দিয়েগো সিমিওনে বেজায় খুশি। আতলেতিকো মাদ্রিদ কোচ খুশি কারণ তাঁর ২ গোলে পিছিয়ে পরেও বার্সেলোনার সঙ্গে ৪-৪ গোলে ড্র করেছে।

স্বাভাবিক কারণেই হান্সি ফ্লিকের মেজাজ খারাপ। ৮৩ মিনিট পর্যন্ত ৪-২ গোলে এগিয়ে থাকার পরও ম্যাচ জিততে না পারলে এমনই তো হওয়ার কথা। অথচ কাল রাতে কোপা দেল রের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ড্র করেই খুশি হওয়ার কথা ছিল। ম্যাচের বয়স ৬ মিনিট হতে না হতেই যে প্রতিপক্ষ আতলেতিকো এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে।
সেখান থেকেই দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বার্সা উল্টো এগিয়ে যায় ৪-২ গোলে। পরের গল্পটা ম্যাচের শেষ দিকে আতলেতিকোর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের।

৪-২ গোলে এগিয়ে গিয়েও ড্র। সেটিও ঘরের মাঠে। ফ্লিকের খ্যাপাটাই স্বাভাবিক। ম্যাচ শেষে স্প্যানিশ টেলিভিশন চ্যানেল টিভিইকে ফ্লিক বলেন, ‘এই ফলে আমি হতাশ কারণ শুরুতে ২ গোলে খেলেও কী দারুণভাবেই না আমরা ফিরে এসেছিলাম। একটা  সময় তো ৪-২ গোলে এগিয়েও গেলাম। আমরা কত সুযোগ তৈরি করলাম। কিন্তু সবকিছুই বৃথা গেল। শেষ কয়েক মিনিটে আমরা ওদের (আতলেতিকো) ফেরার সুযোগ করে দিলাম।’

প্রতিপক্ষ আতলেতিকোর প্রশংসাও করেছেন ফ্লিক, ‘আতলেতিকো খুব ভালো খেলেছে। আমার খুব ভালো ও শক্তিশালী এক দলের বিপক্ষে খেলেছি। তবে ৮০ মিনিট পর্যন্ত আমাদের আধিপত্য ছিল, শেষ কয়েক মিনিট রক্ষণকাজটা ভালোভাবে করতে পারিনি। চতুর্থ গোলটা তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। ’

ম্যাচ শুরুর পর ১ মিনিট না হতেই হুলিয়ান আলভারাজের গোলে এগিয়ে যায় আতলেতিকো। ৫ মিনিট পর ব্যবধানটা দ্বিগুণ করেন আঁতোয়ান গ্রিজমান। পেদ্রি (১৯ মিনিট), পাউ কুবরাসি (২১) ও ইনিওগো মার্তিনেজের (৪১) গোলে ৩-২ ব্যবধানে প্রথমার্ধ শেষ করে বার্সা। ৭৪ মিনিটে বার্সার চতুর্থ গোলটি আসে রবার্ট লেভানডফস্কির কাছ থেকে। ৮৪ মিনিটে মার্কোস ইয়োরেন্তের গোলে ব্যবধান কমানো আতলেতিকো সমতা আনে যোগ  করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে। আলেকসান্দার সরলথ করেন ৪-৪।

এমন নাটকীয়ভাবে শেষ পর্যন্ত ড্র করতে পারায় খেলোয়াড়দের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন আতলেতিকো কোচ সিমিওনে, ‘এই দলটার টিম স্পিরিটই আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে। গ্লাডিয়েটরসূলভ মানসিকতা আমাদের খেলোয়াড়দের। অবিশ্বাস্য। বার্সেলোনা দলটা অনন্যসাধারণ, তবে আমরাও কম নই, আমরা কী সেটি তো দেখালামই।’

সরলথের করা চতুর্থ গোলটির পর বিশ্বজয়ের উদ্‌যাপনের মেতে ছিল আতলেতিকো। সেটি নিয়েও বলেছেন সিমিওনে, ‘ওটা ছিল আনন্দে ফেটে পড়া। ৪-২ থেকে ফেরাটা কঠিন মনে হচ্ছিল। তবে আমাদের খেলোয়াড়েরা প্রচণ্ড সাহসী। ওরা সমতা ফিরিয়েছে। এখন অপেক্ষা ২ এপ্রিলের দ্বিতীয় লেগের।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আতল ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ