দেশের নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও সংগঠনের মোর্চা ‘সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদ’-এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১০ম দিনের মতো শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. সেলিম মিয়ার সভাপতিত্বে ১০ম দিনের লাগাতার অবস্থান কার্যক্রম শুরু হয়।

‘সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদ’-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভোলা সদর উপজেলার নন–এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বালিয়ারহাট বন্ধুজন নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.

কামাল হোসেন নন–এমপিও থাকাবস্থায় চলতি অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নন–এমপিও থাকার কারণে চরম আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর সময় স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে যান। আজ তাঁর মৃত্যু স্মরণে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচিস্থলে গায়েবানা জানাজা ও শোক পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোক পদযাত্রা কর্মসূচিতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সেলিম মিয়া নন–এমপিও শিক্ষক কামাল হোসেন নন–এমপিও অবস্থায় অভুক্ত থেকে চরমভাবে আর্থিক অভাব–অনটনের মধ্যে সুচিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করায় রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

আরও পড়ুনএখন ঢাকার সাত কলেজ চলবে ইউজিসির অধীন সমন্বিত কাঠামোর আওতায়৫ ঘণ্টা আগে

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাসদের সহসম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘নন–এমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও ভুক্তির দাবিতে আন্দোলন ১০ম দিনে পদার্পন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমি মর্মাহত ও গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। দ্রুত এই মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে তাঁদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, আছে দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা০৩ মার্চ ২০২৫

অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন নন-এমপিও সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম, মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. নাজমুস সাহাদাত আজাদী, সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. মনিমুল হক, যুগ্ম সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. ইমরান বিন সোলায়মান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আবদুস সালাম, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ বাকী বিল্লাহ, সমন্বয়ক প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর মো. এরশাদুল হক, সমন্বয়ক সুপার মো. ফরহাদ হোসেন বাবুল, সমন্বয়ক প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান ও সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমানসহ আরও অনেকে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন ক সমন ব

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ