আদীল রশিদের বল এগিয়ে এসে লং অফ দিয়ে উড়িয়ে রোহিত শর্মার ছক্কা। ৯৬ রান থেকে রোহিতের রান এক লাফে ১০২। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ৪৯তম শতক। যার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৭ ইনিংস।

রান পাচ্ছিলেন না বলে প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন ভারতের অধিনায়ক। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে রোহিত কাটাচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়। ওয়ানডে ক্রিকেট গত এক বছরে খুব একটা খেলেনি ভারত।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ তার ফেরার সেরা মঞ্চ ছিল। সেই সুযোগের প্রথমটায় জ্বলে উঠতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডেতে ৭ বলে করেছিলেন ২ রান। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯০ বলে ১১৯ রান করে ডানহাতি ব্যাটসম্যান বুঝিয়ে দিয়েছেন এখনও তিনি ফুরিয়ে যাননি।

আরো পড়ুন:

দাপুটে জয়ে সিরিজ ভারতের

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের লড়াকু সংগ্রহ

বিরুদ্ধ সময় কাটিয়ে রানে ফেরায় খুশি রোহিত। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে রোহিত বলেছেন, ‘‘আমি খেলাটাকে ছোট ছোট টুকরো করেছিলাম। যেভাবে আমি ব্যাট করতে চেয়েছি সব সময়। এটি ৫০ ওভারের একটি ফরম্যাট যা টি-টোয়েন্টির চেয়ে একটু দীর্ঘ এবং টেস্ট ক্রিকেটের চেয়ে একটু ছোট - স্পষ্টতই টেস্ট ক্রিকেটের চেয়ে অনেক ছোট। এজন্য নিয়মিত বিরতিতে আপনার কী করা উচিত তা মূল্যায়ন করতে হবে এবং আমি এটাই করে চলেছি। একজন ব্যাটসম্যানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল যিনি থিতু হয়ে যান, যতটা সম্ভব গভীরভাবে ব্যাট করতে হবে এবং এটাই ছিল আমার মনোযোগ।"

শেষ ১২ মাসে রোহিতের টেস্ট গড় চিল ২৩.

৭০। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যা ১০.৯৩ এ নেমে আসে। গতকালের ওয়ানডে সেঞ্চুরি দিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস পুরোদমে ফিরে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ভারতের অধিনায়ক, ‘‘ইনিংসে নামার পর বুঝতে পারলাম ওরা কী করতে চাইছে। আমাদের শরীরে বল করা এবং কোনও জায়গা না দিয়ে উইকেটে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। আমি এখানে পরিকল্পনা করেছিলাম। বিশেষ করে এই ধরনের ডেলিভারীতে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। গ্যাপ খোঁজার চেষ্টা করে সেসব জায়গায় রান তোলার কাজ করেছি। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে আমার যেই কাজটা করার প্রয়োজন ছিল সেটাই বাস্তবায়নের চেষ্টা ছিল।’’

টেস্ট ক্রিকেটে রান না পাওয়া, ওয়ানডে ক্রিকেটে লম্বা বিরতি এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর।ক্রিকেট পৃথিবী ক্রমেই ছোট হয়ে আসছিল রোহিতের। সেখানে যতটুকুই খেলছেন রান না পাওয়ায় কষ্ট বাড়ছিল। সেই কষ্ট চাপা দিয়ে গতকালের পাওয়া সেঞ্চুরি ঝরে পড়ছে আনন্দাশ্রু হয়ে।

ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে