কলেজজীবনের বন্ধু সঙ্গে ভালোবাসা দিবসে মিথিলা
Published: 13th, February 2025 GMT
দিন পেরোলেই ভালোবাসা দিবস। এমন দিনকে কেন্দ্র করে নির্মিত নাটকে অতিপরিচিত মুখ ছিলেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। সেই মিথিলা এখন নাটকে নেই। সঙ্গে থাকছেন প্রাক্তন তাহসান খান। তাদের রোমান্টিক নাটক দর্শকরা দেখতেন। ভাবতেন কী সুন্দর জুটি! পর্দার এ জুটি যে বাস্তবেরও জুটি তা মনে করতেই তৃপ্ত হতেন।
আজ দু’জনের পথ দুই দিকে। একে অপরের প্রাক্তন। দু’জনই সংসার বেঁধেছেন অন্য কারও সঙ্গে। মিথিলা কলকাতার সৃজিতের গলায় দিয়েছেন মালা আর তাহসান মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদের সঙ্গে করছেন সংসার। এখনও তাহসানকে দেখলে মিথিলাকে ভাবেন দর্শক, মিথিলা থাকলেও চর্চায় আসেন তাহসান। পথ আলাদা হওয়ার কয়েক বছরও সে প্রমাণ মিলল।
সম্প্রতি একটি আয়োজনে হাজির হয়েছিলেন মিথিলা। সেখানে তাঁকে পেয়েই সাংবাদিকরা প্রশ্ন ছোড়েন প্রাক্তনের বিয়ে নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে মিথিলা এতদিন চুপ থাকলেও এবার আর চুপ থাকলেন না। প্রশ্ন করা হলো প্রাক্তনের বিয়ে নিয়ে মিথিলার কিছু বলার আছে কিনা। অভিনেত্রী বললেন, ‘বিয়ে নিয়ে আমার কিছুই বলার নাই। এটি নিয়ে কথা বলতেও চাই না; যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। এটি আমারও কোনো ব্যক্তিগত বিষয় না, যে আমি কথা বলব। যার জীবনের ঘটনা, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে আমার কিছুই বলার থাকতে পারে না।’
ব্যক্তিচর্চার কথা এবার থাক। মিথিলার কাজের প্রসঙ্গে আসি। কলকাতার বধূ এখন তিনি। তাই দেশে সংসার কাজ সামলিয়ে সেখানেও বছরের অনেকটা সময় থাকতে হয়। থাকতে হয় কাজ নিয়েও। কয়েক বছর আগে কলকাতায় মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত ‘মায়া’। এই ছবি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় অভিষেক হয় বাংলাদেশি অভিনেত্রীর। এরপর একের পর এক কলকাতার ছবিতে থাকছেন তিনি। থাকছেন ওটিটিতেও। দেশের ওটিটিতেও তাঁর মুখরতা কম নয়। চাকরি আর সন্তান সামলিয়ে মিথিলা এখনও দারুণ ব্যস্ত অভিনয়ে।
আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে এ অভিনেত্রীর সিনেমা ‘জলে জ্বলে তারা’। সরকারি অনুদানের এই সিনেমাটির পরিচালনা করেছেন অরুণ চৌধুরী। এতে মিথিলার বিপরীতে আছেন এফ এস নাঈম। এর আগে নাটক-সিনেমায় নাঈমের সঙ্গে দেখা গেলেও সিনেমায় এবারই প্রথম।
অভিনেত্রী বলেন, ‘জলে জ্বলে তারা’ সিনেমায় মিথিলার বিপরীতে অভিনয় করেছেন নাঈম। অভিনয়ের বাইরেও বাস্তব জীবনে তারা কলেজফ্রেন্ড। বন্ধু সম্পর্কে মিথিলা বলেন, নাঈম এ সিনেমায় মাঝির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নাঈম আমার কলেজজীবনের বন্ধু। ওর সঙ্গে নাটকে অভিনয় করেছি। সিনেমায় দু’জনে প্রথম কাজ করলাম। আমাদের পরিচয় বহু বছর আগে থেকে। নাঈম গোছানো মানুষ। কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। নাঈম একজন ভালো মানুষ, সিরিয়াস টাইপের মানুষ।
নিজের চরিত্রটি সম্পর্কে জানিয়ে মিথিলা বললেন, সিনেমার চরিত্রে আমি নদীপারের মেয়ে। নদীর পারে সার্কাস দেখাই, যার কিছুই নেই। একেবারেই অন্যরকম গল্প। ভিন্ন একটি চরিত্র। এমন গল্পে ও চরিত্রে আগে কখনও আমাকে দেখা যায়নি। শুটিং করেছি কালীগঙ্গা নদীর পারে। নদীতেও দৃশ্য ছিল আমার। নৌকায় করে সেসব দৃশ্যের কাজ হয়েছে।
সিনেমায় দেখা যাবে ‘তারা’ নামের মেয়েটি সার্কাসে কাজ করে। নারীকেন্দ্রিক গল্প। তা এমন চরিত্রটি করতে কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, জানতে চাইলে মিথিলা বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কেননা, নৌকার দৃশ্যগুলো সত্যিই চ্যালেঞ্জিং ছিল। অনেক দিন ধরে শুটিং করেছি। রোদের মধ্যে শুটিং করতে কষ্ট হয়েছে। তারপরও শিল্পের প্রয়োজনে কাজ করেছি। তারা চরিত্রটি নিজের ভেতরে ধারণ করাটাও কঠিন ছিল। এমন জীবন কখনও দেখিনি। সেটিই পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য কাজ করতে হয়েছে।’
সিনেমাটিতে মিথিলার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, মায়ের চরিত্রে মুনিরা মিঠু। আরও আছেন আজাদ আবুল কালাম ও শাহেদ আলী।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর কর ছ ন কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি