বায়ুদূষণের প্রভাব রোধে এয়ার পিউরিফায়ার বা বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র আমদানির ওপর শুল্ক কমায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় গত জানুয়ারি মাসে। এর পর থেকে এয়ার পিউরিফায়ার বিক্রি অনেকটা বেড়ে গেছে।

রাজধানীর গুলশান লিংক রোডে এয়ার পিউরিফায়ার বিক্রির প্রতিষ্ঠান স্মার্ট এয়ার বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠান সূত্র জানাচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার তাদের পণ্য বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তত এক শ পিস এয়ার পিউরিফায়ার বিক্রি হয়েছে।

এমন কোনো কাজ করা হয়নি, যাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আসে। বায়ুদূষণ এমন বিষয়, তা এক দিনে যাবে না সত্য। এর জন্য সময়ভিত্তিক এবং এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। অধ্যাপক আব্দুস সালাম, দূষণবিশেষজ্ঞ

দূষণ রোধের এ যন্ত্রটির দাম অনেক। কেবল ছোট গাড়িতে ব্যবহারের জন্য এমন একটি যন্ত্রের দাম ৫ হাজার টাকা। ৪০০ বর্গফুটের কোনো স্থানে ব্যবহারের যন্ত্রের দাম সাড়ে ১৭ হাজার এবং ৯০০ বর্গফুট স্থানে ব্যবহারের যন্ত্র ৫০ হাজার টাকা। এয়ার পিউরিফায়ারের ক্রেতা সমাজের উচ্চ আয়ের মানুষ, বিক্রেতারা এমনটাই জানালেন।

নগরীতে বায়ুদূষণ বাড়ছে রেকর্ড হারে। গত বছরের (২০২৪) ডিসেম্বরে ঢাকা নগরীর দূষণ ছিল আগের ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানুয়ারিতেও তাই। আর সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারির দূষণ আগের আট বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। বায়ুদূষণের এমন পরিস্থিতির তথ্য দিয়েছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের রোগশোক। ঢাকার ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের তথ্যই প্রমাণ করছে দূষণে কতটা নাকাল নগরবাসী। ৩১ দিনের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২৮ দিনের ফেব্রুয়ারিতে সেখানে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি।

দূষণের রেকর্ড ৪ মাসে

সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ুদূষণ অনেক বেড়ে যায়। এবারের শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে টানা চার মাস রাজধানীর বায়ুদূষণ আগের আট বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।

বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫০ থাকলে ‘ভালো’ বলা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে ‘গ্রহণযোগ্য’। ১০১ থেকে ১৫০ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর’, ১৫১ থেকে ২০০ ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০০-এর বেশি হলে তা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’।

ক্যাপস ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া এয়ার নাওয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ঢাকার বায়ুমান পর্যবেক্ষণ করছে ২০১৭ সাল থেকে। সেই গবেষণা অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৬২। এটি ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর মান ছিল ২৫৮। ২০২৩–এর ফেব্রুয়ারিতে এর মান ছিল ২২৫।

শুধু এবারের ফেব্রুয়ারি নয়। গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি—প্রতিটি মাস ছিল দূষণের দিক থেকে আগের আট থেকে ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি টানা চার মাসে আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দূষণে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এমনটা আর কোনো বছরে হয়নি। দূষণ পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা বোঝা যায়। কিন্তু এই দূষণ রোধে দুই সিটিসহ সরকারের দপ্তরগুলোর কার্যকর তৎপরতা দেখছি না।’

ঢাকার দুই সিটি কী করছে

ঢাকার দূষণে যানবাহন ও কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, ইটভাটা, নির্মাণকাজের ধুলাবালু ইত্যাদি উপাদানই মুখ্য। পরিবেশ অধিদপ্তর দূষণের পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু কলকারখানা, নির্মাণকাজসহ নানা বিষয় দুই সিটি করপোরেশনের এখতিয়ারভুক্ত। সিটিগুলো পানি ছিটানো, নির্মাণকাজে মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনার মধ্যে তাদের কাজ সীমাবদ্ধ রাখে। তাতে যে কাজের কাজ তেমন হয় না, তা বাড়তে থাকা দূষণ প্রমাণ করে।

তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব মানতে নারাজ। ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

জিল্লুর রহমানের কাছে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘পানি ছিটানো হচ্ছে নিয়ম করে। কিন্তু সকালে পানি ছিটালে পরেই ধুলাময় হয়ে যায়। তারপরও বিষয়টি নিয়ে কাজ হচ্ছে।’

ঢাকা উত্তরের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, আগে দিনে একবার পানি ছিটানো হতো, এখন তিনবার হয়। তারপরও বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে ইটের ভাটা আর গাজীপুরের কলকারখানার ধোঁয়াকে দোষেন এই প্রশাসক।

প্রশ্ন করা হয়েছিল দূষণের এই দুই উৎস আগেও তো ছিল, তবে এখন তা এত বেড়ে গেল কেন? তাঁর উত্তর, ‘আমরা চেষ্টা করছি মান ভালো করতে। এর জন্য উন্মুক্ত স্থানে ঘাস লাগিয়ে ধুলা ওড়া বন্ধ করার কাজ করব।’

দূষণবিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘এমন কোনো কাজ করা হয়নি যাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আসে। বায়ুদূষণ এমন বিষয়, তা এক দিনে যাবে না সত্য। এর জন্য সময়ভিত্তিক এবং এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। তার তো নামগন্ধ নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য র কর ড বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ