বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দলের প্রাইজমানি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওই খবর বিসিবি আগেই দিয়েছে। টুর্নামেন্টের সেরা দুই দলের সঙ্গে তৃতীয়  ও চতুর্থ সেরা দলের জন্যও রাখা হয়েছে অর্থ পুরস্কার। আগের আসরগুলোতে তৃতীয় ও চতুর্থ সেরা দল কোন প্রাইজমানি পেত না। 

বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ, তৃতীয় ও চতুর্থ সেরা দল ছাড়াও ছয় ক্যাটাগরিতে অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে বিসিবি। মোট ১০ ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে প্রাইজমানি। 

বৃহস্পতিবার এক বার্তায় বিসিবি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিসিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসরের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে আড়াই কোটি টাকা। রানার্স আপ দল পাবে দেড় কোটি টাকা। এই বিভাগে ৫০ লাখ টাকা করে প্রাইজমানি বাড়ানো হয়েছে।

টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা দল হয়েছে খুলনা টাইগার্স। তারা পাবে ৬০ লাখ টাকা। চতুর্থ সেরা দল রংপুর রাইডার্সকে দেওয়া হবে ৪০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার। এছাড়া ফাইনালের সেরা ক্রিকেটার ৫ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার পাবেন। টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার পাবেন ১০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার। 

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ৫ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার পাবেন। নাঈম শেখ ৫১১ রান করে সবার ওপরে আছেন। তাকে ছাড়িয়ে ওই পুরস্কার অন্য কারো পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। চট্টগ্রামের গ্রাহাম ক্লার্ক ১২৫ ও বরিশালের তামিম ইকবাল ১৪৩ রানের ইনিংস খেলতে পারলেই কেবল নাঈমের সর্বোচ্চ রানের পুরস্কার ছিনিয়ে নিতে পারবেন। 

টুর্নামেন্টের সর্বাধিক উইকেট শিকারি পাবেন ৫ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার। তাসকিন আগমেদ ২৫ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে আছেন। ২০ উইকেট আছে আরও চার জনের। তারা হলেন- ফাহিম আশরাফ, আকিফ জাভেদ, খালেদ আহমেদ ও খুশদীল শাহ। তবে খালেদ ছাড়া কারো সামনে তাসকিনকে পেছনে ফেলার সুযোগ নেই। সেজন্য ফাইনালে খালেদকে নিতে হবে ৬ উইকেট! 

এছাড়া ইমার্জিং ক্রিকেটার অব দ্য টুর্নামেন্ট বা বিপিএলের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের জন্য রাখা হয়েছে পুরস্কার। ওই ক্যাটাগরিতে জয়ী পাবেন ৩ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার। টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডারের জন্য ৩ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার রাখা হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল ব প এল উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ