আয়নাবাজি থেকে রিকশা গার্ল, নভেরার নাইমা হয়ে উঠার গল্প
Published: 23rd, January 2025 GMT
রিকশার প্যাডেলে পা রাখা জীবনের সঙ্গে নগরের অনেক মানুষই পরিচিত নন, পরিচিত নন জীবিকার তাগিদে, তিন বেলার খাবারের টাকা জোগাড় করতে, পরিবারের অসুস্থ মানুষটির ওষুধ কেনার কষ্টের গল্পগুলোর সঙ্গেও। শহরের প্রত্যেক রিকশাচালকের গল্পই যেন একেকটা উপন্যাস, সুখ-দুঃখে ভরা বাস্তব গল্পের সিনেমা। সেই গল্পটিই পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা। আয়নাবাজির মতো ব্যবসাসফল সিনেমার নির্মাতা রিকশা গার্ল-এর দুঃখ-বেদনা আর আনন্দকে একত্র করে বানিয়েছেন ‘রিকশা গার্ল’।
যে সিনেমায় শহরের যাপিত এক জীবনের প্রতিচ্ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন নান্দনিক সিনেগ্রাফি; যেখানে রয়েছে সম্পর্ক, দায়িত্বশীলতা, আতঙ্ক আর প্রেমের প্রতিচ্ছবি। রয়েছে বুনো শালিকের দল, শহুরে রাস্তার কুকুরও। নির্মাতা জানালেন, সিনেমার পুরোটা জুড়ে রিকশা পেইন্টিংয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে প্রতিটি ফ্রেমে আলো ও রঙের পরীক্ষায় উৎরে যাওয়ার চেষ্টাও রয়েছে।
আয়নাবাজির ৯ বছর পর.
..
প্রথম সিনেমা দিয়ে বাজিমাত করেছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৯ বছর। এ ৯টি বছর কেবল রিকশা গার্ল সিনেমাটি নিয়ে বসেছিলেন তা কিন্তু নয়। বানিয়েছেন ওটিটি কনটেন্ট ও বহু বিজ্ঞাপন। সিনেমাটির শুটিংও করোনা মহামারির আগে শেষ হয়েছিল। পরে ২০২০ সালে মুক্তির কথা থাকলেও বদলে যায় পরিকল্পনা। দেশে মুক্তি না দিলেও বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় সিনেমাটি। বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে পুরস্কারও জিতেছে রিকশা গার্ল। এবার আগামীকাল সারা দেশে মুক্তি পাচ্ছে ‘রিকশা গার্ল’।
নারীর ক্ষমতায়ন ও রিকশা পেইন্টিংয়ের ঐতিহ্য
‘রিকশা গার্ল’ ছবির গল্প নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে। বাংলাদেশের মেয়ে নাইমা। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেন। পুরুষের বেশে অসুস্থ বাবার রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হন। এক দুর্ঘটনায় বাবার প্রিয় রিকশাটি ভেঙে যায়। রিকশার ভেঙে যাওয়া অংশ ঠিক করতে শুরু হয় নাইমার নতুন সংগ্রাম। এ সিনেমার মাধ্যমে সমাজের কঠিন কাজ রিকশা চালানোর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নকেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। সঙ্গে বাংলাদেশের চিরায়ত পেইন্টিংয়ের ঐতিহ্যের দিকটাও তুলে আনা হয়েছে। অমিতাভ রেজা এখানে বলেছেন, ‘‘ছবির চরিত্র নাইমা বেশ শিল্পমনা। ছবি আঁকতে পছন্দ করে। দরিদ্র সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা হঠাৎ অসুস্থ হলে স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই শুরু হয় তার। উপায়ান্তর না পেয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়। ‘রিকশা গার্ল’ ছবির মাধ্যমে রিকশা পেইন্টিংয়ের ঐতিহ্য আর ধারণাকে তুলে ধরারও চেষ্টা ছিল।’’
যেভাবে রিকশা গার্ল হয়ে ওঠা
ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা মিতালি পারকিনসের কিশোর সাহিত্য ‘রিকশা গার্ল’ বইটি ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সর্বাধিক বিক্রি হয়েছিল। এ উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে চিত্রনাট্য লিখছেন শর্বরী জোহরা আহমেদ। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’র চিত্রনাট্যকারদের একজন তিনি। কাজেই সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে যে অভিনয় করবেন তাঁকে প্রস্তুতি নিয়েই নামতে হবে মাঠে। নেমেছেনও। সিনেমাটির প্রধান নাইমা। তিনিই মূলত ‘রিকশা গার্ল’। চরিত্রটি ফুটে উঠেছে নভেরা রহমানের মাধ্যমে। বাস্তব জীবনে তিনি অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরীর মেয়ে। অভিনয় যার রক্তে তিনি যে পুরোপুরি রিকশা গার্ল হয়ে উঠতে পারবেন সে বিশ্বাস নির্মাতা অভিতাভ রেজার ছিল। সে বিশ্বাস ভাঙেনি। এ সিনেমায় নভেরা থেকে নাইমা হয়ে উঠতে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। নভেরার মুখেই শুনি, ‘নভেরা থেকে নাইমা হওয়ার জার্নিটি বেশ অদ্ভুত ছিল। মনে আছে, নিকেতনপাড়ার ভেতর আমি এক মাস রিকশা চালিয়েছি। আমার পেছনে ইডিরা বসে থাকত আর আমি রিকশা চালাতাম। পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে অনেক বছর থাকতে হয়েছে। সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে ঢাকাকে খুব গভীরভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, পাবনাতেও এর দৃশ্য ধারণ হয়েছে। সেখানের রাস্তার রিকশাচালকদের সঙ্গে মিলেমিশে রিকশা চালিয়েছি। নির্মাতা, অভিনশিল্পী– সবার জন্য এটি কষ্টের প্রজেক্ট ।’
আঁকিয়েদের অনুপ্রেরণা দেবে
অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মিতালি পারকিনসের উপন্যাস অবলম্বনে হলেও ‘রিকশা গার্ল’ নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের পটভূমিতে। আমাদের দেশের রিকশা পেইন্টিংয়ের মতো দারুণ একটা শিল্পকে সারা বিশ্বের দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়েছে সিনেমায়। আমাদের কিশোর-কিশোরী, যারা ছবি আঁকতে চায়, তাদের অনুপ্রাণিত করবে সিনেমাটি। আশা করি অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের সিনেমাটি দেখার সুযোগ করে দেবেন।’’ বিভিন্ন চরিত্রে সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন চম্পা, মোমেনা চৌধুরী, নরেশ ভূঁইয়া, অ্যালেন শুভ্রসহ অনেকেই।
ত্রিশটিরও বেশি আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শন
মুক্তির আগেই বিশ্বের ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত হয় সিনেমাটি। এরমধ্যে ব্রাসেলসে ১৬তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ফিলেম’অন কিডস অ্যাওয়ার্ড জিতেছে, শিকাগো ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৩৯তম আসরের ‘বেস্ট অব ফেস্ট’ পুরস্কার পাওয়াসহ জাপানের ওসাকা এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪-এ প্রদর্শিত হয়েছে। পাশাপাশি ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ রাজ্যের ৫২টি শহরে চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র প রদর শ আয়ন ব জ
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।