বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি দক্ষ ও আধাদক্ষ জনশক্তি নিতে কুয়েতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশে নবনিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। 

কুয়েত এবং কসোভোর রাষ্ট্রদূতগণ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের পরিচয়পত্র পেশ করেন।

বঙ্গভবনে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল তাদের গার্ড অব অনার প্রদান করে।

প্রথমে কসোভোর নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত লালজিম প্লানা তার পরিচয়পত্র পেশ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন কুয়েতের  রাষ্ট্রদূত আলী থুনায়েম আব্দুল ওহাব হামাদাহ।

কসোভোর নতুন রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও  কসোভোর মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান।’’ 

বাংলাদেশ ও কসোভোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, ওষুধসহ আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়াতে নতুন রাষ্ট্রদূতকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। 

এ সময় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে রাষ্ট্রপতি দুদেশের মধ্যে ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময়ের ওপর জোর দেন।

কুয়েতের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আগামীতে বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার  উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। 

বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, জাহাজ নির্মাণ এবং জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে তিনি কুয়েতের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।

কুয়েতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশি জনশক্তি কর্মরত উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ থেকে আরো দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নিতে কুয়েতের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের অবদান তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আশা করেন, তাদের সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহে কুয়েতের সহযোগিতা কামনা করেন রাষ্ট্রপতি।

এ সময় মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সাথে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সেজন্য কুয়েত এবং ওআইসি-সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

সাক্ষাৎকালে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত তার দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবদানের প্রশংসা করেন।

নতুন রাষ্ট্রদূতগণ বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতির সার্বিক সহযোগিতা  কামনা করেন ।

এ সময় রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরী, প্রেস সচিব মো. সরওয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।     

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ