মসজিদের বারান্দায় প্লেটে প্লেটে সাজানো বাহারি সব ইফতারি। ইফতারের আধা ঘণ্টা আগে থেকেই মুসল্লিরা সারিবদ্ধভাবে বসতে শুরু করেন। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মুসল্লিদের হাতে হাতে ইফতারির প্লেট তুলে দেন মসজিদের খাদেম ও স্বেচ্ছাসেবকেরা। চার থেকে পাঁচজনের জন্য একটি করে প্লেট। কেউ কাউকে চেনেন না। অথচ পাশাপাশি বসে ইফতার করছেন। সবার একটাই পরিচয়, রোজাদার মুসল্লি।

বগুড়া শহরের বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে এমন সম্প্রীতির পরিবেশে গতকাল মঙ্গলবার ইফতার করতে দেখা গেল। ধনী-গরিব, শ্রেণি ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে পাঁচ শতাধিক মানুষ ইফতার করেন। এক প্লেটের চারদিকে চার থেকে পাঁচজন মুসল্লি বসে ভাগাভাগি করে ইফতার সারেন।

দেড় যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে এমনভাবে ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে জানিয়ে মসজিদের খাদেম মো.

হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ বছর ধরে মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় একসঙ্গে ইফতারের এমন উদ্যোগ চলে আসছে। এতে শুধু রোজাদারদের সেবা হচ্ছে না; ধনী-গরিব একসঙ্গে ইফতারের মাধ্যমে রোজার প্রকৃত শিক্ষা নিজেকে আত্মশুদ্ধি করা ছাড়াও সাম্য প্রতিষ্ঠা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধের অনন্য উদাহরণ তৈরি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জোহরের নামাজের পর থেকে মসজিদে স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। স্বেচ্ছাসেবকেরা প্লেটে ইফতারসামগ্রী সাজাতে শুরু করেন আসরের নামাজের পর। প্লেটে খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজু, মুড়ি, বেগুনি, জিলাপি, বিরিয়ানি বা খিচুড়ি ও শরবত থাকে। ইফতারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত রোজাদারদের হাতে প্লেট পৌঁছে দেওয়া হয়। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইফতার।

সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল গণি। বয়স ৭৫ ছুঁই ছুঁই। মঙ্গলবার ইফতারের আধা ঘণ্টা আগে মসজিদে ইফতার করতে আসেন। মসজিদে মাগরিবের নামাজের আজান হতেই তাঁর প্লেটের সঙ্গে বসলেন রিকশাচালক জামাল উদ্দিন (৬০), দিনমজুর খাদেম আলী (৬৫) ও নির্মাণশ্রমিক বাকের উদ্দিন (৪০)। তাঁরা কেউ কাউকে চেনেন না। অথচ একসঙ্গে বসে একই প্লেটে ইফতার সারলেন।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে নামাজ আদায় শুরু হয়। ওই বছরের রমজান মাস থেকেই মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে একসঙ্গে ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই হিসাবে ১৮ বছর ধরে মসজিদে ইফতারের আয়োজন চলছে। মসজিদের মুসল্লি ছাড়াও শহরের বিত্তবানদের সহায়তায় এ আয়োজন করা হয়। রোজার এক সপ্তাহ আগে প্রস্তুতি শুরু হয়। মাসব্যাপী ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষের মধ্যে ইফতার পরিবেশন করা হয়। প্রতিদিন স্বেচ্ছাসেবক ও খাদেমরা ইফতার পরিবেশনের কাজ করেন।

মসজিদের খাদেম হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন সোয়া মণ সুগন্ধি চাল এবং ১০ থেকে ১৫ কেজি গরুর মাংসের বিরিয়ানি রান্না করা হয়। এ জন্য বাবুর্চি নিযুক্ত করা আছে। বিরিয়ানির সঙ্গে ছোলা, বুন্দিয়া, জিলাপি, খেজুর, মুড়ি, তরমুজ ও শরবত দেওয়া হয়। রমজান শুরুর আগেই স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মুসল্লিরা ইফতার তহবিলে সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দেন। এবার এখন পর্যন্ত ইফতার তহবিলে সাড়ে ২৬ লাখ টাকা জমা হয়েছে। তিনি বলেন, এক মাসের মধ্যে অন্তত ১০ দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে এক হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। বাকি ২০ দিন ইফতারের আয়োজন করে মসজিদ কমিটি। মসজিদের মুসল্লি ছাড়াও মুসাফির, ভিক্ষুক, শ্রমজীবীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।

ইফতারে আসা অটোরিকশাচালক সেলিম হোসেন বলেন, উপার্জনের টাকায় চার সদস্যের সংসার চলে। ১০০ টাকার নিচে ইফতার পাওয়া যায় না। নিজের টাকায় ইফতারি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য না থাকায় এখানে ইফতারে এসেছেন। এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। এক প্লেটে পাঁচজন বসে ইফতার করতে অন্য রকম ভালো লাগে। সবাই পাশাপাশি বসে ইফতার করছেন।

ইফতার শেষে মসজিদের ফটকে কথা হয় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী এলাকার চান মিয়ার সঙ্গে। পেশায় ভিক্ষুক চান মিয়া চার বছর ধরে রেলবস্তিতে থাকেন। বলেন, ‘রোজা ছিলাম। একই প্লেটে বিরিয়ানিসহ ইফতার করেছি। পেট ভরেছে। রাতে আকবরিয়া হোটেলে বিনা মূল্যে খাবার বিতরণ হবে। সেই খাবার সংগ্রহ করে সাহ্‌রি খাব।’

সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী রিফাত আহম্মেদ বলেন, ‘মেসে থাকি। প্রতিদিন এই মসজিদে ইফতার করতে আসি। এখানে এক প্লেটে চার-পাঁচজন ভাগাভাগি করে ইফতার করার অনুভূতি অন্য রকম। এটা শুধু একসঙ্গে ইফতার নয়; পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইফত র করত ইফত র ক মসজ দ র র ইফত র একসঙ গ

এছাড়াও পড়ুন:

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাগদানের গুঞ্জনের মাঝে হুমার রহস্যময় পোস্ট
  • যে ১০ কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বেশি ঝগড়া হয়
  • স্মার্ট সিটি হবে চট্টগ্রাম, একসঙ্গে কাজ করবে গ্রামীণফোন-চসিক
  • অনলাইন জীবন আমাদের আসল সম্পর্কগুলোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে
  • তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন
  • প্রেমিকের সঙ্গে বাগদান সারলেন হুমা কুরেশি!
  • একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল