কিশোর বয়সে অসংক্রামক রোগ কেন বাড়ছে
Published: 18th, February 2025 GMT
মোটাদাগে আমাদের রোগগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—সংক্রামক ও অসংক্রামক। জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগ হয় এবং একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে, সেসবকে বলে সংক্রামক রোগ। জীবাণু ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে রোগ হলে এবং যেসব রোগ একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় না, সেসবকে বলে অসংক্রামক রোগ। এসব রোগের জন্য জেনেটিক ও পরিবেশগত কিছু কারণ দায়ী থাকে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার ইত্যাদি। আগে আমাদের দেশে সংক্রামক রোগের হার অনেক বেশি ছিল। টিকাদান কর্মসূচির কারণে বর্তমানে সংক্রামক রোগ অনেক কমে গেছে। কিন্তু অন্যদিকে অসংক্রামক রোগের হার বেড়ে গেছে। এসব অসংক্রামক রোগ বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যু ও অক্ষমতার প্রধান কারণ (বিশ্বে ৭০ শতাংশ ও বাংলাদেশে ৬৭ শতাংশ) হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে বিশ্বে অসংক্রামক রোগের কারণে ৪২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
২০২২ সালে দ্য ল্যানসেট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪০টি দেশে ১১-১৭ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করা হয়। কিশোর বয়সে অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির জন্য অপর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, এনার্জি ড্রিংকস, ফাস্ট ফুড ও কার্বোনেটেড কোমল পানীয় গ্রহণ, ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত মেদ, স্থূলতা ইত্যাদি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কিশোর বয়সে এসব রিস্ক ফ্যাক্টর গত ২০০৩-১৭ সালের মধ্যে প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৩৭ শতাংশ দেশেই কিশোরদের অর্ধেকের মধ্যে ৪টি বা তার বেশি অসংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী এসব রিস্ক ফ্যাক্টর বিদ্যমান এবং এই হার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি।
কিশোর বয়সে অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির প্রধান ৩টি কারণ, যা প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি কিশোরের মধ্যে চিহ্নিত করা গেছে, তা হচ্ছে অপর্যাপ্ত ফল গ্রহণ, অপর্যাপ্ত শাকসবজি গ্রহণ এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। কিশোর বয়সের এসব অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও আচরণ অনেক পরিণত বয়সের রোগীর অসংক্রামক রোগের কারণ হিসেবেও চিহ্নিত।
আরও পড়ুনকিশোর ও তরুণেরা রাত জাগে কেন১৬ আগস্ট ২০২৪২০১৯ সালে বিশ্বে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে প্রায় ৮ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ অন্যান্য জটিলতা তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসজনিত মৃত্যুর হার পুরুষের (৫০ দশমিক ৯৭ শতাংশ) তুলনায় নারীর (৫৩ দশমিক ৭২ শতাংশ) মধ্যে বেশি দেখা গেছে।
আধুনিক জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে কিশোর স্থূলতা একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। আগে মানুষ বাড়িতেই ফল, পিঠা, শস্যদানাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে নাশতা সারত। কিন্তু এখন সেসবের বদলে রেস্তোরাঁ বা বাইরে চিকেন ফ্রাই, গ্রিল, স্যুপ, উচ্চ চিনিযুক্ত কোমল পানীয়সহ ক্ষতিকর প্রক্রিয়াজাত খাবার খাচ্ছে। এসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ, চর্বি ও চিনির ব্যবহার হয়, যার ফলে হৃদ্রোগসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগ তৈরি হচ্ছে।
কিশোর বয়সে সারাদিন অলস না থেকে খেলাধুলা ও শারীরিক কসরত করা উচিত.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।