খুলনা কারাগারে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ বন্দীকে কাশিমপুরে প্রেরণ
Published: 19th, October 2025 GMT
খুলনা জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে মারামারির ঘটনায় কারাবিধি অনুযায়ী তিন কারাবন্দীকে ঢাকার হাই সিকিউরিটি কাশিমপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) পুলিশ পাহারায় প্রিজনভ্যানে তাদের তিনজনকে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নামের তালিকায় যারা আছেন, তাদেরও পরবর্তীতে ঢাকায় পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
খুলনা কারাগারে বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৮
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, অতিষ্ঠ মাদারীপুরবাসী
বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মুনীর হুসাইন বলেন, “কারাগারের ভেতরে মারামারির পর শনিবার রাতে কারা হেড কোয়ার্টারে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনের নামের তালিকা তৈরি করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সেখান থেকে আসামিদের পাঠানোর কথা জানানো হলে প্রাথমিক পর্যায়ে সকালে কালা তুহিন, গ্রেনেড বাবুর ছোটভাই রাব্বি এবং জিতুকে পুলিশ পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। নামের তালিকায় যারা আছে পরবর্তীতে তাদেরও ঢাকায় পাঠানো হবে।”
শনিবার (১৮ অক্টোবর) খুলনার দুটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী গ্রুপ গ্রেনেড বাবু গ্রুপ ও কালা লাভলু গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারা কর্তৃপক্ষ লাঠিচার্জ করে। সংঘর্ষ ও লাঠিচার্জে একজন কারারক্ষীসহ অন্তত ৭-৮ জন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়।
এ সংঘর্ষে অংশ নেন অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ জন কয়েদি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর ভাই রাব্বি চৌধুরী, অনুসারী হিরন, রুহান-পলাশ গ্রুপের পলাশ, কালা লাবলু, সৈকত ও মইদুলসহ আরো অনেকে।
খবর পেয়ে জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধানের নেতৃত্বে কারারক্ষীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ কারারক্ষীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলার চেষ্টা চালায়। পরে উত্তেজিত বন্দিদের পৃথক লকারে স্থানান্তর করা হয়।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ স ঘর ষ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
কেঁচোর জাদুতে বদলে গেলো কামরুজ্জামানের ভাগ্য
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের কৃষক কামরুজ্জামান শেখ এখন এলাকার অনুপ্রেরণার নাম। একসময় নিজ জমির জন্য জৈব সার উৎপাদনের চিন্তা থেকে শুরু করে আজ তিনি বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন। তার পথ ধরে এখন একে একে আগ্রহী হচ্ছেন আশপাশের আরো অনেক কৃষক।
প্রকৃতির এক বিস্ময়-কেঁচোর বিষ্ঠা থেকেই তৈরি হয় ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ বা কেঁচো সার। রাসায়নিক সারের বিকল্প এই জৈব সার মাটির উর্বরতা বাড়ায়, গাছের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং উৎপাদন খরচ কমায়। ফলে দিন দিন কৃষকরা এর ব্যবহার বাড়াচ্ছেন।
কামরুজ্জামান শেখও প্রথমে নিজের খামারের জন্যই এই সার তৈরি শুরু করেছিলেন। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার উদ্যোগ বড় আকার নেয়। বর্তমানে তিনি মাসে প্রায় এক টন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিক্রি করেন। প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা দরে। শুধু তাই নয়, সার তৈরির মূল উপাদান কেঁচোও এখন বিক্রি করছেন তিনি, প্রতি কেজি দেড় থেকে দুই হাজার টাকায়।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের’ আওতায় কামরুজ্জামান প্রথমবারের মতো কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ ও একটি প্রদর্শনী দেওয়া হয়। সেই উদ্যোগই এখন তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে একই ইউনিয়নের শেফালী বেগম, ফজলুল হক মোড়ল, মোতালিব ব্যাপারী, মহসিন শেখ, মো. আ. ছাত্তার, মো. মজিবুর মোড়ল, নিলুফা ইয়াসমিন, বিল্লাল হোসেন, মোস্তফা, ফারজানা আক্তার, ফকির মো. মোস্তফা ও মোক্তারপুরের আমান উল্লাহসহ ১২ জন কৃষক পরবর্তী অর্থবছরে একই প্রকল্পের আওতায় যুক্ত হয়েছেন।
সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস, পাশাপাশি কামরুজ্জামানের কাছ থেকেও হাতে কলমে শিখেছেন তারা ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির কৌশল।
কামরুজ্জামানের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত এক জায়গায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি অফিস থেকে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক ভার্মি কম্পোস্ট সেন্টার। সেখানে রয়েছে ১০টি রিং ও ১০ ফুট লম্বা সিমেন্টের হাউজ। প্রথমে গরুর গ্যাস বিহীন ৫-৭ দিনের গোবর, সবজির খোসা ব্যবহার করা হয়। পরে সেই গোবর হাউজে ফেলে কেঁচো ছাড়া হয়। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে তৈরি হয় পুষ্টিগুণে ভরপুর জৈব সার, যা পরবর্তীতে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করে বাজারে সরবরাহ করা হয়।
কৃষি অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে সেপারেটর মেশিন, পলিব্যাগ ও সিলিং মেশিন-যার মাধ্যমে এখন প্যাকেটজাত পণ্য হিসেবে বাজারজাত করা হয় এই সার।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, “ভার্মি কম্পোস্ট একটি হিউমাসসমৃদ্ধ জৈব সার। এটি শুধু মাটির উর্বরতা বাড়ায় না, পাশাপাশি ফলন ১০-১৫% বৃদ্ধি করে। এছাড়াও মাটির লবণাক্ততা কমায়, পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং সবজি বা ফসলকে করে তোলে বিষমুক্ত।”
তিনি আরো বলেন, “কামরুজ্জামান শেখকে আমরা শুরু থেকেই সহযোগিতা করছি। তার সাফল্য এখন অন্য কৃষকদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।”
কৃষি অফিসার বলেন, “প্রথমে গরুর গ্যাস বিহীন ৫-৭ দিনের গোবর, সবজির খোসা ব্যবহার করা হয়। অনেকে কলা গাছ ছোট করে কেটে গরুর গোবরের সাথে ব্যবহার করেন। যা পরবর্তীতে শুকিয়ে ও চেলে প্যাকেটজাত করে বাজারে সরবরাহ করা হয়।”
গাজীপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “ভার্মি কম্পোস্ট একটি কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব জৈব সার, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ব্যবহার একদিকে যেমন রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমায়, তেমনি ফসলের উৎপাদন বাড়ায় ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। কৃষকদের এখন এই সারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে-এটি এরইমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।”
অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের (২য় সংশোধিত) প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, “এই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি অর্থবছরেই শেষ হচ্ছে। বর্তমানে নতুন করে কোনো প্রদর্শনী স্থাপনের সুযোগ নেই। তবে আগ্রহী কৃষক বা উদ্যোক্তারা কৃষি অফিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে, ভবিষ্যতে অন্য কোনো প্রকল্পের আওতায় সুযোগ পেতে যেতে পারেন।”
রাসায়নিক সার নির্ভর কৃষি থেকে বেরিয়ে এসে ভার্মি কম্পোস্টের মতো পরিবেশবান্ধব সার ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে সারাদেশে। এই উদ্যোগ শুধু মাটির প্রাণ ফিরিয়ে দিচ্ছে না, বরং নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি করছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।
কেঁচোর জাদুতে স্বপ্ন বুনছেন কালীগঞ্জের কামরুজ্জামান শেখ। আর তার হাত ধরেই বদলে যাচ্ছে আশপাশের কৃষকদের জীবন।
ঢাকা/এস