‘গোট’ মেসিকে দর্শক হিসেবে পেয়ে মাহোমেসের উচ্ছ্বাস
Published: 10th, February 2025 GMT
লিওনেল মেসিকে ‘গোট’ (G.O.A.T) ভাবার তালিকায় যোগ হলো আরেকটি নাম—প্যাট্রিক মাহোমেস। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) দল কানসাস সিটি চিফসের কোয়ার্টারব্যাক। গতকাল রাতে লুইজিয়ানার সুপারডোমে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল খেলাধুলার দুনিয়ায় আমেরিকান ফুটবলের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ম্যাচ সুপার বোল। সেখানে অতিথি হিসেবে মেসি উপস্থিত হওয়ার আগেই তাঁকে তাঁর খেলায়, মানে ফুটবলে ‘সর্বকালের সেরা’ হিসেবে ঘোষণা করেন মাহোমেস।
আরও পড়ুন৪৮১ দিন পর একাদশে নেইমার, গোল নেই, ড্রিবলেও জিরো৭ ঘণ্টা আগেমাহোমেসকে হালকা-পাতলা কেউ ভাবলে ভুল হবে। এনএফএলের ইতিহাসে যে পাঁচজন কোয়ার্টারব্যাক দলের একাদশের হয়ে ন্যূনতম তিনটি সুপার বোল জিতেছেন, মাহোমেস তাঁদের একজন। মেসির ছেলেরাও সম্ভবত তাঁর ভক্ত। ক্রিম রঙের অ্যাডিডাস ব্র্যান্ডের সোয়েটার পরে দুই ছেলে চিরো ও মাতেওকে নিয়ে সুপারডোমে গিয়েছিলেন ইন্টার মায়ামির আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। মাহোমেসের জার্সি ছিল তাঁর ছেলেদের গায়ে। যদি ধরে নেওয়া হয় মেসির ছেলেরা কানসাস সিটির সমর্থক হিসেবে সুপার বোলের ৫৯তম সংস্করণ দেখতে গিয়েছিল, তাহলে বলতে হবে, তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ হয়নি। কানসাসকে ৪০-২২ ব্যবধানে হারিয়ে এ বার্ষিক প্রতিযোগিতাটি জিতেছে ফিলাডেলফিয়া ইগলস।
তবে যে-ই জিতুক, ন্যাশনাল ফুটবল কনফারেন্স (এনএফসি) ও আমেরিকান ফুটবল কনফারেন্সের (এএফসি) দুই চ্যাম্পিয়নের মধ্যে এ ম্যাচ নিয়ে তুমুল আগ্রহ ছিল অন্য খেলার তারকা থেকে বিনোদনজগতের তারকাদের মধ্যে। পপ তারকা টেলর সুইফট থেকে হলিউড কিংবদন্তি স্যামুয়েল এল জ্যাকসন, কেভিন কস্টনার, ব্র্যাডলি কুপার, অ্যান হ্যাথওয়ে, বিটলস কিংবদন্তি পল ম্যাকার্টনিও গিয়েছিলেন সুপার বোল দেখতে। ঢুঁ মেরেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। মেসির সঙ্গে সুপারডোমে ছিলেন তাঁর মায়ামি সতীর্থরা—জর্দি আলবা, লুইস সুয়ারেজ ও সের্হিও বুসকেতস। দক্ষিণ আমেরিকা সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে প্রাক্–মৌসুমে অরল্যান্ডো সিটির বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলার আগে অন্য রকম ফুটবল দেখতে গিয়েছিলেন তাঁরা।
আরও পড়ুনরিয়াল-আতলেতিকোর ঘাড়ে বার্সার নিশ্বাস, ধরাছোঁয়ার বাইরে যাচ্ছে বায়ার্ন ৯ ঘণ্টা আগেমেসি এবারের সুপার বোলে কোন দলের সমর্থন দিয়েছেন, তা জানা যায়নি। তবে গত বছর একটি ফুটবল ম্যাচের আগে কানসাস সিটি তারকা মাহোমেসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মেসি। আর মাহোমেস মেসি সুপার বোল দেখতে যাওয়ার আগেই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলে দিয়েছেন, ‘সে তার খেলার সর্বকালের সেরা (গোট)। এই ম্যাচে তার মতো কাউকে পাওয়াটা দারুণ ব্যাপার।’
যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) শুরুর আগে মেসিকে নিয়ে বিজ্ঞাপনও করিয়ে নিয়েছে অ্যাপল টিভি। গত রোববার রাতে সুপার বোল শেষে বিজ্ঞাপনটি ছাড়া হয় অ্যাপল টিভির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, আমেরিকান ফুটবলের চ্যাপটা বল নিয়ে ‘জাগলিং’ (কসরত) করছেন মেসি। কিছুক্ষণ কসরত করে একটি কিক নেন। তারপর ঘুরে চলে যাওয়ার সময় স্ক্রিনে লেখা ওঠে, ‘ফুটবল (football) শেষ হলে ফুটবল (futbol) শুরু হয়।’
২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে এমএলএসের নতুন মৌসুম। সেদিন নিউইয়র্ক সিটি এফসির মুখোমুখি হবে মেসি-আলবাদের দল মায়ামি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: কী, কেন, কীভাবে
ফিফা বিশ্বকাপ বলতে অনেকে যা বোঝেন, জাতীয় দলগুলোকে নিয়ে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের জুন–জুলাইয়ে। এবারের জুন–জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ক্লাব নিয়ে আয়োজিত বিশ্বকাপ। আনুষ্ঠানিকভাবে যা ‘ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ’ নামে পরিচিত।
ক্লাব বিশ্বকাপ কি নতুন কিছু
না। ২০০০ সাল থেকেই ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ হয়ে আসছে। কখনো ৬ দল, কখনো ৭ দল নিয়ে। তবে বিভিন্ন মহাদেশের ক্লাব প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপ খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি। বছরের শেষ দিকে ১০ দিনের মধ্যে অল্প কটি ম্যাচের মধ্যে শেষ হয়ে যেত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এই করে করে এরই মধ্যে আয়োজিত হয়ে গেছে ২০টি আসর। তবে এবার ক্লাব বিশ্বকাপকে বৈশ্বিক রূপ দেওয়ার জন্য টুর্নামেন্টের কলেবর বাড়িয়েছে ফিফা। পৃথিবীর ছয় মহাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে মোট ৩২টি ক্লাব, যেমনটা জাতীয় দলের বিশ্বকাপে এত দিন হয়ে এসেছে।
ফরম্যাট কি বিশ্বকাপের মতোই
হ্যাঁ, জাতীয় দলগুলোকে নিয়ে আয়োজিত ফিফা বিশ্বকাপের মতোই (যদিও ২০২৬ আসরে অংশ নেবে ৪৮টি দেশ)। ৩২টি দল মোট ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়েছে। প্রতি গ্রুপের সেরা দুই দল উঠবে শেষ ষোলোয়, সেখান থেকে একের পর এক নকআউট। এক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে অনুষ্ঠিত হবে মোট ৬৩টি ম্যাচ।
৩২ দল কীভাবে চূড়ান্ত হয়েছে?
দল চূড়ান্ত হয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে। মোটের ওপর সর্বশেষ চার মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নদেরই জায়গা দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ১২টি ক্লাব আছে ইউরোপের, দক্ষিণ আমেরিকার আছে ৬টি। আবার অপেক্ষাকৃত দুর্বল ওশেনিয়া ফুটবল ফেডারেশন থেকেও দল আছে একটি। আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বরাদ্দ ছিল একটি জায়গা। ২০২৪ এমএলএস সাপোর্টাস শিল্ড জিতে সেটি পেয়েছে ইন্টার মায়ামি। এমএলএস থেকে দল অবশ্য আরও একটি আছে। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী যোগ্যতা থাকলেও একই মালিকানার দুটি ক্লাব টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না। প্লে–অফের মাধ্যমে একটি চূড়ান্ত হবে। এই প্রক্রিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি যুক্ত হয়েছে।
দলগুলো কারা
এশিয়া (এএফসি): আল হিলাল (সৌদি আরব), উরাওয়া রেড ডায়মন্ডস (জাপান), আল আইন (সংযুক্ত আরব আমিরাত), উলসান (দক্ষিণ কোরিয়া)।
আফ্রিকা (সিএএফ): আল–আহলি (মিসর), ওয়াইদাদ (মরক্কো), এসপেরানস দি তিউনিস (তিউনিসিয়া), মামেলোদি সানডাউনস (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
উত্তর, মধ্য ও ক্যারিবিয়ান (কনক্যাকাফ): মনটেরি (মেক্সিকো), সিয়াটল সাউন্ডার্স (যুক্তরাষ্ট্র), পাচুয়া (মেক্সিকো), লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি (যুক্তরাষ্ট্র)।
দক্ষিণ আমেরিকা (কনমেবল): পালমেইরাস (ব্রাজিল), ফ্ল্যামেঙ্গো (ব্রাজিল), ফ্লুমিনেজ (ব্রাজিল), বোতাফোগো (ব্রাজিল), রিভার প্লেট (আর্জেন্টিনা), বোকা জুনিয়র্স (আর্জেন্টিনা)।
ইউরোপ (উয়েফা): চেলসি (ইংল্যান্ড), রিয়াল মাদ্রিদ (স্পেন), ম্যানচেস্টার সিটি (ইংল্যান্ড), বায়ার্ন মিউনিখ (জার্মানি), পিএসজি (ফ্রান্স), ইন্টার মিলান (ইতালি), পোর্তো (পর্তুগাল), বেনফিকা (পর্তুগাল), বরুসিয়া ডর্টমুন্ড (জার্মানি), জুভেন্টাস (ইতালি), আতলেতিকো মাদ্রিদ (স্পেন), রেড বুল সালজবুর্গ (অস্ট্রিয়া)।
ওশেনিয়া (ওএফসি): অকল্যান্ড সিটি (নিউজিল্যান্ড)।
আয়োজক দেশের দল: ইন্টার মায়ামি (যুক্তরাষ্ট্র)।
ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি যখন মিসরে।