পলাশের ফুলে রং ছড়িয়ে এসেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। যদিও এই রং বেদনার-যাতনার! ভাষাশহীদ দিবস আবেগময় স্মৃতি বহন করে। একই সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ায় বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে দিনটি। এ উপলক্ষে ভারতীয় গণমাধ্যমে কলম ধরলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা-নির্মাতা পরমব্রত চ্যাটার্জি। চলুন জেনে নিই, পরমের ভাবনায় বাংলা ভাষাকে—

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বার বার প্রশ্ন ওঠে বাংলা ভাষা সঙ্কটে কি না? আমি বলব, প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাই কিন্তু সঙ্কটে। আসলে প্রযুক্তির অগ্রগতি হচ্ছে। হাতের কাছেই রয়েছে নানা মাধ্যম। এর প্রভাবে একাধিক ভাষা মিলিয়ে মিশিয়ে কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে প্রায় সব ক’টি ভাষাই এখন সঙ্কটে। এর থেকে একটা প্রশ্ন আমার মাথায় বার বার এসেছে— আমরা কি কোনো ভাষা আসলে ঠিক করে শিখছি?

মাতৃভাষা নিয়ে একটা দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে আমার। মাতৃভাষা সঠিকভাবে বলতে না পারলে, অন্য কোনো ভাষাই শেখা সম্ভব নয়। তবে বাংলা ভাষার সামনে বিরাট সঙ্কট, এমনটাও আমি মনে করি না। কেউই আর বাংলা ভাষা শিখছে না, এমনও নয়। যদিও এটা সত্যি, আমাদের প্রজন্মের পরে অর্থাৎ নব্বই  দশকে বা নব্বই দশকের শেষের দিকে যারা জন্মেছে, তারা প্রবলভাবে ‘খিচুড়ি’ ভাষার মধ্যে বড় হয়েছে। তাদের মাতৃভাষা আসলে কোনটা, সেটা তারা নিজেরাও জানে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হয়তো বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি মিলিয়ে মিশিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কিন্তু ওদের লেখা পড়লে বোঝা যায়, ভাষার উপর ওদের দখল কতটা রয়েছে।

আরো পড়ুন:

‘সম্পর্কটা বিয়ের দিকে যাবে না কি ব্রেক-আপ হবে বলা মুশকিল’

প্রেমে পড়লেও বিয়ে করতে চাই না: শ্রীলেখা

অন্তর্জালের যুগে নানা ধরনের ভাষার প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি। যার ফলে মনে হয়, সব ভাষাই এখন সঙ্কটে। অন্তর্জালে হয়তো অন্য ধরনের ভাষায় কথা বলায় স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন মানুষ। কিন্তু লেখার ক্ষেত্রে বা সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে ভাষার সঠিক প্রয়োগ জরুরি। তার মানে এই নয়, সাধু ভাষায় লিখতে হবে। চলিত বাংলা ভাষায় লিখলেও, সেটায় যেন যত্ন থাকে। সেটা যেন অন্তর্জালের ভাষা না হয়ে যায়। আসলে বিবর্তন ও অবলু্প্তি এক জিনিস নয়। আজ থেকে ১০০ বছর আগে অন্য ধরনের বাংলায় কথা বলত মানুষ। আজ সেটা হয় না, এটা খুব স্বাভাবিক। আবার বাংলাদেশে বা পশ্চিমবঙ্গের অন্য জেলাগুলোর বাংলা ভিন্ন ধরনের। কিন্তু সেগুলোও তো বাংলা ভাষা। কলকাতার বাংলাকে মান্য বলে মনে করা হয় অনেক ক্ষেত্রেই, প্রমিত বাংলা ভাষা বলা হয়।

ভাষার বিবর্তন তো হবেই। কিন্তু বাংলা শব্দের জায়গায় হিন্দি বা ইংরেজি শব্দ বসে গেলে তো সেটাকে বিবর্তন বলা যায় না। কমলকুমার মজুমদার বাংলা লেখার ধরণে পরিবর্তন এনেছিলেন। উদ্দেশ্য ও বিধেয়র ব্যবহারও পরিবর্তন করে দেন। আজকের ছেলেমেয়েরা উদ্দেশ্য, বিধেয় বা অন্য ব্যাকরণ জানে তো?

আসলে ভাষা কেবল ভাষা নয়। ভাষা কিন্তু একটা জাতির ইতিহাস। এখন কোনো জাতিকে চিহ্নিত করার নির্ধারক হয়ে উঠছে গায়ের রং, ধর্ম, আচার আচরণ। কিন্তু জাতিকে চিহ্নিত করার সবচেয়ে বড় নির্ধারক হলো ভাষা। নিজের মাতৃভাষাটা তাই জানা জরুরি। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকলে আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে হিন্দি ও ইংরেজিতে কথা বলি। কিন্তু নিজের ভাষাটাও আমি জানি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে বলতে গেলে বাংলাদেশের কথা উঠে আসে ঠিকই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটা কথাই বলার— বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার পিছনে ভারতের সুনির্দিষ্ট অবদান ছিল ঠিকই, কিন্তু তারা কোন দিকে যাবে, কী ভাববে সেটা তাদেরই সিদ্ধান্ত। শুধু বাংলাদেশ নয়। চাইব, যে-কোনো প্রতিবেশী দেশে যেন কোনো ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে। আমাদের দেশ বা আমেরিকা, ইংল্যান্ডেও এই ধরনের সম্ভাবনা দেখলে ব্যক্তিগতভাবে আমি বিচলিত হবো একইভাবে। এর আগেও বিভিন্ন চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছে। তাই বিশ্বাস করি, ফের বাংলাদেশ তার স্থিতি খুঁজে পাবে।

তাই ভাষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে, তা একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলব, প্রত্যেক বাবা-মায়েরই নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষা শেখানো উচিত। বাঙালি বাবা-মা হিসেবে আমি ও পিয়া অবশ্যই চেষ্টা করব, প্রথম দিন থেকে যাতে বাংলা ভাষার সঙ্গে আমাদের সন্তানের যোগ তৈরি হয়। অবশ্যই সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার ভাষাও সে শিখবে। যেমন আমি বা পিয়া শিখেছি। কিছুটা গর্ব করেই বলি, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারি। কিন্তু তার মানে কি, বাংলা ভাষাটা কম জানি? তা তো নয়। চেষ্টা করব, আমাদের সন্তানও যেন ভাষাজ্ঞানে এই ভারসাম্যটা বজায় রাখতে পারে।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র আম দ র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ