১৪ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় সুন্দরবন রক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাপা আয়োজিত সুন্দরবন বিনাশী গৃহীত সব প্রকল্প বন্ধের দাবিতে শীর্ষক এক নাগরিক সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

বাপার অন্য দাবিগুলো হলো- উজানের বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সফল আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরবনের জন্য মিঠা পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, সুন্দরবন বিনাশী গৃহীত সব প্রকল্প বন্ধ করতে হবে, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী বা অভ্যন্তরের নির্মাণাধীন ও পরিকল্পিত সরকারি-বেসরকারি সব প্রকল্প ও স্থাপনা নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ ও অপসারণ করতে হবে, বনের পাশ ঘেঁষে বরাদ্দ করা সব শিল্প ও আবাসন প্লট বন্ধ করতে হবে; অপরিকল্পিত গাছকাটা, পশু-পাখি হত্যা ও মাছ ধরা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, বনের গাছে অগ্নি সংযোগ এবং বিষ প্রয়োগে জলজ প্রাণী ও মাছ হত্যা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, সুন্দরবনের মধ্যকার নৌ-চলাচল হ্রাস, নৌ-দুর্ঘটনা প্রশমন, নদীর তলায় ডুবে থাকা নৌযান অপসারণ করতে হবে, সুন্দরবনের সব পোল্ডার অপসারণ করতে হবে, বন বিভাগের জনবল বৃদ্ধি ও তাদের কাজের পরিধি, একাগ্রতা, সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

মানববন্ধনে বাপার সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রে বনভূমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ থাকলেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা কমতে কমতে ১০ শতাংশ অবশিষ্ট আছে। যার ফলে দেশে একটার পর একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো দেশের উন্নয়ন করতে তাদের বনভূমির ওপর হাত দেয় না। অথচ আমাদের দেশের উন্নয়গুলো প্রকৃতিকে ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রথমেই দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় হাত দেওয়া উচিত ছিল।

সাধারণ সম্পাদক মো.

আলমগীর কবির বলেন, বিতাড়িত আওয়ামী সরকারের নেওয়া সুন্দরবন বিনাশী রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে সুন্দরবনের চরিত্র বিনষ্ট হয়েছে। বনের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। এই বনের সঙ্গে যাদের জীবন জীবিকা জড়িত তারা আজ মানবেতর দিনাতিপাত করছে। নদী ও খালগুলোতে মাছ পাওয়া যায় না, এলাকাটা সবসময় ধোঁয়াচ্ছন্ন থাকে, অত্র এলাকার গাছের পাতার ওপর ছাইয়ের স্তর পড়ার ফলে গাছ জীবন চক্র ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাওয়ালীরা মধু পায় না, মাছের প্রজনন নষ্ট হয়েছে, বন্যপ্রাণীর সংখ্যা অনেক কমেছে। জলবায়ুর বিরূপ আচরণ দেখা দিয়েছে অতি গরম অনুভূত হচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় সুন্দরবন দিবস হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত সরকারের করে যাওয়া অনেক দুর্নীতির সংস্কার করছে, পরিবেশের অনেক জায়গায় সংস্কার কাজ চলমান কিন্তু বিগত সরকারের সুন্দরবন ধ্বংসের সংস্কারের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, যা পরিবেশবাদীদের ভাবিয়ে তুলেছে।

প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাপার নির্বাহী সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, ড. মাহবুব হোসেন, বাপা নির্বাহী সদস্য ড. হালিম দাদ খান প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন স ন দরবন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ