জয়পুরহাটে দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্বে এক গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ
Published: 28th, February 2025 GMT
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে হামলা-মারপিট ও ভাঙচুরের ঘটনার পর একটি এলাকার গ্রাহকেরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সেখানে দ্রুত ব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালুর দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া হামলা ও মারপিটে আহত ব্যক্তিদের দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দেওয়া হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নুরনবী ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন। আজ শুক্রবার পাকুরদাড়িয়া গ্রামের মোড়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনজয়পুরহাটে ইন্টারনেট সেবার ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে হামলা-মারধর, আহত ১৫২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাকুরডারিয়া গ্রামের মোড়ে হামলা-মারপিট ও ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে সাতজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন। তাঁদের মধ্যে দুটি ইউনিয়নের দুজন ছাত্রদলের নেতা রয়েছেন। এ নিয়ে গত বুধবার প্রথম আলো অনলাইন ও পরদিন বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নুরনবী ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, তিলকপুর নেটওয়ার্কের মালিক বেলাল হোসেনের কাছ থেকে তিনি চুক্তিতে ব্যান্ডউইথ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। হঠাৎ করেই বেলাল হোসেন তাঁর কাছে ব্যবসার অর্ধেক এবং পরে সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করেন। এতে তিনি রাজি হননি। এ কারণে বেলাল হোসেন তাঁর (নুরনবী ইসলাম) ওপর ওপর ক্ষিপ্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এলাকায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্টে ফ্রি ইন্টারনেট সংযোগের ঘোষণা দিয়েছিলেন নুরনবী। এতে বেলাল হোসেন আপত্তি জানান। এসব ঘটনার জের ধরে বেলাল হোসেন ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে নুরনবী গ্রাহকের চাপে সেবা নিশ্চিতে রাজশাহী থেকে অন্য একটি কোম্পানির ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। তবে তিনি বেলালের তার দিয়েই সংযোগ নিয়েছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে। পরে নিজেই তার কিনে সংযোগ দিয়েছেন নুরনবী। তিনি বলেন, ‘এসব কারণে বেলাল আমার ইন্টারনেট ব্যবসা বন্ধ ও মামলার হুমকি দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার উভয়ের মধ্যে বৈঠকে বসার কথা ছিল। ওই দিন বসার আগেই বেলাল হোসেন আমাকে হুমকি দিয়ে আমার গলা চেপে ধরেন।’
ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নুরনবী ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে চন্দনদীঘি বাজারে গ্রামবাসীর সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি। বেলাল তাঁর দলবল নিয়ে তিলকপুর বাজারে ফেরার পথে পাকুরডারিয়া তিনমাথা মোড়ে এসে হামলা-মারপিট ও দোকান ভাঙচুর করেন। এ সময় গ্রামবাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেখানে বেলাল হোসেনের লোকজন তিনটি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান। এ ঘটনার সময় সেখানে ছিলাম না। বেলাল ও তাঁর লোকজন রায়কালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদকে কুপিয়ে জখম করেন। গ্রামবাসীর কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় বেলাল হোসেনের বড় ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় আমাকেসহ অন্যদের আসামি করা হয়েছে। এটি একটি মিথ্যা মামলা। ওই ঘটনার পর পাকুরদাড়িয়ার আশপাশের ৭০ জন গ্রাহকের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ইন্টারনেট ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, ‘চন্দনদীঘি বাজারের সালিস থেকে ফেরার পথে পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে আমার ভাই তিলকপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ইমদাদুল হকসহ আমাদের ছয়জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আমার ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। তা ছাড়া আমি কোনো সময় ব্যবসার মালিকানা দাবি করিনি।’
দ্রুত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের দাবি জানিয়েছেন পাকুরদাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা। ওই গ্রামের সোহেল হোসেন বলেন, ‘দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্বে ঘটনায় হামলা-মারপিট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর আমাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। আমরা দ্রুত ইন্টারনেট সেবা চালুর দাবি জানাচ্ছি।’
ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্বে হামলা-মারপিটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে নিশ্চিত করে আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ বন দ ব ইসল ম এ ঘটন ঘটন য় র ঘটন ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।