শহর কিংবা মফস্সলের জীবনে নানা ধরনের জরুরি প্রয়োজনে আমরা ঋণ নিই। অল্প টাকার প্রয়োজন হলে মানুষ সাধারণত পারসোনাল লোন বা ভোক্তাঋণ নেন। এই ঋণ সাধারণত ব্যক্তিগত কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। আয়ের সামর্থ্য অনুসারে গ্রাহককে এসব ঋণ দেয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সাধারণত চাকরিজীবীরা ব্যক্তিগত ঋণ বেশি নেন। অনেক ব্যবসায়ীও এই ঋণ নেন।
এই ঋণের সুবিধা হলো, আপনি যেকোনো কাজে ওই টাকা খরচ করতে পারবেন। ঋণের বিপরীতে সাধারণত জামানত দিতে হয় না।
যা দেখবেন
ঋণ নেওয়ার আগে মোটাদাগে চারটি বিষয় খতিয়ে দেখা উচিত। এক.
তাৎক্ষণিকভাবে টাকা মিলবে কি না
সাধারণত জরুরি প্রয়োজনেই মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ নেন। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পর দ্রুত অনুমোদিত হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে টাকাও হাতে পেয়ে যাবেন, এমন প্রত্যাশা করেন তাঁরা। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে টাকা যাতে দ্রুত হাতে পাওয়া যায়, এমন ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত যে ব্যাংকে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থাকে, সেই ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁরা।
পরিশোধের সময়সীমা
ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার আগে আপনাকে ভাবতে হবে, এই ঋণ কত দিনে পরিশোধ করতে হবে। বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ থাকলে প্রতি মাসে কিস্তির পরিমাণ কমে যায়। আপনার ওপর চাপ কম থাকবে।
দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ বছর বা ৬০ মাস সময়ে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দেয়। এবার আপনি ভেবে দেখুন, আপনার জন্য কিস্তির সময়সীমা কতটা উপযোগী। কিস্তি পরিশোধ কীভাবে করা হবে, তা–ও নজরে রাখতে হবে। যদি প্রতি মাসে ব্যাংক হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হয়, ভালো গ্রাহককে তা একধরনের স্বস্তি দেয়। অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি পরিশোধ করা যায় কি না, তা বিবেচনায় আনতে হবে। সশরীর কিস্তি পরিশোধের ঝক্কিঝামেলা এড়াতে চান অনেকে, সে জন্য।
সহনীয় সুদের হার
ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার কত, তাও দেখতে হবে। বেশি টাকা দেবে, কিন্তু সুদের হার অনেক বেশি—তাহলে আপনার জন্য হয়তো তা উপযোগী বা কার্যকর না–ও হতে পারে। আবার সুদের হার কম, কিন্তু আপনার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টাকা ঋণ দেবে, তা–ও আপনার জন্য উপযোগী নয়। সুদের হার কম, আবার আপনার প্রয়োজন অনুসারে টাকা ঋণ দেবে, এমন ব্যাংকই বেছে নিতে হবে। সুদের হার সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক হয়।
এ ছাড়া প্রসেসিং চার্জ হিসেবে পুরো ঋণের নির্দিষ্ট অংশ দিতে হয়। সাধারণত দশমিক ৫০ শতাংশ হারে প্রসেসিং চার্জ কেটে রাখা হয়।
দলিল-দস্তাবেজ যত কম, তত ভালো
যত কম কাগজপত্র চাওয়া হয়, গ্রাহকদের তত বেশি সুবিধা। কাগজপত্র জোগাড় করতে ঝামেলা কম। চাকরিজীবীরা সাধারণত বেতনের বিবরণী দিয়েই আবেদন করেন। সঙ্গে ঋণের জামিনদার বা গ্যারান্টর লাগে। লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও দিতে হয়। এর বেশি কাগজপত্রও চাইতে পারে কোনো কোনো ব্যাংক।
যে কারণে ঋণ নেন
নানা জরুরি প্রয়োজনেই ভোক্তাঋণ নেওয়া হয়। অসুখ–বিসুখের খরচ মেটানো জন্য অনেকে এই ঋণ নেন। কেউ–বা সংসারের ফ্রিজ-টিভি, এসিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য এই ঋণ নেন। আবার অনেকে ছোটখাটো ব্যবসায় খাটানোর জন্যও ঋণ নেন। অনেকে সন্তানদের পড়াশোনার বাড়তি খরচ জোগাতেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন। অনেকে আবার দেশ-বিদেশে ঘোরাঘুরির জন্যও ঋণ নেন।
বিভিন্ন ব্যাংকের ভোক্তাঋণের অফারগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ভোক্তাঋণ পাওয়া যায়।
ব্যাংক যা দেখে
কেউ ব্যক্তিগত ঋণের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিষয় যাচাই–বাছাই করে থাকে। যেমন বয়স, ঠিকানা, আর্থিক সামর্থ্য, গ্যারান্টর ইত্যাদি। সাধারণত ২৫ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত বয়সী গ্রাহকেরা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ব্যাংক ভেদে এই বয়সসীমা কম বেশি হতে পারে।
চাকরিজীবী হলে ন্যূনতম বেতনের সীমা নির্ধারণ করে দেয় ব্যাংক। যেমন কোনো ব্যাংক বেতন ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা হলেই ব্যক্তিগত ঋণ দেয়। চাকরির স্থায়িত্বও দেখা হয়; এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবসার লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়।
যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয়, এর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, গ্রাহক ও গ্যারান্টরের ছবি, ভিজিটিং কার্ড, ছয় মাস বা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, বিশেষত কর নথির তথ্য ইত্যাদি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক গজপত র ন র জন য ভ ক ত ঋণ পর শ ধ ক পর শ ধ র স ধ রণত গ র হক ত ঋণ ন ঋণ ন ন আপন র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের একটি ধারা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধারাটিতে অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা উল্লেখ রয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।
২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনের ১৮ ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ধারাটি বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ করা না হলে আদালত ওই অপরাধ আমলে গ্রহণ করবে না।
ওই ধারার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান গত মাসের শেষ দিকে রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী।
রুলে অপরাধের অভিযোগ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা আরোপ–সংক্রান্ত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৮ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুলের বিষয়টি জানিয়ে আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এসেছে। আইনের ১৮ ধারায় সময়সীমা উল্লেখ করে দুই বছরের মধ্যে মামলা না করতে পারলে কোনো আদালত অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারবে না বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিচার করতে পারবে না। যে মেয়েটির ১১–১২ বছরে বিয়ে হয় তারপক্ষে দুই বছরের মধ্যে মামলা করা সব সময় সম্ভব না–ও হতে পারে। তখন সে নিজেই শিশু। দুই বছর পর আদালত বিচার করতে পারবে না এবং সময়সীমা আইনে বেঁধে দেওয়া সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী—এমন সব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।