এশিয়ার সাম্প্রতিক বন্যা ও আফ্রিকার খরা ছিল বিপর্যয়কর, তবুও তারা বিশ্বের সবচেয়ে অস্থির, অঞ্চল ও ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত। কেননা, সম্প্রতি বিলিয়ন ডলার মার্কিন সাহায্যের আকস্মিক প্রত্যাহারের ঘটনা বন্যা ও খরার চেয়ে বেশি মানুষকে প্রভাবিত করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজা দখল পরিকল্পনার পাশাপাশি ইউএসএইডের তহবিল বন্ধ করার ইচ্ছা স্পষ্ট বার্তা দেয়, সফট পাওয়ারের ব্যাপারে দেশটির নেতারা যে গুরুত্ব দিতেন, তার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। 

কিন্তু যখন গাজা সিদ্ধান্ত এখনও পরিকল্পনাধীন, ইউএসএইড প্রত্যাহারে তহবিল কমে আসবে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ১০ হাজারেরও বেশি কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ২৯০ জনের চাকরি বহাল থাকবে। আমরা এশিয়ায় ল্যান্ড মাইন তুলে আনার কাজ বন্ধ করা, ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞ সৈনিক ও স্বাধীন মিডিয়ার সমর্থন এবং বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা করতে দেখেছি। এই সপ্তাহে আফ্রিকায় এমপক্স ও ইবোলা প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে; আফ্রিকার বন্দরে জীবন রক্ষাকারী খাবারে পচন ধরেছে। এমনকি ফেন্টানাইলের মতো মাদক পাচারের লক্ষ্য রেখে গৃহীত উদ্যোগও বন্ধ করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি ব্র্যাক। তারা বলেছে, দুর্বল লোকদের সাহায্য করার ৯০ দিন কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে ৩.

৫ মিলিয়ন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজের ক্ষেত্রে সীমিত মওকুফ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের গৃহীত একটি উদ্যোগ হলো পেপফার। এর মাধ্যমে এইচআইভি ও এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সারাবিশ্বের ২০ মিলিয়ন মানুষকে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়। ৯০ দিনের বিরতিতে ১ লাখ ৩৬ হাজার শিশু এইচআইভিতে আক্রান্ত হতে পারে– এমন সতর্কতার পরেই প্রকল্পের কার্যক্রম নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা পায়। তবে এখনও সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের স্ক্রিনিং, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ও পোলিওর চিকিৎসা, মা ও শিশুস্বাস্থ্যে সহায়তা এবং ইবোলা, মারবার্গ ও এমপক্সের প্রাদুর্ভাব কমানোর প্রচেষ্টায় তহবিল প্রদানে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। 
রোববার রাতে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউএসএইড ‘এক গুচ্ছ উগ্র উন্মাদ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল এবং আমরা তাদের বের করে দিচ্ছি।’ তাঁর মুখপাত্র এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমি চাই না, আমার ডলার এভাবে নষ্ট হোক।’

প্রেসিডেন্টের প্রধান উপদেষ্টা ইলন মাস্ক ওই এজেন্সিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রকে ঘৃণা করে এমন উগ্র বাম মার্ক্সবাদী বিদ্বেষকারীদের বাসস্থান’ বলে চিহ্নিত করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনাকে মূলত পুরো পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হবে। এটা মেরামতের বাইরে চলে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এটি বন্ধ করতে যাচ্ছি।’ 

গত সপ্তাহের শেষে এক্স পোস্টে মাস্ক একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন। এতে মিথ্যা দাবি করা উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউএসএইডের মাধ্যমে সরবরাহকৃত আমাদের বৈদেশিক সহায়তার ১০ শতাংশেরও কম প্রকৃতপক্ষে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায় না।’ বাকি ৯০ শতাংশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে,  চুরি করা হয়েছে বা কেবল নষ্ট করা হয়েছে। মূলত এই ১০ শতাংশ উন্নয়নশীল বিশ্বের এনজিও এবং সংস্থাগুলোর কাছে সরাসরি বাজেট থেকে বরাদ্দ থাকে। অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ নষ্ট হয় না। পরিবর্তে এতে সব ধরনের পণ্য ও সেবা অন্তর্ভুক্ত। এরই মাধ্যমে ইউএসএইড, মার্কিন কোম্পানি, এনজিও এবং বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলো এইচআইভি ওষুধ থেকে শুরু করে জরুরি খাদ্য সহায়তা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক মশারি ও অপুষ্টির চিকিৎসা খাতে তহবিল বিতরণ করা হয়। এটি সোজাসাপ্টা অসত্য যে, ৯০ শতাংশ সহায়তা বেঠিক হাতে পড়ে এবং কখনও সবচেয়ে দুর্বলদের কাছে পৌঁছায় না।

এই নতুন অবস্থানটি কেবল ‘আমেরিকা প্রথম’ প্রকল্পের বেলায় প্রযোজ্য নয়, বরং ‘আমেরিকা প্রথম এবং একমাত্র’; আর হামাস, আইএস, হুতি বিদ্রোহী এবং যাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহাবস্থান অসম্ভব, তাদের স্পষ্ট করে জানান দেওয়া। নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি চীনের জন্যও সুসংবাদ, যার নিজস্ব বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ শক্তিশালী হবে। কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রের জায়গায় নিজেকে বসানোর মতো পরিস্থিতি। তহবিল সহায়তা বাতিল করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়বে। 

মার্কিন উদারতাকে প্রায়ই নিছক দাতব্য হিসেবে দেখা হয়। তবে উদার হওয়ার কারণ দেশের স্বার্থ। কারণ আরও স্থিতিশীল বিশ্ব সৃষ্টি আমাদের সবার উপকার করে। ইউএসএইড যদি সংক্রামক রোগের বিস্তার কমাতে; গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো ও সুদানে অপুষ্টি রোধ করতে; সিরিয়ায় আইএসের উত্থান থামাতে এবং গাজা ও ইউক্রেনের একটি ন্যায্য, মানবিক পুনর্গঠনে সমর্থন করতে পারে, তাহলে আমরা সবাই লাভবান হবো। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শুধু সংকীর্ণ ও সবচেয়ে ধোঁয়াশাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিই বহন করে, যা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র যে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে তারই পক্ষে সাফাই গায়। 

গর্ডন ব্রাউন: যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী; দ্য গার্ডিয়ান
থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সহ য ত দ র বল তহব ল সবচ য

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ