কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ (রেশন) আগামী এপ্রিল মাস থেকে সাড়ে ১২ ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘ। বুধবার জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) লিখিতভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারের বরাদ্দ অর্ধেকের বেশি কমানোর পরিকল্পনার কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে রাতে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো.

মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ডব্লিউএফপি গত মঙ্গলবার মৌখিকভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য মাথাপিছু রেশন কমানোর কথা জানিয়েছিল। রেশন কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ (বুধবার) সংস্থাটি চিঠি দিয়েছে। ফলে আগামী ১ এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গারা মাথাপিছু সাড়ে ১২ ডলারের পরিবর্তে ৬ ডলার পাবে রেশন হিসেবে।

তহবিলের ঘাটতির কারণে ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের জন্য রেশন কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, চিঠিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে সাড়ে ১২ ডলার বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করছে; কিন্তু তারা দাতা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে ঢাকায় ডব্লিউএফপির এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বুধবার জানায়, সামনের সপ্তাহগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহ করলে রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনে কাটছাঁটের বিষয়টি এড়ানো যেতে পারে। ডব্লিউএফপি এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য দাতাদের কাছে ৮১ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা চেয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য মাথাপিছু ছয় ডলারের রেশন বরাদ্দের ফলে ন্যূনতম বেঁচে থাকার স্তর নিচে নেমে যাবে এবং মৌলিক খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল বাতিলের নেতিবাচক প্রভাব এসে পড়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর। কারণ, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে ডব্লিউএফপির অর্থসহায়তার প্রায় ৮০ শতাংশের জোগান আসত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। তবে গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধের ঘোষণা দেন। এতে ডব্লিউএফপি তহবিল–সংকটে পড়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র হ ঙ গ দ র জন য কম ন র বর দ দ তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ