জয়পুরহাটে নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল ও ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন
Published: 30th, January 2025 GMT
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুরের পর প্রীতি নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল করার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিপুল কুমারকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ওসি, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা ও ছাত্র প্রতিনিধি মাহফুজ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার তিলকপুরে নারী ফুটবল ম্যাচে বাধা দেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে নারী ফুটবল ম্যাচটি চালুর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী ও পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, আক্কেলপুরের ইউএনও মনজুরুল আলম, থানার ওসি আনিছুর রহমান ঘটনাস্থল তিলকপুরে ছুটে যান। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত তারা তিলকপুর অবস্থান করছিলেন। এ সময় তারা খেলার মাঠটি পরিদর্শনের পর আশপাশের লোকজন, আয়োজক কমিটি, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বাচ্চা হাজী কওমি মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।
স্থানীয়রা জানায়, টি স্টার ক্লাবের উদ্যোগে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রায় দেড় মাস আগে আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচে মাটিতে বসে খেলা দেখার জন্য ৩০ টাকা ও চেয়ারে বসে খেলা দেখার জন্য ৭০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়। টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে পার্বতীপুর ও জয়পুরহাট ফুটবল দল। ফাইনাল ম্যাচের আগে জয়পুরহাট ও রংপুর নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা দেয় আয়োজকেরা। টি স্টার ক্লাবের সভাপতি উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান (ইমন)। গত মঙ্গলবার বিকেলে একদল মুসল্লি ও মাদ্রাসার ছাত্ররা হামলা চালিয়ে খেলার মাঠের বেড়া ভাঙচুর করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে ভাঙচুরের দৃশ্য প্রচার করা হয়। ওই ঘটনার পর আয়োজকেরা বুধবার বিকেলের প্রীতি নারী ফুটবল ম্যাচটি বাতিল করেন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আলেম-সমাজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঘটনার কারণসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল ফ টবল ম য চ ত লকপ র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।