বাসন্তী উৎসবে মেতেছে জবি শিক্ষার্থীরা
Published: 20th, February 2025 GMT
প্রকৃতির রুক্ষতা কেটে দিয়ে বসন্ত জানান দিয়েছে তার বার্তা। ষড়ঋতুর এই দেশে বসন্ত নিয়ে আসে নানা রঙ, সৌন্দর্য্য। বসন্ত কোকিল-পাপিয়ার মতো মানুষের মাঝেও আনন্দ নিয়ে এসেছে।
এ বসন্তকে বরণ করতে নানা আয়োজন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ‘বন বিথীকার আঙিনায় ফাগুনের ইঙ্গিত’ শিরোনামে বসন্তকে বরণের আয়োজন করেন বিভাগটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড.
এ উৎসবকে কেন্দ্র করেন ছেলে-মেয়েদের বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবী-শাড়ি পরতে দেখা যায়। একই আনন্দ ছড়িয়ে গেছে শিক্ষকদের মাঝেও। বসন্তকে বরণ করতে গান, কবিতা, নাচ, আবৃত্তি ও নাটকের আয়োজন করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা বলেন, “একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা সহশিক্ষা কার্যক্রম ও চর্চা করার চেষ্টা করি। প্রতিবারের মত এবারও প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন উপলক্ষে আমরা বসন্ত উৎসব আয়োজন করেছি।
শিক্ষার্থী প্রিয়া আফরোজ বলেন, “সাংস্কৃতিক আয়োজনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ বরাবরই এগিয়ে। বসন্তকে বরণ করতে আমাদের আজকের এই বর্ণিল আয়োজন; সেজেছি পুরো সমাজবিজ্ঞান পরিবার।”
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফারহানা জামান বলেন, “সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আঙিনায় বসন্ত এসেছে। আজকের এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বসন্তের আগমন আরো সুস্পষ্ট ও প্রাণবন্তভাবে ধরা দিয়েছে। সবাইকে বাসন্তী শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।