নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিএম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটায় স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত শিক্ষক সম্মাননা ও স্মারকগ্রন্থ ‘ব্ল্যাকবোর্ড’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনকে ‘পতিত ফ্যাসিস্টকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে’ অভিযোগ এনে বাতিল করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘ভিন্ন নামে আওয়ামী লীগের সমাগমের চেষ্টার অনুষ্ঠান বাতিল’- এই শিরোনামে দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘নারায়ণগঞ্জ বন্দরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক্তন ছাত্রদের মিলনমেলার নামে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টার খবর পাওয়া গেছে। ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ নামে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে আশঙ্কা করে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে অনুষ্ঠান বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।’

প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বন্দর বিএম ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান অনুষ্ঠান বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকমকে বলেন, “প্রাক্তন ছাত্ররা ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ ব্যানারে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সেটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-এর মুখপাত্র ইউসুফ আতিক মানিকের গ্রুপ পোস্ট থেকে জানা যায়, “উক্ত বিদ্যালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত তিনজন শ্রদ্ধাভাজন গুণী স্যারকে (অজিত স্যার, গনি স্যার ও হামিদ স্যার) এই আয়োজনে সম্মাননা প্রদান করার পরিকল্পনা ছিল বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের।”

ইউসুফ আতিক মানিকের গ্রুপ পোস্ট থেকে আরও জানা যায়, “আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, শিক্ষক সম্মাননা ও স্মারকগ্রন্থ ‘ব্ল্যাকবোর্ড’- এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি পূর্ব ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার অনিবার্য কারণবশত স্থগিত ঘোষণা করতে হচ্ছে।”

বি এম ইউনিয়ন স্কুলের ২০০৭ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “নিঃসন্দেহে এটি কষ্ট পাওয়ার মতো বিষয়। যখন থেকে এই আয়োজন সম্পর্কে জানতে পারি, তখন থেকে এটা নিয়ে একটা আশা। গত শুক্রবারে এই অনুষ্ঠানের একটা প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পর স্কুল নিয়ে নস্টালজিক ব্যাপারগুলো খুব কাজ করছিল। এতদিন পর সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র সবার সাথে দেখা হবে। খুব আশাবাদী ছিলাম প্রোগ্রামটা নিয়ে। কাল রাতে জানতে পারি প্রোগ্রাম হবে না। প্রোগ্রামটা না হওয়াতে ‘ব্যথিত’- এই শব্দটায় খুব কমই বলা হয়।”

বি এম ইউনিয়ন স্কুলের এসএসসি ’৯১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই স্বনামখ্যাত বিদ্যালয়টির বয়স ১২৫ বছর চলছে। পরিতাপের বিষয় হলো, কোনো অদৃশ্য কারণে বিদ্যালয়টির জন্মশতবর্ষ উদযাপিত হয়নি। ১২৫ বছরে এসে আমাদের সময়ের তিন গুণী স্যারকে সম্মাননা ও স্মারকগ্রন্থ ব্ল্যাকবোর্ড এর মোড়ক উন্মোচিত হওয়ার কথা থাকলেও অপ্রীতিকর ঘটনার অজুহাতে শেষপর্যন্ত এই অনুষ্ঠানটিও ভেস্তে গেল।”

অনুষ্ঠান স্থগিতের বিষয়ে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এর মুখপাত্র ইউসুফ আতিক মানিক বলেন, “বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সাবেক ছাত্রদের একটি সংগঠন, এখানে আমাদের গঠনতন্ত্রে রাজনৈতিক পরিচয়ে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি নিজেও কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত নই, কখনই ছিলাম না। আমি যাদেরকে নিয়ে কাজ করছি তারা কেউ রাজনীতিতে সক্রিয় না। আমরা আমাদের বিএম স্কুলের তিনজন স্বনামধন্য শিক্ষক, যারা জীবন সায়াহ্নে উপস্থিত, আমাদের আক্ষেপ তাদের জন্য আমরা কিছুই করিনি কখনো, সেই তিনজন শিক্ষককে সংবর্ধনা বা সম্মাননা দেওয়ার জন্য এই তারিখটা চূড়ান্ত করেছিলাম এই শহীদ দিবসে। পাশাপাশি একটি স্মারকগ্রন্থ আমরা মোড়ক উন্মোচন করতে চেয়েছিলাম। এই স্মারকগ্রন্থে আমাদের স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক বাণী দিয়েছেন, এডিসি মহোদয় বাণী দিয়েছেন, আমাদের সকল আয়োজন কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল, ’৬৬ ব্যাচ থেকে রানিং ব্যাচ পর্যন্ত সবার লেখা আছে। খুব সমৃদ্ধ একটা স্মারকগ্রন্থ আমরা মোড়ক উন্মোচন করতে যাচ্ছিলাম।”

মানিক আরো বলেন, “সকল আয়োজন কমপ্লিট কিন্তু অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা যারা কার্যক্রমটা চালাচ্ছি আমরা নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর, ছাত্রদের ব্যানারে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এদের পুনরজ্জীবিত করতে যাচ্ছি— বি এম স্কুলের ব্যানারে। এই ট্যাগটা কারা লাগিয়েছে আমরা আদৌ জানি না। আমরা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করছি, অথচ আমরা নিজেরাই জানি না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি শুধু বলেন, প্রশাসন থেকে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে নাশকতার আশঙ্কা এবং সেই অজুহাতে প্রশাসনিক কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি এবং শিক্ষক সম্মাননা ও স্মারকগ্রন্থ ‘ব্ল্যাকবোর্ড’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মো.

সাকিব আল রাব্বির বলেন, “আমার এ বিষয়ে কিছু জানা নেই।”

একই বিষয়ে আবার প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “প্রশাসন, কোন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে? কোন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমার জানা নেই। কোন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আপনি হেড মাস্টার সাহেবের কাছ থেকেই জেনে নিন।”

বিএম ইউনিয়ন উচ্চ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন- “আমি একটা অনুষ্ঠানে আছি, আগামীকাল ফোন দেন।” এ কথা বলার পর তিনি ফোন কেটে দেন।

ঢাকা/অনিক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন ব ত ল ন র য ণগঞ জ ন অন ষ ঠ ন অন ষ ঠ ন র ন ড কল জ র ব ত ল কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে এটিএম বুথে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত পলাতক

গাজীপুরের শ্রীপুরে অধিক বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক নারী পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরীর বিরুদ্ধে।

সোমবার (১৬ জুন) সকালে ওই নারী শ্রমিকের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। 

রবিবার (১৫ জুন) সকালে শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের এমসি বাজার এলাকায় তালহা স্পিনিং মিল সংলগ্ন একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ।

ভুক্তভোগী নারী স্থানীয় একটি কারখানায় ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। অভিযুক্ত নিরাপত্তা প্রহরী মো. লিটন (৩৫) তালহা স্পিনিং মিল সংলগ্ন বুথে দায়িত্ব পালন করতেন। 

লিটন ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার ডুবাইল গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়ালের ছেলে। বর্তমানে তিনি মুলাইদ গ্রামের আতাব উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন এবং ফাস্ট সলিউশন লিমিটেড নামের একটি নিরাপত্তা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে চাকরি করতেন।

থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, এটিএম বুথে টাকা তোলার সূত্র ধরে এই নারী শ্রমিকের সঙ্গে পরিচয় হয় লিটনের। একপর্যায়ে লিটন ভুক্তভোগীকে ১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রবিবার সকালে তার বাবার মোবাইলে ফোন করে ডেকে আনেন। সকাল ৬টার দিকে বুথে গেলে লিটন তাকে ভেতরে একটি ছোট কক্ষে বসিয়ে রাখেন এবং জানান যে, নতুন চাকরির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে তার সাক্ষাৎকার নেবেন।

ভিকটিমের বাবা দুইবার মেয়ে চাকরির বিষয়ে খোঁজ নিলে লিটন জানান, চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক আছে। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেব। এরপর আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে লিটন কক্ষে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি ফেরার পথে মেয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়।

ঘটনার বিষয়ে ফাস্ট সলিউশন লিমিটেডের সুপারভাইজার মো. হানিফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারিক জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযুক্ত লিটন পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দ্রুতই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন করা হয়েছে।

ঢাকা/রফিক/টিপু  

সম্পর্কিত নিবন্ধ