বিসিবির স্ট্যান্ডিং কমিটি ঘোষণা, কোন দায়িত্বে কে
Published: 25th, January 2025 GMT
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) ব্যাপক রদবদল ঘটে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দুই সপ্তাহ পর বিসিবির নেতৃত্বে আসেন সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। কিন্তু পাঁচ মাসেও স্ট্যান্ডিং কমিটি চূড়ান্ত না হওয়ায় বিরাজ করছিল অচলাবস্থা।
অবশেষে স্ট্যান্ডিং কমিটি ঘোষণা করেছে ক্রিকেট বোর্ড। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিসিবির ১৭তম বোর্ড মিটিংয়ে ২১টি কমিটির চেয়ারম্যানের নাম চূড়ান্ত করা হয়। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম চূড়ান্ত করা হবে।
প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার বোর্ড সভা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন নতুন দায়িত্ব পাওয়া মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু। সঙ্গে ছিলেন গ্রাউন্ডস কমিটি ও এইচপির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম।
আরো পড়ুন:
দাবি নিয়ে এবার বিসিবিতে ক্রিকেটাররা, ফারুকের আশ্বাস
ক্লাবের আল্টিমেটাম: জরুরি বোর্ড মিটিং ডেকেছে বিসিবি
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ইফতেখার রহমান বলেন, “১০জন ছিলাম প্রেসিডেন্টসহ (নতুন বোর্ড গঠনের পর)। যে খালি ছিল, আপনারা নানা অনুষ্ঠানে বলছিলেন দেওয়া হচ্ছে না। আজ দেওয়া হয়েছে, চেয়ারম্যান শুধু। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার।”
স্ট্যান্ডিং কমিটি ঘোষণা নিয়ে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগে কাজ করছিলেন পাঁচ আগস্টের পর বোর্ডে আসা ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। এবার ২৩টি কমিটির মধ্যে ২১টি ঘোষণা করা হয়েছে।
তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ মার্কেটিংয়ের দায়িত্ব রেখেছেন নিজের কাছে। এছাড়া বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। ফাহিমের দায়িত্বে আছে ক্রিকেট অপারেশন্স ও বিসিবির নারী বিভাগ।
কোন দায়িত্বে কে
ক্রিকেট অপারেশন্স-নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ফাইন্যান্স কমিটি-ফাহিম সিনহা, ডিসিপ্লিনারি কমিটি-সাইফুল আলম স্বপন, গেম ডেভলপম্যান্ট কমিটি-ফাহিম সিনহা, টুর্নামেন্ট কমিটি-আকরাম খান, এইজ গ্রুপ টুর্নামেন্ট কমিটি-সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, গ্রাউন্ডস কমিটি-মাহবুব আনাম, ফ্যাসিলিটি ম্যানেজম্যান্ট-আকরাম খান আম্পায়ারস কমিটি-ইফতেখার রহমান, মার্কেটিং-ফারুক আহমেদ, মেডিকেল-মনজুরুল আলম, টেন্ডার অ্যান্ড পারচেস কমিটি-মাহবুব আনাম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন-ইফতেখার রহমান, অডিট কমিটি-মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, ওমেন্স-নাজমুল আবেদীন ফাহিম, লজিস্টিক অ্যান্ড প্রটোকল-ফাহিম সিনহা, সিসিডিএম-সালাউদ্দিন চৌধুরী, ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জড-আকরাম খান, এইচপি-মাহবুব আনাম, বাংলাদেশ টাইগার্স-কাজী এনাম ও ওয়েলফেয়ার কমিটি মনজুর আলম।
সিকিউরিটি কমিটি ও ওয়ার্কিং কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়নি। ১০ জন পরিচালকের মধ্যে ভাগ হয়েছে ২১টি কমিটি। প্রায় সবার কাঁধেই পড়েছে একাধিক কমিটির দায়িত্ব। ফারুক-ফাহিম ছাড়া বাকি ৮ পরিচালক পুরোনো দায়িত্বের পাশাপাশি পেয়েছেন নতুন দায়িত্ব।
ঢাকা/রিয়াদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ র ক আহম দ কম ট র ট কম ট স কম ট
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।