নব্বইয়ের শেষে যারা জন্মেছে, তারা ‘খিচুড়ি’ ভাষার মধ্যে বড় হয়েছে: পরমব্রত
Published: 21st, February 2025 GMT
পলাশের ফুলে রং ছড়িয়ে এসেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। যদিও এই রং বেদনার-যাতনার! ভাষাশহীদ দিবস আবেগময় স্মৃতি বহন করে। একই সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ায় বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে দিনটি। এ উপলক্ষে ভারতীয় গণমাধ্যমে কলম ধরলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা-নির্মাতা পরমব্রত চ্যাটার্জি। চলুন জেনে নিই, পরমের ভাবনায় বাংলা ভাষাকে—
আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বার বার প্রশ্ন ওঠে বাংলা ভাষা সঙ্কটে কি না? আমি বলব, প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাই কিন্তু সঙ্কটে। আসলে প্রযুক্তির অগ্রগতি হচ্ছে। হাতের কাছেই রয়েছে নানা মাধ্যম। এর প্রভাবে একাধিক ভাষা মিলিয়ে মিশিয়ে কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে প্রায় সব ক’টি ভাষাই এখন সঙ্কটে। এর থেকে একটা প্রশ্ন আমার মাথায় বার বার এসেছে— আমরা কি কোনো ভাষা আসলে ঠিক করে শিখছি?
মাতৃভাষা নিয়ে একটা দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে আমার। মাতৃভাষা সঠিকভাবে বলতে না পারলে, অন্য কোনো ভাষাই শেখা সম্ভব নয়। তবে বাংলা ভাষার সামনে বিরাট সঙ্কট, এমনটাও আমি মনে করি না। কেউই আর বাংলা ভাষা শিখছে না, এমনও নয়। যদিও এটা সত্যি, আমাদের প্রজন্মের পরে অর্থাৎ নব্বই দশকে বা নব্বই দশকের শেষের দিকে যারা জন্মেছে, তারা প্রবলভাবে ‘খিচুড়ি’ ভাষার মধ্যে বড় হয়েছে। তাদের মাতৃভাষা আসলে কোনটা, সেটা তারা নিজেরাও জানে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হয়তো বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি মিলিয়ে মিশিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কিন্তু ওদের লেখা পড়লে বোঝা যায়, ভাষার উপর ওদের দখল কতটা রয়েছে।
আরো পড়ুন:
‘সম্পর্কটা বিয়ের দিকে যাবে না কি ব্রেক-আপ হবে বলা মুশকিল’
প্রেমে পড়লেও বিয়ে করতে চাই না: শ্রীলেখা
অন্তর্জালের যুগে নানা ধরনের ভাষার প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি। যার ফলে মনে হয়, সব ভাষাই এখন সঙ্কটে। অন্তর্জালে হয়তো অন্য ধরনের ভাষায় কথা বলায় স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন মানুষ। কিন্তু লেখার ক্ষেত্রে বা সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে ভাষার সঠিক প্রয়োগ জরুরি। তার মানে এই নয়, সাধু ভাষায় লিখতে হবে। চলিত বাংলা ভাষায় লিখলেও, সেটায় যেন যত্ন থাকে। সেটা যেন অন্তর্জালের ভাষা না হয়ে যায়। আসলে বিবর্তন ও অবলু্প্তি এক জিনিস নয়। আজ থেকে ১০০ বছর আগে অন্য ধরনের বাংলায় কথা বলত মানুষ। আজ সেটা হয় না, এটা খুব স্বাভাবিক। আবার বাংলাদেশে বা পশ্চিমবঙ্গের অন্য জেলাগুলোর বাংলা ভিন্ন ধরনের। কিন্তু সেগুলোও তো বাংলা ভাষা। কলকাতার বাংলাকে মান্য বলে মনে করা হয় অনেক ক্ষেত্রেই, প্রমিত বাংলা ভাষা বলা হয়।
ভাষার বিবর্তন তো হবেই। কিন্তু বাংলা শব্দের জায়গায় হিন্দি বা ইংরেজি শব্দ বসে গেলে তো সেটাকে বিবর্তন বলা যায় না। কমলকুমার মজুমদার বাংলা লেখার ধরণে পরিবর্তন এনেছিলেন। উদ্দেশ্য ও বিধেয়র ব্যবহারও পরিবর্তন করে দেন। আজকের ছেলেমেয়েরা উদ্দেশ্য, বিধেয় বা অন্য ব্যাকরণ জানে তো?
আসলে ভাষা কেবল ভাষা নয়। ভাষা কিন্তু একটা জাতির ইতিহাস। এখন কোনো জাতিকে চিহ্নিত করার নির্ধারক হয়ে উঠছে গায়ের রং, ধর্ম, আচার আচরণ। কিন্তু জাতিকে চিহ্নিত করার সবচেয়ে বড় নির্ধারক হলো ভাষা। নিজের মাতৃভাষাটা তাই জানা জরুরি। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকলে আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে হিন্দি ও ইংরেজিতে কথা বলি। কিন্তু নিজের ভাষাটাও আমি জানি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে বলতে গেলে বাংলাদেশের কথা উঠে আসে ঠিকই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটা কথাই বলার— বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার পিছনে ভারতের সুনির্দিষ্ট অবদান ছিল ঠিকই, কিন্তু তারা কোন দিকে যাবে, কী ভাববে সেটা তাদেরই সিদ্ধান্ত। শুধু বাংলাদেশ নয়। চাইব, যে-কোনো প্রতিবেশী দেশে যেন কোনো ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে। আমাদের দেশ বা আমেরিকা, ইংল্যান্ডেও এই ধরনের সম্ভাবনা দেখলে ব্যক্তিগতভাবে আমি বিচলিত হবো একইভাবে। এর আগেও বিভিন্ন চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছে। তাই বিশ্বাস করি, ফের বাংলাদেশ তার স্থিতি খুঁজে পাবে।
তাই ভাষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে, তা একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলব, প্রত্যেক বাবা-মায়েরই নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষা শেখানো উচিত। বাঙালি বাবা-মা হিসেবে আমি ও পিয়া অবশ্যই চেষ্টা করব, প্রথম দিন থেকে যাতে বাংলা ভাষার সঙ্গে আমাদের সন্তানের যোগ তৈরি হয়। অবশ্যই সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার ভাষাও সে শিখবে। যেমন আমি বা পিয়া শিখেছি। কিছুটা গর্ব করেই বলি, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারি। কিন্তু তার মানে কি, বাংলা ভাষাটা কম জানি? তা তো নয়। চেষ্টা করব, আমাদের সন্তানও যেন ভাষাজ্ঞানে এই ভারসাম্যটা বজায় রাখতে পারে।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র আম দ র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বকাপে জায়গা করতে বিশ্বকাপজয়ীকে কোচের দায়িত্ব দিল ইতালি
দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা যে কতটা গৌরবের আর আনন্দের, সেটা একজন বিশ্বকাপ জয়ের-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়ের চেয়ে আর কে ভালো বোঝাতে পারবেন?
আর এমন ভাবনা থেকেই এবার গানারো গাত্তুসোকে জাতীয় ফুটবল দলের কোচ নিয়োগ দিয়েছে ইতালি। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা করা নিয়ে শঙ্কায় আছে। এর আগে খেলতে পারেনি ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে। টানা তৃতীয় আসর যাতে দর্শক হয়ে না থাকতে হয়, সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী গাত্তুসোকে দায়িত্ব দিয়েছে ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন এফআইজিসি।
২০২৬ বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে ইতালি খেলছে ‘আই’ গ্রুপে। পাঁচ দলের গ্রুপ থেকে শুধু শীর্ষ স্থানধারী দলই বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করতে পারবে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দল প্লে-অফে খেলার সুযোগ পাবে। এই মুহূর্তে ‘আই’ গ্রুপে ৪ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে নরওয়ে। ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইসরায়েল। ইতালির অবস্থান তিনে, ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহে নরওয়ের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারার পরই এফআইজিসি কোচ লুসিয়া স্পালেত্তিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিদায় নিশ্চিতের পরও সোমবার মল দোবার বিপক্ষে ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়ান স্পালেত্তি, ম্যাচটি ইতালি ২-০ ব্যবধানে জেতে।
নরওয়ে নিজেদের প্রথম চার ম্যাচের চারটিতেই জেতায় ইতালি এখন চাপে আছে। হাতে এখনো ৬টি ম্যাচ বাকি। তবে শীর্ষস্থানে থাকতে হলে নিজেদের বাকি সব ম্যাচ তো জিততেই হবে, নরওয়েকেও পয়েন্ট হারাতে হবে। আর এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই ইতালি দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন গাত্তুসো।
৪৭ বছর বয়সী গাত্তুসো ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ইতালির জাতীয় দলে খেলেছেন। এর মধ্যে ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সেরা পারফরমারদের একজন ছিলেন। সব ম্যাচেই শুরুর একাদশে ছিলেন, পরে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের অলস্টার একাদশেও। ২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ক্লাব সিওনে খেলোয়াড় কাম কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন থেকে গত ১২ বছরে মোট ৯টি ক্লাবের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন গাত্তুসো। যার মধ্যে আছে নিজের সাবেক ক্লাব এসি মিলান এবং ভ্যালেন্সিয়া ও মার্শেই। সর্বশেষ ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব হাইদুক স্প্লিটের দায়িত্বে ছিলেন, যা গত মাসে পারস্পরিক সমঝোতায় ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোচ হিসেবে মোট ৩৭৬টি ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে গাত্তুসোর জয়ের হার ৪২.৮২ শতাংশ। জিতেছেন ১৬১টিতে, ড্র ১০৮ আর হার ১০৭-এ।
এখন দেখার বিষয়, ইতালি দলে তার সাফল্যের হার কতটা হয়, বিশেষ করে যখন দলের দরকার শতভাগ জয়। ইতালি জাতীয় দল তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে ৫ সেপ্টেম্বর এস্তোনিয়ার বিপক্ষে।