গত বছর কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। ৫ মাস পর আজ দুপুরে শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয় রায় নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন। এ রায়ের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কলকাতার তারকারা। 

নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে রাজপথে নেমেছিলেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। হাজতবাসও করতে হয়েছে তাকে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সেই রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “অভিনেতা বা নেতা হিসেবে নয়, পশ্চিমবঙ্গের একজন নাগরিক হিসেবে, যারা আন্দোলনে ছিলেন, প্রত্যক্ষ করেছি, তারা এই রায়ে খুশি তো নন বরং অসন্তুষ্ট। প্রথম কথা হচ্ছে যে ‘রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ার কেস’ বলে সিবিআইকে বোঝাতে হবে কেন? এটা প্রমাণের দরকার কি? সম্মানীয় বিচারক, যিনি এই রায় দিয়েছেন তার রায়কে শিরোধার্য।”

মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ায় প্রশ্ন ছুড়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। তার ভাষায়, “সম্মানীয় বিচারক কি জানতেন না ‘রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ার কেস’। যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল, তার তথ্যদি নিরিখে আজকে সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা হল, কেন মৃত্যুদণ্ড নয়? আমার অনেক বন্ধুই ফোন করে বলছে, যদি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হতো, তাহলে আমি একা মারা যাব কেন, এটা ভেবে সঞ্জয় কি আর সবার নাম বলে দিত? এই প্রশ্নগুলোই জনমানসে উঠছে।”

আরো পড়ুন:

বন্যার্তদের জন্য শিল্পী সমিতির তহবিল সংগ্রহ

পীরজাদার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার শিল্পী-কলাকুশলীরা

প্রয়াত তিলোত্তমার বিচার চেয়ে সরব হয়েছিলেন অপরাজিতা আঢ্য। কখনো মিছিলে হেঁটেছেন, কখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়াজ তুলেছেন। চিৎকার করে প্রশ্ন করেছেন নারীদের নিরাপত্তা নিয়েও। রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এই অভিনেত্রী।

অপরাজিতা আঢ্য বলেন, “এতদিন ধরে এত তদন্ত করে যদি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে, সঞ্জয় রায় ছাড়া আর কেউ দোষী নন, সেখানে কিছু বলার নেই। মানুষ অনেক চেষ্টা করেছে, যথেষ্ট তদন্ত হয়েছে, তারপরও যদি এই সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে সঞ্জয়ই দোষী, এজেন্সি, আদালত যদি তেমনটাই মনে করে থাকে, তেমনই রায় দিয়ে থাকে, তবে নিঃসন্দেহে ওই দোষী।”

অপরাজিতা আঢ্য অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানেন না। তাই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “আশা করি, এটা এখানে থেমে থাকবে না, তদন্ত চলবে। দেখা যাক। কিছু তো বলার নেই। কারণ আদালত হচ্ছে সবার ওপরে, তার ওপরে তো কিছু বলার নেই। এত তদন্তের পর যদি আদালত এই সিদ্ধান্ত পৌঁছায়, তবে আমি কী বলব? সাধারণ মানুষ কী বলবে?”

নৃশংস এ ঘটনার বিচার চেয়ে রাজপথে নেমেছিলেন অভিনেতা পরমব্রত চ্যাটার্জিও। রায় ঘোষণার পর তিনি বলেন, “আমি সবসময় চেয়েছি যাতে বিচার হয়। সুষ্ঠ বিচারের পক্ষে ছিলাম-আছি-থাকব। একটি শহরের কেন্দ্রস্থলে, একটি হাসপাতালে, কীভাবে এই ঘটনা ঘটতে পারে! যারা দায়ী, সে যেকোনো স্তরের প্রশাসন হতে পারে, সর্বস্তরের প্রশাসন হোক কিংবা হাসপাতালস্তরে, প্রত্যেককে জবাব দিতে হবে। এটাই চেয়েছিলাম। এরপরও আদালতের বিচারে মনে হয়েছে, সঞ্জয় রায় একমাত্র দোষী। তাই তারা তাকে শাস্তি দিয়েছেন।”

বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে আস্থা না হারানোর আহ্বান জানান পরমব্রত চ্যাটার্জি। তার ভাষায়, “সাধারণ মানুষের তো বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা না রেখে কোনো উপায় নেই। কারো মনে হতেই পারে এটা করে অনেককে হয়তো আড়াল করা হলো। কিন্তু বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে ভরসা উঠে গেলে তো হবে না। তাদের মনে হয়েছে সঞ্জয় একমাত্র না হলেও মূল দোষী, তাই শাস্তি দিয়েছে। যাবজ্জীবন কারাবাস নিঃসন্দেহে বড় একটা শাস্তি।”

কলকাতার তারকাদের মধ্যে বিচার চেয়ে সর্বপ্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। রায় ঘোষণার পর হতাশা ব্যক্ত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। তাতে এ অভিনেত্রী লেখেন, “তিলোত্তমা, কলকাতার তিলোত্তমার বিচার নাই।”

উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ আগস্ট দিবাগত ভোররাত ৩-৬টার মধ্যে আর জি কর মেডিকেল কলেজে ধর্ষণের পর খুন করা হয় তরুণী চিকিৎসককে। ওই তরুণীর গলার একটি হাড় ভাঙা ছিল। শরীরে মোট দশ স্থানে ক্ষত পাওয়া যায়; লজ্জাস্থানেও রক্ত ছিল।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কলক ত র ত তদন ত র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ