না.গঞ্জে অপ্রীতিকর ঘটনার অজুহাতে শিক্ষক সম্মাননা অনুষ্ঠান বাতিল
Published: 21st, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিএম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটায় স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত শিক্ষক সম্মাননা ও স্মারকগ্রন্থ ‘ব্ল্যাকবোর্ড’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনকে ‘পতিত ফ্যাসিস্টকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে’ অভিযোগ এনে বাতিল করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘ভিন্ন নামে আওয়ামী লীগের সমাগমের চেষ্টার অনুষ্ঠান বাতিল’- এই শিরোনামে দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘নারায়ণগঞ্জ বন্দরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক্তন ছাত্রদের মিলনমেলার নামে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টার খবর পাওয়া গেছে। ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ নামে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে আশঙ্কা করে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে অনুষ্ঠান বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।’
প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বন্দর বিএম ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান অনুষ্ঠান বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকমকে বলেন, “প্রাক্তন ছাত্ররা ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ ব্যানারে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সেটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-এর মুখপাত্র ইউসুফ আতিক মানিকের গ্রুপ পোস্ট থেকে জানা যায়, “উক্ত বিদ্যালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত তিনজন শ্রদ্ধাভাজন গুণী স্যারকে (অজিত স্যার, গনি স্যার ও হামিদ স্যার) এই আয়োজনে সম্মাননা প্রদান করার পরিকল্পনা ছিল বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের।”
ইউসুফ আতিক মানিকের গ্রুপ পোস্ট থেকে আরও জানা যায়, “আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, শিক্ষক সম্মাননা ও স্মারকগ্রন্থ ‘ব্ল্যাকবোর্ড’- এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি পূর্ব ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার অনিবার্য কারণবশত স্থগিত ঘোষণা করতে হচ্ছে।”
বি এম ইউনিয়ন স্কুলের ২০০৭ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “নিঃসন্দেহে এটি কষ্ট পাওয়ার মতো বিষয়। যখন থেকে এই আয়োজন সম্পর্কে জানতে পারি, তখন থেকে এটা নিয়ে একটা আশা। গত শুক্রবারে এই অনুষ্ঠানের একটা প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পর স্কুল নিয়ে নস্টালজিক ব্যাপারগুলো খুব কাজ করছিল। এতদিন পর সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র সবার সাথে দেখা হবে। খুব আশাবাদী ছিলাম প্রোগ্রামটা নিয়ে। কাল রাতে জানতে পারি প্রোগ্রাম হবে না। প্রোগ্রামটা না হওয়াতে ‘ব্যথিত’- এই শব্দটায় খুব কমই বলা হয়।”
বি এম ইউনিয়ন স্কুলের এসএসসি ’৯১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই স্বনামখ্যাত বিদ্যালয়টির বয়স ১২৫ বছর চলছে। পরিতাপের বিষয় হলো, কোনো অদৃশ্য কারণে বিদ্যালয়টির জন্মশতবর্ষ উদযাপিত হয়নি। ১২৫ বছরে এসে আমাদের সময়ের তিন গুণী স্যারকে সম্মাননা ও স্মারকগ্রন্থ ব্ল্যাকবোর্ড এর মোড়ক উন্মোচিত হওয়ার কথা থাকলেও অপ্রীতিকর ঘটনার অজুহাতে শেষপর্যন্ত এই অনুষ্ঠানটিও ভেস্তে গেল।”
অনুষ্ঠান স্থগিতের বিষয়ে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এর মুখপাত্র ইউসুফ আতিক মানিক বলেন, “বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সাবেক ছাত্রদের একটি সংগঠন, এখানে আমাদের গঠনতন্ত্রে রাজনৈতিক পরিচয়ে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি নিজেও কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত নই, কখনই ছিলাম না। আমি যাদেরকে নিয়ে কাজ করছি তারা কেউ রাজনীতিতে সক্রিয় না। আমরা আমাদের বিএম স্কুলের তিনজন স্বনামধন্য শিক্ষক, যারা জীবন সায়াহ্নে উপস্থিত, আমাদের আক্ষেপ তাদের জন্য আমরা কিছুই করিনি কখনো, সেই তিনজন শিক্ষককে সংবর্ধনা বা সম্মাননা দেওয়ার জন্য এই তারিখটা চূড়ান্ত করেছিলাম এই শহীদ দিবসে। পাশাপাশি একটি স্মারকগ্রন্থ আমরা মোড়ক উন্মোচন করতে চেয়েছিলাম। এই স্মারকগ্রন্থে আমাদের স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক বাণী দিয়েছেন, এডিসি মহোদয় বাণী দিয়েছেন, আমাদের সকল আয়োজন কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল, ’৬৬ ব্যাচ থেকে রানিং ব্যাচ পর্যন্ত সবার লেখা আছে। খুব সমৃদ্ধ একটা স্মারকগ্রন্থ আমরা মোড়ক উন্মোচন করতে যাচ্ছিলাম।”
মানিক আরো বলেন, “সকল আয়োজন কমপ্লিট কিন্তু অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা যারা কার্যক্রমটা চালাচ্ছি আমরা নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর, ছাত্রদের ব্যানারে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এদের পুনরজ্জীবিত করতে যাচ্ছি— বি এম স্কুলের ব্যানারে। এই ট্যাগটা কারা লাগিয়েছে আমরা আদৌ জানি না। আমরা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করছি, অথচ আমরা নিজেরাই জানি না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি শুধু বলেন, প্রশাসন থেকে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে নাশকতার আশঙ্কা এবং সেই অজুহাতে প্রশাসনিক কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও বি এম ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি এবং শিক্ষক সম্মাননা ও স্মারকগ্রন্থ ‘ব্ল্যাকবোর্ড’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মো.
একই বিষয়ে আবার প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “প্রশাসন, কোন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে? কোন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমার জানা নেই। কোন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আপনি হেড মাস্টার সাহেবের কাছ থেকেই জেনে নিন।”
বিএম ইউনিয়ন উচ্চ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন- “আমি একটা অনুষ্ঠানে আছি, আগামীকাল ফোন দেন।” এ কথা বলার পর তিনি ফোন কেটে দেন।
ঢাকা/অনিক/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন ব ত ল ন র য ণগঞ জ ন অন ষ ঠ ন অন ষ ঠ ন র ন ড কল জ র ব ত ল কর আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে: আইএসপিআর
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা সেনা কর্মকর্তাকে রাজধানীর উত্তরা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। গত ১৭ জুলাই তাঁকে আটক করা হয় বলে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর এ খবর জানিয়েছে। আইএসপিআর বলেছে, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জনৈক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা–সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে।
প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। এ ব্যাপারে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ চলছে।
ওই সেনা কর্মকর্তার কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা–সংক্রান্ত ব্যত্যয়ের বিষয়ে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতের সুপারিশ ও সেনা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই বৈঠকে মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ ওঠে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেনা সদরের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ এ নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত জানাল আইএসপিআর।
আরও পড়ুননিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে এক মেজর১৫ ঘণ্টা আগেএ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কেবি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।