে তা যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থা থাকা দরকার।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী প্রথম আলোক বলেন, ‘উচ্চ আদালতের ৮৬টি মামলা ছিল। এর মধ্যে গত এক বছরে আমরা ২১টি মামলার নিষ্পত্তি করিয়েছি। বাকিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা আছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।