যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা গবেষণায় কয়েকশ কোটি ডলারের ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ অর্থ দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে দেওয়া হয়, যা নতুন নতুন ওষুধ বা প্রতিষেধক উৎপাদন ত্বরান্নিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন অব হেলথ (এনআইএইচ) বলছে, তারা পরোক্ষ স্বাস্থ্য গবেষণার ব্যয় কমাতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে বছরে ৪০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিনিরা জীবন দিয়ে এ ব্যয় সংকোচনের মূল্য দেবেন। 

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মানবিক সহায়তা দেওয়া ইউএসএআইডির অনুদান স্থগিতের পর এ ধরনের একটি পদক্ষেপ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত ওষুধ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

রোববার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রদত্ত অনুদানের কেবল ১৫ শতাংশ দেওয়া হবে ভবন, সরঞ্জাম ও কর্মীদের সহায়তা হিসেবে। কার্যত এটি একটি বড় ধরনের ব্যয় সংকোচন। এক বিবৃতিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার এনআইএইচ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য গবেষণা খাত বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত। এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে, অধিকাংশ তহবিল এখন সরাসরি গবেষকদের কাছে পাঠানো হবে; এটা আগের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মাধ্যমে দেওয়া হবে না। এনআইএইচের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য অনুদানের ৩৫ বিলিয়নের ৯ বিলিয়নই দেওয়া হয় পরোক্ষ অনুদান। 

এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। তাঁর প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন বিভাগের প্রধান ধনকুবের ইলন মাস্ক পদক্ষেপের প্রশংসা করে সামাজিক মাধ্যম এক্সে ‘দারুণ কাজ’ বলে বর্ণনা করেছেন। হোয়াইট হাউস থেকেও দাবি করা হয়, এ পদক্ষেপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না চিকিৎসা গবেষণা।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন উল্টো কথা। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে অর্থ সহায়তা বন্ধ করায় গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য গবেষণাকে বাধাগ্রস্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন গভর্নমেন্ট রিলেশন্সের সভাপতি ম্যাট ওয়েনস বলেন, এটা জীবন রক্ষাকারী গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রক্রিয়াকে নিশ্চিতভাবে পঙ্গু করে দেবে। বিশ্বমানের গবেষণা চালানোর জন্য এ খরচ অপরিহার্য। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীরা এ আত্মঘাতী পদক্ষেপে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। মার্কিনিরা এ ক্ষতি মোকাবিলার আগেই তারা এনআইএইচকে এ নীতি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। 

ট্রাম্প প্রশাসনের এ নীতির সমালোচনা করেছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরাও। ডেমোক্র্যাট সিনেটর প্যাটি মুরি বলেন, তহবিল সংকুচিত করার প্রভাব পড়বে জীবন রক্ষার গবেষণায়, যার জন্য অনেক রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ শিশুরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবে না। হঠাৎ করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বন্ধ হয়ে যাবে, যা প্রভাব হবে ভয়ংকর। এ ধরনের পরোক্ষ খরচ সম্পর্কে ইলন মাস্কের কোনো ধারণা নেই। এর মূল্য মার্কিনিরা তাদের জীবন দিয়ে দেবেন।’ 

শিগগিরই এ ব্যায় সংকোচনমূলক পদক্ষেপ কার্যকর হবে। বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব গবেষণা কার্যক্রম চলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে তা আটকে যেতে পারে। 

জো বাইডেনের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রধান ছিলেন কিমরিন রাতমেল। তিনি বলেন, হঠাৎ করে এ ধরনের তহবিল বন্ধ করায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির এ গবেষক বলেন, অনেক মানুষ চাকরি হারাতে যাচ্ছেন; বন্ধ হয়ে যাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এতে ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগের গবেষণার গতি থমকে যাবে।   

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদক ষ প র এ ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ