কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বাসিন্দা জেবুন্নেছা বেগম (৬৬)। তার অভিযোগ, দুই বছর আগে স্বামী মারা গেলে একমাত্র ছেলে ফিরোজ কবির জুয়েল ও তার স্ত্রী তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে তার স্বামীর বাড়ি দখল করে তাকে বের করে দেয়। স্বামীর সংসার ও জমিজমা হারিয়ে পুলিশের কাছে সহায়তা চান তিনি।

পুলিশ সুপার মো.

মাহফুজার রহমানের সহায়তায় অবশেষে নিজের ৪৫ বছরের সংসারে ফিরেছেন জেবুন্নেছা বেগম। আর মায়ের মামলায় ছেলের ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। উপজেলার ধরণীবাড়ি ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার স্বামীর বসতবাড়িতে ফেরেন তিনি।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী বৃদ্ধা জানান, আজিজার রহমান মারা গেলে ছেলে ও তার স্ত্রী জেবুন্নেছা তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছিল। তারা ভোটার আইডি কার্ড, পেনশনের ব্যাংকের চেক বই এবং জমির দলিল নিজেদের কাছে রেখে দেন। তার বাইরে স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধা দিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল।

গত ডিসেম্বর মাসে জেবুন্নেছা ওমরাহ হজ করতে সৌদি আরবে গেলে জুয়েল ও তার স্ত্রী ঘর দখল করে নেয়। এ অবস্থায় তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। গত সোমবার পুলিশ সুপারের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তিনি তদন্তের জন্য লোক পাঠিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে শোনেন এবং ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ছেলে মাকে জায়গা দেবে না বলে জানায়।

এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে উলিপুর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী জেবুন্নেছা বেগম। এতে অনধিকার প্রবেশ, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম, ক্ষতি সাধন, ভয়ভীতি দেওয়াসহ হুকুম দেওয়ার অভিযোগ আনেন। এ মামলায় ভুক্তভোগীর ছেলে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। মামলার আরেক আসামি তার স্ত্রী পলাতক রয়েছেন।

জেবুন্নেছা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে ও তার স্ত্রী আমাকে নির্যাতন করছিল। তারা আমার স্বামীর ৪৫ বছরের স্মৃতি তছনছ করে দিয়ে আমাকে ঘরহারা করেছিল। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে আমার ৪৫ বছরের সংসারে ফিরে আসতে পেরেছি। স্বামীর জমিতে আমার ও মেয়েদের অংশ রয়েছে। আমি আদালতের কাছে আমাদের অধিকার ফিরে চাই।’

উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, পুলিশ সুপার শুরু থেকে মামলাটির বিষয়ে খোঁজখবর রাখছিলেন। তিনি নিজে আন্তরিকতার সঙ্গে ভুক্তভোগী জেবুন্নেছাকে আশ্বস্ত করেন, তার সংসার ফিরিয়ে দেবেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ৪৫ বছর র স

এছাড়াও পড়ুন:

জুলকারনাইনের পাঁচ প্রশ্ন ও রিয়াদকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নতুন পোস্ট দিয়েছেন আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি।

আর্মি ক্যুর চেষ্টা এবং এনসিপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আড়িপাতা ও নজরদারির যে অভিযোগ এনেছেন নাহিদ, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সর্বশেষ পোস্টে পাঁচটি প্রশ্ন রেখে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন জুলকারনাইন।

তার পোস্টের প্রশ্ন পাঁচটি হুবহু এমন-
১. বিপ্লবের আগে ছাত্রশক্তির ঢাবি'তে লোকবল কত ছিলো? 
২. দেশের অন্য কোন-কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কমিটি ছিল?
৩. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের নাহিদ ইসলাম ৫ ই আগস্টের পূর্বে চিনতো কিনা? 
৪. কেবল মাত্র ছাত্র শক্তির বিপ্লব সংগঠিত করার মতো সাংগঠনিক কাঠামো ছিলো কিনা? 
৫. গুটিকয়েক সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী না জানালে সাদেক কায়েমের অবদানের কথা নাহিদ ইসলামরা জাতিকে জানাতেন কিনা?

আরো পড়ুন:

মানুষ পরিবর্তন চায়, এনসিপিকে চায়, নরসিংদীতে নাহিদ

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ 

এসব প্রশ্ন রাখার পর চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের বিষয়ে কথা বলেছেন জুলকারনাইন।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “পুনশ্চঃ নাহিদ ইসলাম, আপনার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, আমি বৈষম্যবিরোধী চাঁদাবাজ রিয়াদকে কোনো রকমের সার্ভেলেন্সে রাখি নাই। আর সে চাঁদা আনতে গিয়ে যে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেটা লাগানোতেও আমার কোনো ভূমিকা নাই।” 
তিনি লেখেন, “রিয়াদ যে আপনার শেল্টারে ছিল সেটা আমি জানতাম। পরে জানতে পারলাম, আপনার ও আপনার বাবার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা। আপনি আমার উপর ক্ষেপে গেছেন কারণ আপনাকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে যে রিয়াদকে ধরিয়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নাকি আমার।” 

“আমি দৃঢ়ভাবে আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই যে, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদকে পাকড়াও করার ঘটনায আমার কোনো হাত নাই।”

বৃহস্পতিবার সকালে নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শিবির নেতা সাদিক কায়েম ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ তুলে তাদের সমালোচনা করেন।

সাদিক কায়েমকে নিয়ে নাহিদ লেখেন, “শিবির নেতা সাদিক কাইয়ুম (কায়েম) সম্প্রতি একটা টকশোতে বলেছেন ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার। 'গুরুবার আড্ডা' পাঠচক্রের সাথে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সাথে জাবির একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে। আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সকল পক্ষের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহোযোগিতা করা মানে এই না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।”

তিনি আরো লেখেন, “দ্বিতীয়ত, সাদিক কাইয়ুম (কায়েম) বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিলনা। কিন্তু ৫ই অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কাইয়ুমকে প্রেস ব্রিফিং এ বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কাইয়ুমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিসে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম।”

“অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম। আর কারা ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা করতে চাইছে, গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে সে বিষয়ে অন্যদিন বলবো,” লেখেন নাহিদ।

জুলকারনাইনের বিরুদ্ধে আর্মি ক্যু করার চেষ্টা ও এনসিপির ওপর নজরদারি করার অভিযোগ তোলেন নাহিদ ইসলাম।

পোস্টে তিনি লেখেন, “২ অগাস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশ্য কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয় যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভিতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। ৫ অগাস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি।”

তিনি আরো লেখেন, “সায়েরগং ৫ অগাস্টের পর বারবার চেষ্টা করেছে আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে। সেক্ষেত্রে সাদিক কাইয়ুমদের ব্যবহার করেছে। এবং তারা ব্যবহৃতও হয়েছে। সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভাইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নাই হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে এ দেশের ইতিহাসে এরকম কখনো হইছে কিনা জানা নাই। কিন্তু মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টিকা যায় না। এরাও টিকবে না।”

নাহিদ ইসলামের এই পোস্টের পর এক বাক্যে প্রথম পোস্টে জুলকারনাইন লেখেন, “ছেলেটা কি সকাল সকাল গঞ্জিকা মেরে দিলো?” অবশ্য কিছু সময় পর পোস্ট মুছে ফেলেন তিনি। 

নাহিদের পোস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েমকে ট্যাগ করে পাল্টা পোস্ট দেন জুলকারনাইন। তিনি লেখেন, “জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলো এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ পর এখন পর্যন্ত যেই ছেলেটার নামে একটাও অসততার অভিযোগ আসেনি, তার নাম আবু সাদিক।”

“স্বাভাবিকভাবেই তাকে ও তার শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে অনেকে মুখরোচক চটকদার আলাপ তৈরি করবে। কিন্তু এসব আলাপ তৈরি করে কি নিজেদের গোপনতম সত্য লুকানো সম্ভব হবে?”, যোগ করেন তিনি। 

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ