রেফারিকে ঢুস মেরে নয় মাস নিষিদ্ধ লিওঁ কোচ
Published: 6th, March 2025 GMT
এ বছরের জানুয়ারিতে পাওলো ফনসেকাকে প্রধান কোচ করে এনেছে অলিম্পিক লিওঁ। ফরাসি ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চুক্তি আছে তাঁর।
কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই লিওঁকে নতুন কোচের সন্ধানে নামতে হচ্ছে। রেফারির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যে নভেম্বর পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়েছেন ফনসেকা! প্রায় ৯ মাস প্রধান কোচ ছাড়া লিওঁ চলবে কী করে?
নিজেদের মাঠ গ্রুপামা স্টেডিয়ামে গত রোববার ফরাসি লিগ আঁর ম্যাচে ব্রেস্তকে ২-১ গোলে হারিয়েছে লিওঁ। সে দিন ম্যাচের যোগ করা সময়ে ব্রেস্তের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি বেনোয়া মিয়ে।
এ নিয়ে রেফারির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ফনসেকা। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তাঁকে ঢুস মেরে বসেন ৫২ বছর বয়সী পর্তুগিজ কোচ। ফলে লাল কার্ড দেখে তাঁকে মাঠ ছাড়তে হয়। ভিএআর অবশ্য লিওঁর পক্ষেই রায় দেয়। রেফারি মিয়ের সিদ্ধান্ত ভিএআরে বাতিল করা হলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ফ্রান্সের অন্যতম সফল ক্লাবটি।
তবে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বদলে গেলেও ফনসেকার অপরাধ তো অপরাধই রয়ে গেছে। তাই তখনই ধারণা করা গিয়েছিল, কোচ ফনসেকার ওপর আরও বড় শাস্তির খড়্গ নেমে আসতে পারে। যদিও রেফারির সঙ্গে এমন আচরণের পর দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু শাস্তি থেকে বাঁচতে পারলেন না।
লিগ আঁর শৃঙ্খলা কমিশন জানিয়েছে, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দলের ডাগআউটে দাঁড়াতে পারবেন না ফনসেকা। এ সময় পর্যন্ত রেফারিদের ড্রেসিংরুমেও ঢুকতে পারবে না। এমনকি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নিজ দলের ড্রেসিংরুমেও তাঁর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ফনসেকাকে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিতে গিয়ে লিগ আঁর শৃঙ্খলা কমিশনের সভাপতি সেবাস্তিয়েন দুনেই বলেছেন, ‘তিনি (ফনসেকা) রেফারির দিকে তেড়ে গিয়ে চিৎকার করে ভীতি প্রদর্শন করেছেন এবং হুমকিমূলক মনোভাব প্রদর্শন করেছেন।’
সম্প্রতি অসেরের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হারের পর রেফারিকে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে ১৫ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন অলিম্পিক মার্শেইয়ের সভাপতি পাবলো লোঙ্গোরিয়া। সেই প্রসঙ্গ টেনে দুনেই আরও বলেছেন, ‘কমিশন দুঃখ প্রকাশ করছে যে আবারও লিগ আঁর একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব এমন আচরণ প্রদর্শন করেছেন। জনাব ফনসেকা লিগ আঁর একটি দলের কোচ। সর্বোপরি তিনি একজন শিক্ষক এবং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ ধরনের মনোভাব তাঁর সঙ্গে একেবারেই বেমানান।’
ফনসেকার কোচিংয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলেছে অলিম্পিক লিওঁ। জিতেছে তিনটিতে, হেরেছে দুটিতে। ২৪ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে এ মুহূর্তে লিগ আঁর ৬ নম্বরে আছে লিওঁ। আজ রাতে ইউরোপা লিগের ম্যাচে দলটি রোমানিয়ার ক্লাব স্টুয়া বুখারেস্টের বিপক্ষে খেলবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট
এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।
আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:
হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।
মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।
প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।
কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?
Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?
হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।
বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?
জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।
তাহলে বাবা-মা কী করবেন?
শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।
একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।
তারা//