মার্কিন সহায়তা বন্ধে সংকটে ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিক
Published: 4th, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার পর ভারতের তিনটি শহরে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রথম মেডিকেল ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ট্রান্সজেন্ডার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় মিত্র (বন্ধু) নামের ক্লিনিকটি ২০২১ সালে ভারতের দক্ষিণের শহর হায়দরাবাদে যাত্রা শুরু করে। হাজার হাজার ট্রান্সজেন্ডারকে এইচআইভি চিকিৎসা, সহায়তা ও পরামর্শসেবা দিয়ে আসছিল এই ক্লিনিক।
একই বছর পশ্চিম ভারতের থান ও পুনে শহরে মিত্র ক্লিনিকের দুটি শাখা যাত্রা শুরু করে। মার্কিন সহায়তা সংকটের কারণে এ দুটির কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য সব বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান, তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে বিদেশি ব্যয় ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করা হোক।
১৯৬০-এর দশক থেকে বিদেশে মানবিক সহায়তার তদারকি করছে মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডি। ট্রাম্প সংস্থাটির বিরুদ্ধে কঠোর দমন নীতি গ্রহণ করেছেন।
ইউএসএআইডির বিভিন্ন তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী কয়েক ডজন উন্নয়ন কর্মসূচিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
ভারতে মিত্র ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের মানুষের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবার ওপর প্রভাব পড়েছে।
ক্লিনিকের ইনচার্জ ট্রান্সজেন্ডার রাছানা মুদ্রাবয়িনা বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, ‘আমরা সেবা দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে আড়াই লাখ রুপি টাকা পেতাম।’
ক্লিনিক বন্ধের খবরে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ে বড়সড় ধাক্কা লেগেছে। ভারতের প্রায় ২০ লাখ ট্রান্সজেন্ডার মানুষ রয়েছেন বলে অনুমান করা হয়। যদিও এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে দাবি করছেন সমাজকর্মীরা।
ক্লিনিকের কর্মীরা বলছেন, তাঁরা বিকল্প উৎস থেকে তহবিল পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সরকার তাঁদের সহায়তায় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ য ত
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।